ভ্যাট বৃদ্ধি ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে কয়েকটা পয়েন্ট

১২১ পঠিত ... ১৭:০৫, জানুয়ারি ১৬, ২০২৫

21

লেখা: তাসনিম রিফাত

১#

নাওমি ক্লেইনের ‘The Shock Doctrine: The Rise of Disaster Capitalism’- বইটার কথা হয়তো কেউ কেউ শুনছেন। একদম কম কথায়, এই বইয়ের মূল আর্গুমেন্টটা হইল, যেকোনো ডিজাস্টার এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় সরকার ও তার ইন্সটিটিউশনগুলার পক্ষে অজনপ্রিয় নিওলিবারেল পলিসিগুলা বাস্তবায়ন করা সহজ হয়। যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা কোনো রাজনৈতিক পরিবর্তনের সময়ও এটা হইতে পারে। উনি চিলি আর ইরাকসহ বিভিন্ন দেশের কেস ঘেটে ঘেটে দেখাইছেন কীভাবে সরকার পরিবর্তন বা যুদ্ধ পরবর্তী অবস্থায় সংস্কারের নামে ভ্যাট বাড়ানো বা প্রাইভেটাইজেশন বাড়ানোর মাধ্যমে নিওলিবারেল পলিসি বাস্তবায়ন করা হইছে। নিওলিবারেল ক্যাপিটালিজমের জন্য দুর্যোগ মূলত একটা ভালো সুযোগ।

২#

ডেভিড হার্ভের নিওলিবারেলিজম নিয়ে যে কাজটা, সেখানে ইরাক নিয়ে একটা উদাহরণ আছে। ২০০৩ সালে ইরাক ইনভেড করে আমেরিকা ও তার মিত্র দেশগুলা। একই বছর সেখানে একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। এই সরকার এসেই কয়েকটা বড় পদক্ষেপ নেয়—পাব্লিক বিভিন্ন এন্টারপ্রাইজকে বেসরকারী মালিকানায় ছেড়ে দেওয়া, যেকোনো বিদেশির কোম্পানির মুনাফা পুরোপুরি নিজ দেশে নিয়ে যাওয়ার সুবিধা, ইরাকের ব্যাংকগুলোকে বিদেশি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেওয়া ইত্যাদি। একইসাথে আরোপ করা হয় ফ্ল্যাট ট্যাক্স সিস্টেম, যেটা সে সময় ইরাকিদের জন্য ছিল দমনমূলক। এই সবকিছুই করা হইছে সংস্কারের নামে, এমন একটা সময়, যখন সরকার গঠিত হইছিল সবকিছু ‘ঠিক’ করে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে। ইরাকিদের পরবর্তীতে এসব রিফর্মের ফলাফল কেমনে ভোগ করতে হইছে, সেটা হয়তো আপনারা জানেন।

৩#

বাংলাদেশের কেসটা একটু ডিফারেন্ট। বাংলাদেশ ছিলই একটা ডিজাস্টারের মধ্যে। সেখানে হাজার মানুষ প্রাণ দিয়ে, আহত হয়ে একটা ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটাইছে। নতুন সরকার গঠন হইছে সংস্কার করার উদ্দেশ্যে। যেখানে তার জনগণের মধ্যে স্বস্তি আনার জন্য জিনিসপত্রের দাম কমানোর কথা, সেখানে সে আরও ভ্যাট বাড়াইতেছে, টিসিবির পণ্যের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতেছে। আপাতদৃষ্টিতে এটাকে একটা আইএমএফের ছোটো শক থেরাপিই মনে হইতেছে। সে এখানে আরও সুযোগ নেবে এই অন্তবর্তীকালীন সময়টার। সরকারের সামনে অর্থনীতি ঠিক করার চাপ আছে, এবং আছে আইএমএফের প্রেসক্রিপশন। সে হয়তো আগের ডিজাস্টারের কন্টিনিউয়েশনই হইতে পারে কিছুক্ষেত্রে।

এই সরকার যে কোনো অর্থেই জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিট ধারণ করে না, এই ব্যপারে কোনো সন্দেহ নাই। তার মনে হয় না, অর্থনীতি ও অন্যান্য বিষয়ের ‘বাংলাদেশি সমাধান’ কী হবে সেটা নিয়ে কোনো ভিশন আছে। এবং যারা অভ্যুত্থানের ‘নেতৃত্বদানকারী’ শক্তি হিসেবে দাবি করতেছে, তারা অর্থনীতি ও অন্যান্য পলিসি চেয়ারে বসা ভদ্রলোকদের উপর ছেড়ে দিছে। এই ব্যাপারে তাদের আওয়াজ এত মৃদু যে, এটার কোনো ইমপ্যাক্ট নাই। তারা বেশি ব্যস্ত আছে কালচার ও ইতিহাস মেরামতের দিকে। ফলে জনগণের স্বপ্ন আসলে ভঙ্গ হওয়ার বিপদজনক মুহূর্তের সামনেই আমরা এখন দাঁড়ায়ে আছি।

১২১ পঠিত ... ১৭:০৫, জানুয়ারি ১৬, ২০২৫

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top