পিটার হাঁস যেন ঢাকার ভাইসরয়; উইনস্টোন চার্চিল তাকে পাঠিয়েছে “থাগস অফ বেঙ্গল”-দের শায়েস্তা করতে। চার্চিল একটা চুরুট মুখে পিটারকে বলে, লক্ষ্য করেছো; আমাদের লর্ড ক্লাইভেরা যত টাকা ঢাকা থেকে লুট করে লন্ডনে পাঠিয়েছিলো; এই নেটিভ থাগস গুলো পলিটিক্যাল লর্ড হয়ে তার চেয়ে বেশি টাকা লুট করে লন্ডনে পাঠিয়েছে। নেংটি ইঁদুরের বাচ্চাগুলো লন্ডনের সেকেন্ড হোমে থেকে হোয়াইট টাইগার হয়ে ঘুরছে। আমরা রেললাইন বানালে যাদের প্রপিতামহেরা সবুজ লুঙ্গিতে মুখ ঢেকে প্রাতঃক্রিয়া সারতো; আজ তাদের লুন্ঠক পুত্রের কেরামতিতে নাতি-নাতনিগুলো লন্ডনে সোনার কমোডে সূর্য ডোবাচ্ছে। তো এদেরকে আবার ইঁদুর বানিয়ে দেয়া যাক। নইলে এরা আমাদের সভ্য সমাজে বার্তা দেবে, পরিশ্রম নয়, লুন্ঠনই সৌভাগ্যের প্রসূতি।
পিটার হাঁস উত্তর দেয়, এরা কিন্তু গালাগালিতে ওস্তাদ। এদের যে স্ল্যাং আর এবিউজের ক্ষমতা; তা রীতিমত প্রত্ন গবেষণার দাবি রাখে। সুষ্ঠু ভোট চাইলে; দুর্নীতিমুক্ত সরকার চাইলে; এরা পরনের কাপড় অনেকটা তুলে এগিয়ে এসে গালাগাল করে। তখন ঐসব খাজুরাহের দিকে তাকানো যায় না।
চার্চিল হাসে, এই ডার্টি র্যাটসগুলোর ওটাই যুদ্ধ কৌশল। এইভাবে ওরা নিজেদের সমাজের সৎ ও শিক্ষিত মানুষদের চুপ করিয়ে রাখে। সহজ সরল কৃষক-শ্রমিকেরা অর্থনীতির চাকা ঘোরায়; পরিশ্রমী প্রবাসী শ্রমিকেরা এমেরিকা-ইউরোপ-মধ্যপ্রাচ্যে গায়ে খেটে রেমিটেন্স পাঠায়; আর এই থাগসগুলো সেইসব টাকা লুট করে লর্ড সেজে ঘোরে। লুটের প্রতিবাদ করলেই লেলিয়ে দেয়, রুমালের ফাঁসে মানুষ হত্যার কারিগর সেই ঠগীর নাতি আর কলতলার গালাগালির সর্দারনির পুতিদের গ্যাং।
আজ দাওয়াত করেছি কজন চেতনা হাঁস আর আর জাতীয়তাবাদী হাঁস। দেখি কী বলে ওরা! আই উইল কিপ ইউ পোস্টেড উইনস্টোন।
পিটার হাঁসের দূতালয়ের পুকুর আজ সেজেছে নতুন সাজে। সেখানে বেতোফেনের নাইনথ সিম্ফোনি সোয়ানলেক বাজছে। সেজে গুজে রাত বিরেতে পিটারহাঁসের পুকুরে আসে চেতনা হাঁসেরা; প্যাক প্যাক করে তারা সম্ভাষণ জানায়। হঠাত বাগানের মধ্যে বেতের চেয়ারে বসে আহমদ ছফাকে চুক চুক করে চা খেতে দেখে এক চেতনা হাঁস উত্তেজিত হয়ে বলে, ধর ধর ছফা –জাদারে ধর!
পিটার হাঁস প্যাক প্যাক করে বলে, এটা তোমাদের মজাপুকুর নয়; এটা সভ্যতার পুকুর। খবরদার জ্ঞানী মানুষকে গালি দিয়ে নিজেদের অশিক্ষা প্রকাশ কোরোনা।
জাতীয়তাবাদীরা হাঁসেরা আসে পরিপাটি হয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ধর্ণা দিতে। হঠাতই ছফার সামনের চেয়ারে বি চৌধুরীকে বসে “এক মুঠো রজনিগন্ধ্যা” গাইতে দেখে উত্তেজিত হয় জাতীয়তাবাদী হাঁস, অই রেললাইন কৈরে; ডাক্তাররে দৌড়ানি দে !
পিটার আঁস কষে ধমক দেয়, এটা কালুর বাড়ির কলতলা না। মুখ সামলে কথা বলো।
এক চেতনা হাঁস নিজেদের মধ্যে কানাকানি করে, বাঁচন আর নাইরে কালু; বাঁচন আর নাই!
পিটার হাঁস দুই গোত্রের হাঁসের দিকে তাকিয়ে বলে, আমরা হিসাব করে দেখেছি; আপনাদের দুই দলের বিপুল সংখ্যক লোকের ছেলে-মেয়ে এমেরিকায় পড়ে। আপনাদের মধ্যে এমন লোক পাওয়া সত্যিই দুষ্কর; যার সেকেন্ড হোম নেই। এফ বি আই-এর জালে আপনারা জড়িয়ে গেছেন। আমরা আপনাদের দেশের অসহায় নাগরিক সমাজ না; যে ভয় পেয়ে যাবো আপনাদের পাতকূয়ার খিস্তিতে; লালবাতি এলাকার গালিতে। আমরা কাউকে গালি দিই না। আমরা নীরব নল রিভলভারে লাগিয়ে চা ঢেলে দিই! আমৃকারে পুছিনা যে বলেন, এমেরিকা থেকে রেমিটেন্স না এলে আর আপনাদের তৈরি পোষাক না নিয়ে ভারত-পাকিস্তান থেকে নিলেই কিন্তু সব তেল শুকিয়ে যাবে!
চেতনা হাঁসেরা পুকুরের পানি খায় গলগল করে। জাতীয়তাবাদী হাঁসেদেরও মুখ শুকিয়ে যায়।
পিটার হাঁস বলে, আলোচনার সুবিধার জন্য আপনাদের হুতু হাঁস ও তুতসি হাঁস এই দুই নামে ডাকবো এখন থেকে। নিজেদের মধ্যে একটু আলাপ আলোচনা করুন। দেখুন সভ্যতার আলো খুঁজে পান কীনা! আমি একটু আসছি।
পিটার হাঁসের স্টাডি রুমে অপেক্ষা করছে, মুরগী ঐক্য পরিষদের নেতারা। পিটার হাঁসকে দেখে তারা গুড ইভনিং ককরকক করে ওঠে। পিটার বলে, বেশি শব্দ করবেন না; পুকুরে হুতু ও তুতসি হাঁসেরা আছে। শুনুন ইউক্রেনের লোকেদের প্রতিদিন অসংখ্য ডিম লাগে পুতিনের মূর্তি বসিয়ে তাতে ছুঁড়ে মারার জন্য। আপনারা এখন থেকে সমস্ত ডিম আমাদের দিয়ে যাবেন।
মুরগী ঐক্য পরিষদের নেত্রী বলে, কিন্তু পুতিন রুপপুরে অসংখ্য ডিম দিয়েছে বলে কিছু প্রতিদান চাইছে। বলছে, জেলেনস্কির মূর্তিতে মারার জন্য উনার কিছু ডিম চাই।
পিটার হাঁস প্যাক প্যাক করে বলে, তাহলে আপাতত আর ডিমই দেয়ার দরকার নাই। মোরগ-মুরগীদের রোমান্স বন্ধ রাখুন।
মুরগী ঐক্য পরিষদের নেতারা বেরিয়ে যেতেই মশা ঐক্য জোটের নেতারা প্রবেশ করে। মশাদের নেতা অভিযোগ করে, এক মশার শত্রু মেয়র “মশার কামড় ক্ষতিকর” নামে বই ছেপেছে। বড্ড বিপদ আমাদের।
পিটার হাঁস মুচকি হেসে বলে, ওটা এমেরিকান একটা বইয়ের অনুবাদ। এমেরিকায় তো ডেঙ্গি-চিকনগুনিয়া কিছুই হয়না। ফলে এই বই আপনাদের জন্য কোন ব্যাপার না। যান এখন, দুনিয়াটা মস্ত বড় খাও দাও ফূর্তি করো!
এমেরিকা থেকে ফোন আসে। সি আই এ-র এনভায়রনমেন্ট প্রজেক্টের চিফ ডিকসন ফোন করেছে, হ্যালো পিটার আমরা তো কৃত্রিম উপায়ে ভূমিকম্প তৈরির সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। তুমি বললেই, আমরা ঢাকাটাকে ঝাঁকিয়ে দিতে পারি।
–শোন ডিক, হুতু ও তুতসিদের বেশিরভাগ নেতানেত্রীই অন্তর্জলী যাত্রার বুড়ো বুড়ি। ভালো করে ঝাঁকাও। ভূমিকম্পের ঝাঁকুনিতে যদি চেয়ার থেকে ফেভিকল খসিয়ে উঠে দৌড় দেয়; তাহলেই কেল্লা ফতে। এমনিতে কিন্তু অপারেশান থিয়েটার ছাড়া আর কোথাও এদের পেছন থেকে চেয়ার ছোটানোর ব্যবস্থা নেই। সুতরাং ঝাঁকিয়ে দাও, ডেড পলিটিশিয়ানস সোসাইটিকে।
কথা শেষ করে পুকুরে ফিরতেই পিটার হাঁস দেখে, হুতু হাঁস ও তুতসি হাঁসেরা নিজেদের মধ্যে মারামারি-চুলোচুলি করে আহত হয়ে লনের সবুজ ঘাসে নেতিয়ে পড়ে আছে।
আহমদ ছফা আর ডাক্তার চৌধুরী তাদের প্রাথমিক চিকিতসা দিচ্ছেন।
ছফা আবৃত্তি করছেন,
ওঠরে হাঁস উঠে পড়,
শক্ত হয়ে ভোটটা লড়,
ভোট চুরিতে লর্ডটা হবি,
লুট করে এই দেশটা খাবি!
সেদিন তো গেছেরে
এই দিন তো দিন নয়
আরো দিন আছেরে!
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন