অপারেশন ডেভিল হান্ট

৬০৫ পঠিত ... ১৭:৪৯, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২৫

24

সাড়ে পনেরো বছর খুন, গুম, ক্রসফায়ার, দেশলুণ্ঠন করে; সবশেষে ছাত্র গণহত্যা চালিয়ে যে হাসিনা সৈনিকেরা আজও সক্রিয়, চারজন মিলে ঝটিকা মিছিল করছে; সুযোগ পেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের খুন করছে; টেলিফোনে হাসিনার রক্ততৃষ্ণার নির্দেশনা পেয়ে হাউ-মাউ-খাউ, মানুষের গন্ধ পাউ গাইছে নাকি সুরে; সেইসব সাক্ষাৎ শুয়তানের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে।

সোর্সের কাছে খবর পেয়ে বাউফলের যুবলীগ নেতা তোফাকে ধরতে যায় পুলিশ। মাত্র সাড়ে পনেরো বছর আগে যেখানে কুঁড়েঘর ছিল; সেখানে দালান উঠেছে; উন্নয়নের তোফা হিসেবে। পুলিশ ঘরে ঢুকে দেখে দেয়ালে মক্কা-মদিনার ছবি। শুভ্র দাড়ি আর টুপি পরা চোখে সুরমা দেওয়া একটা লোক সেজদায় উবু হয়ে আছে; ঘরে মৌ মৌ করছে আগরবাতির সৌরভ। সেজদা থেকে উঠে ইশারায় পুলিশকে বসতে বলে মৌলানা। তারপর প্রার্থনায় 'রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাওঁ, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাওঁ, ওয়াকিনা আজাবান্নার' বলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ইউনূসের লম্বা হায়াত, দেশবাসীর কল্যাণ, সমাজকে শয়তান মুক্ত করার কথা বলতে বলতে ডুকরে কেঁদে ওঠে মৌলানা। একটা টুপি পরা শীর্ণ যুবক প্লেটে কয়েকটা খেজুর আর তার পাশে তসবি রেখে যায় পুলিশের জন্য। যুবক গোলাপ পানি ছিটায়; এর ছিটা পুলিশের ইউনিফর্মেও লাগে। নামাজ শেষ হলে অশ্রুসজল পুলিশ মৌলানা সাহেবের দোয়া নিয়ে বিদায় নেয়। বেহেশতি তোফা তসবি জপতে জপতে ফিরে যায় পুলিশ। মোবাইল ফোনে সোর্সকে ধমক দেয়, এমুন ফেরেশতা আদমিরে তুই শয়তান কইলি কেন! সোর্স কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলে, ঠিক ঐ জায়গায় একটা টর্চার সেল ছিল স্যার।

সোর্সের কাছে খবর পেয়ে পুলিশ পঞ্চগড়ে রাহুল মাল্লার বাড়ি যায়। সাড়ে পনেরো বছর আগে যেখানে পাটকাঠির বেড়া আর খড়ের চাল ছিল; এখন সেখানে দোতলা জমিদার বাড়ি; চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের জমিদার বাড়ির নকশায় তৈরি। পুলিশ ঘরে ঢুকতেই দেখে প্রতিমার সামনে ষাষ্ঠাঙ্গে প্রণাম করে পড়ে আছে গেরুয়া বসনের এক প্রভুপাদ। গায়ত্রী মন্ত্র তার কণ্ঠে, ওম ভূর্ভুবঃ স্বঃ তৎসবিতুর র্ভরেণ্যম ভর্গো দেবস্য ধীমহি ধিয়ো য়ো নঃ প্রচোদয়াৎ। মিষ্টি একটা ধূপের সুগন্ধ ছড়িয়ে আছে ঘরজুড়ে। এক মস্তক মুণ্ডিত বালক কপালে চন্দন চর্চিত হয়ে ফলাহার দিয়ে যায় পুলিশকে। পুরোহিত ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি প্রার্থনা করে; সীমান্তে নিহত কৃষকের জন্য স্বর্গের দাবি করে কান্নায় ভেঙে পড়ে। পুলিশ ভীষণ আবেগ প্রবণ হয়ে বেরিয়ে যায়, ফোনে সোর্সকে ধমক দিয়ে বলে, একটা দেবদূতকে তুমি শয়তান বলতেছ কেন! ভালো হয়ে যাও মাসুদ। মাসুদ উত্তর দেয়, বিশ্বাস করেন স্যার, রাহুল মাল্লা লাইলাতুল ইলেকশনের রাতে নরবলি দিছিল।

সোর্সের খবর অনুযায়ী কুষ্টিয়ায় হুনুফার বাড়িতে যায় সেনাবাহিনীর লোক। ঘরে ঢুকতেই দেখে গলায় রুদ্রাক্ষের মালা, শুভ্র বাউলের বেশে দোতারা হাতে বসে এক লোক গান গাইছে, আর আমারে মারিস নে মা।

বলি মা তোর চরণ ধরে

ননী চুরি আর করব না।।

ননীর জন্যে আজ আমারে

মারলি গো মা বেঁধে ধরে

দয়া নাই মা তোর অন্তরে

স্বল্পেতে গেল জানা।।

সারা ঘরে মাদুরের ওপর বসে সাদা বসন পরা বাউল ও ফকিরেরা। হনুফা গান থামিয়ে বলে, এই যে যারা দেশের সম্পদ চুরি করে বিদেশে পাচার করল; এই যে হাসিনাকে মা ডেকে রিক্ত হলো নিঃস্ব হলো দেশ, খালি হলো কত মায়ের বুক; এমন দয়াহীন নেতা এদেশে যেন না আসে। আমরা পথের ফকির গান গেয়ে গেয়ে মাধুকরী করি; তাতেই জীবন বড্ড চলে যায়। লোভ করে কী হয়; দেখলে তো ভাই চিংড়ির ঘের দখল করে অবশেষে হানিফ উচ্ছেদ হয়ে গেল। হনুফা আবার গান ধরে, সবে মাত্র একটি খুঁটি

খুঁটির গোড়ায় নাইকো মাটি

কীসে ঘর রবে খাঁটি

ঝড়ি তুফান এলে পরে।

সেনাবাহিনীর লোক বেরিয়ে যেতে যেতে স্থানীয় ওসিকে ফোন করে বলে, ওসি সাহেব, এ কোথায় পাঠালেন! এত বাউল ফকিরের আখড়া। ওসি হেসে উত্তর দেয়, জুলাই মাসে ঐটা অস্ত্র গুদাম ছিল; হানিফের ইশারায় সেখান থেকে পিকআপ ভরে কাটা রাইফেল এসেছিল।

চট্টগ্রামে এক স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা রাজেশ পালকে ধরতে যায় সেনাবাহিনী। বাড়িতে ঢুকেই দেখে, অসংখ্য বিড়াল, কুকুর সেখানে। তাদের সামনে রাখা পাত্রে খাবার দিচ্ছে পাল। একটা বিড়ালকে চুমু দিয়ে বলে, ও ভোলা খাওনা কেন! রাগ হইছ, বাবার ওপর গোস্বা হইছ; খাও সোনা, একটু খাইয়া নেও; নাইলে অসুখ করব। এরপর একটা কুকুরের ঠ্যাং ধরে বলে, ও নফু ল্যাংড়াইতেছো কেন! দাঁড়াও একটু ওষুধ দিয়া দিই। এরপর একটা খরগোশকে বুকে চেপে ধরে বলে, আমার লক্ষী সোনারে; ও আমার সোনার বাবারে। সেনাবাহিনীর লোক বিমোহিত হয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ফোন করে কোতোয়ালি থানার ওসিকে বলে, এ কোথায় পাঠাইলেন ভাই, পশু প্রেমী দেবতা যে লোকটা। ওসি হেসে বলে, হ পশুদেবতাই বটে, প্রদীপরে ক্রসফায়ারের লিস্ট বানাইয়া দিত।

ফেসবুকে নিয়মিত আফসোস লীগের লোকেদের অস্ত্র ধরে দেশ স্বাধীন করার উস্কানি দিচ্ছে পারমিতা আপা। তাকে গ্রেফতার করে ডিবি অফিসে নিয়ে এলে আওয়ামী কালচারাল ইন্ডাস্ট্রি রুদালি হয়ে পড়বে। তাই অপারেশন ডেভিল হান্টের সৈনিকেরা যায় তার বাসায়। ঘরের মধ্যে অসংখ্য পুতুল; পুতুলগুলো এক এক করে হাতে নিয়ে পারমিতা গান গাইছে, সাতটি রঙের মাঝে আমি মিল খুঁজে না পাই,

জানি না তো কেমন করে কী দিয়ে সাজাই।।

সাদা রঙের জামা, সে তো ভালো নয়,

হলুদ না হয় নীলে কেমন জানি হয়!

লাল টুক টুক মালায় যদি দিতে পারি তাই,

জানি না তো কেমন করে কী দিয়ে সাজাই।

বুক শেলফে হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি উপচে পড়ছে। মেঝেতে সুদৃশ্য আলপনা আঁকা। কে বলবে এই আপা ফেসবুকে ক্রসফায়ারে হাততালি দিত; জঙ্গীদের ডিম দিতে বলত, বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের ফাঁসি দিতে বলে; উপদেষ্টাদের মৃত্যু কামনা করে, উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার কন্যার ফটোশপ করা ছবি শেয়ার করে পুরুষের ভাষায় খিস্তি করে। পারমিতা আপার স্বামী আসে। চশমা পরা নিপাট ভদ্রলোক। তিনি গৃহকর্মীকে সবার জন্য কফি আনতে বলেন। কফি এলে তাতে চুমুক দিতে দিতে বলেন, আমার ওয়াইফের স্প্লিট পারসোনালিটি। ভূমি বাস্তুবতায় সে শিশুর মতো, আবার ফেসবুকে গেলে নেকড়ের মতো। ট্রিটমেন্ট চলছে; শি ইজ আন্ডার মেডিকেশন।

সৈনিকেরা পারমিতার বাসা থেকে বেরিয়ে যাবার সময় সে বলে, এই খোকারা, তোমরা আগামী শুক্রবার বিকেলে এস। ঐদিন অনেক ধুমধাম করে এই পুতুলটার বিয়ে হয়ে আমার বান্ধবী অপরাজিতার পুতুলের সঙ্গে। তোমরা আসবে তো; একটা সৈনিকের ইউনিফর্ম ধরে টানতে থাকে; লক্ষী ভাইটি বিয়েতে তুমি আসবে তো, মেয়ের মামা না এলে ও কিন্তু খুব দুঃখ পাবে। পারমিতার স্বামী এসে তাকে একটা ছোট্ট ইনজেকশন দেয়। সে স্থবির হয়ে স্বামীর গায়ে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

৬০৫ পঠিত ... ১৭:৪৯, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২৫

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top