ক্যাম্পাসের কৃষ্ণচূড়া গাছগুলো ‘প্রশ্ন নয় প্রশংসা করতে এসেছি’ আসরে অনিন্দিতার শ্লেষ শুনে আনন্দে মুচকি হেসেছিল। এরপর ছাত্ররা গভীর অভিমানে ‘তুমি কে আমি কে’ স্লোগান দিলে দলগতভাবে কৃষ্ণচূড়া গাছগুলো বলেছিল, তুমি কে আমি কে সহমত ভাই সহমত বোন।
লেলিয়ে দেওয়া নেকড়েরা ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে কৃষ্ণচূড়া গাছগুলো সহমতের লেখক এজরা পাউন্ডের বিশুদ্ধতা প্রমাণ নিয়ে ব্যস্ত ছিল। ছাত্র-ছাত্রীদের আবার জীবন, যে জীবন দোয়েলের শালিখের।
কোনো কোনো কৃষ্ণচূড়া গাছ রক্তাক্ত ছাত্র-ছাত্রীকে বোঝাতে থাকে তারা কি ব্লাসফেমাস আচরণ করেছে; সুতরাং এর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
নেকড়েরা অনেক বেশি রক্ত ঝরিয়ে ফেললে কৃষ্ণচূড়া গাছগুলো তারাপদ রায়ের ‘আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে’ কোবতেটা ভাটের কেত্তনের মতো গেয়ে সহমত ও বিবেকের ভারসাম্যের খেলা খেলেছিল।
বিশিষ্ট কৃষ্ণচূড়া গাছেরা দেশপ্রেম অনুভূতিতে আঘাত লেগে নারায়ের তাকবির ঢঙ্গে বলেছিল, উদ্ধত কতল করা ওয়াজিব।
কোনো কোনো কৃষ্ণচূড়া দেশপ্রেম অনুভূতিতে আঘাত পেয়ে জয় শ্রীরাম ঢঙ্গে ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে মৌলবাদের অনুপ্রবেশ খুঁজছিল।
কৃষ্ণচূড়া গাছেরা হাওয়ার দিকে খেয়াল রাখতে ‘এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না’ ভাটের আলাপ তুলছিল।
কোনো কোনো কৃষ্ণচূড়া গাছ ‘সংকটের যুক্তিসঙ্গত সমাধান চাই’ বলে পিন পিন করছিল।
সম্মিলিত কৃষ্ণচূড়া জোট মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল; কৃষ্ণচূড়া গাছেরা ছাত্র-ছাত্রীদের দেশপ্রেমের ঈমান নিয়ে প্রশ্ন তুলে যথাসম্ভব ভুল বানান ছাড়াই বিবৃতি লিখছিল।
কৃষ্ণচূড়া গাছেরা অপেক্ষা করছিল অনিন্দিতার আশ্বাস বাণী শোনার জন্য। তিনি যথারীতি সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের কথা শুনলেন না; শুনলেন ভুট্টো সাহেবের কথা।
লেডি ম্যাকবেথ তখন বার বার পানি দিয়ে হাত ধুচ্ছিল; তবু হাত থেকে যায় না রক্তের দাগ। কৃষ্ণচূড়া গাছেরও মনে হয়; তাকে আগের চেয়ে লাল দেখাচ্ছে। কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে তিন ডাকিনী রক্ততৃষ্ণায় উন্মত্ত।
নেকড়েরা সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ধাওয়া খেয়ে আরও গভীর বনভূমিতে আশ্রয় নিলে পকেটে হাত দিয়ে ভাতের হোটেল এসে দাঁড়ায় কৃষ্ণচূড়া গাছেরই নিচে।
কৃষ্ণচূড়া গাছেরা তখন গেয়ে ওঠে ‘মিষ্টি একটা গন্ধ রয়েছে ক্যাম্পাস জুড়ে।‘ একটা পদাকাংক্ষী কৃষ্ণচূড়া গাছ গেয়ে ওঠে, সবকিছু স্বাভাবিক, ক্যাম্পাসে বাতাবি লেবুর চাষ হচ্ছে।
প্লটাকাংক্ষী কৃষ্ণচূড়া গাছ গেয়ে ওঠে, আমার মাটি আমার মা নৌকা ছাড়া চড়বে না!
পদক আকাংক্ষী কৃষ্ণচূড়া গাছ এসে আপডেট দেয়, ক্যাম্পাসের ইন্টারনেট স্পিড দৌড়াচ্ছে; ছাত্রছাত্রীরা হল ছেড়েছে; ক্যাম্পাসে শান্তি কমিটি স্থাপিত হয়েছে।
নেকড়েরা আবার ফিরে এসে দখল নিয়েছে, সে সুখবর দেয় খুশিতে বাকবাকুম কৃষ্ণচূড়া।
এরপর সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনে দেশের শত্রু অনুপ্রবেশের গল্পগুলো দেশের নির্ভরযোগ্য বন্ধু কৃষ্ণচূড়ারা ১ লাখ ৩২ হাজার ২১৯ তম বারের মতো চাবাতে থাকে।
গোটা ক্যাম্পাস জুড়ে কৃষ্ণচূড়াদের চর্বিত চর্বনগুলো বিরক্ত করতে থাকে হীরণ্ময় নীরবতাগুলোকে।
দূরে কোথাও চাখানায় গান বাজছে, কিতনে ভি তু কারলে সিতাম, হাস হাসকে সাহেঙ্গে হাম; ইয়ে পেয়ার না হোগা কম, সানাম তেরি কসম!
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন