ঢাকা শহর, চিপার শহর

৩৫৮ পঠিত ... ১৭:৪৭, জুলাই ১৩, ২০২৪

19

লেখা: অন্তর মাশঊদ

সকালে বারান্দা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখি পাছা সমান পানি।

এদিকে চা-খোর আপুটি অনুনয় বিনয় করতে লাগল, প্লিজ! যেভাবে পারো একটু চিনি আনো।

বাসার সামনে এত পানি উঠতে দেখিনি এতদিন। বড়জোর হাঁটু সমান পানি উঠত।

চায়ের নেশায় আবোল তাবোল বলার আগেই নিচে নামলাম।

মেইন দরজা বরাবর মুদির দোকান এক আংকেলের। দূরত্ব মাত্র ১০ হাত।

পানির উচ্চতা ও রঙ দেখে পানিতে নামতে ইচ্ছে করছে না।

প্রেম ট্রেম থাকাকালীন সময় হয়তো নিচে নামলে নামতেও পারতাম। আর এখন এই পানিতে ডুব দিয়ে চিনি নিয়ে ফিরে এলেও ইমপ্রেস হবে না। ভাববে এ আর এমন কী! 

বিয়ের পর কেউ কেউ সবকিছুকেই টেকেন ফর গ্রান্টেড নিয়ে নেয়। এসব জিনিসে আর বিস্ময় প্রকাশ করে না।

যাইহোক, দোকানদার বুড়োটাকে বলতেও পারছি না, এক প্যাকেট চিনি ছুঁড়ে মারেন। জায়গামতো ছুঁড়ে মারতে না পারলে সে প্যাকেট ভেসে যাবে ৯ নম্বর থেকে ১০ নম্বরে। যেভাবে ভেসে যাচ্ছে বেলুনগুলো! মাঝে মাঝে ভাবি মানুষ কী রাস্তাঘাটে ওসব করে বেড়ায়! নইলে এগুলো ডাস্টবিনে না থেকে, রাস্তায় ভাসে কীভাবে!

এক গাঞ্জুইট্টা টাইপের লোক যাচ্ছিল, তাকে বললাম, ভাই! এক প্যাকেট চিনি এই দোকানটা থেকে এনে দেন না।

সে বলল, ২০ টাকা লাগবে।

আমি বললাম, মাত্র ১০ কদম রাস্তা। ১ টাকা করে হলেও তো ১০ টাকা! এত চাচ্ছেন! জুলুম ভাই। 

তার উত্তর, আপনার কাছ থেকে টাকাটা যদি আনতে যাই! তাহলে ৫ কদম! এরপর দোকানের দিকে যেতে ১০ কদম! আসতে ১০ কদম! মোট ২৫ টাকা হয়! আপনারে তো মিয়া ৫ টাকা কম বলছি!

লোকটার কথায় যুক্তি আছে। আমি বরাবরই হিসেবে ভুল।

দোকানের পাশের বাড়ির দেওয়ালের দিকে নজর গেল। স্থানীয় এমপির গত নির্বাচনের পোস্টার। কে যেন এমপির চোখ বরাবর কাগজটা ছিঁড়ে ফেলেছে। নইলে উনি ঠিক আমার চোখ বরাবর তাকাতে পারতেন। দেখতে পারতেন এই দূর্দশার কথা।

পোস্টারে লেখা, ভরসা রাখুন নৌকায়। ভরসা না করেই এলাকায় যেই জলাবদ্ধতা! ভরসা করলে হয়তো এমন অবস্থা হতো না।

যাইহোক, গাঞ্জুট্টা লোকটা আমি রাজি কি না জানতে চাচ্ছে!

আমি বললাম, ৫ টাকা দেব!

আপনি ৫ কদম হেঁটে দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। এরপর প্যাকেটটা নিয়ে ছুঁড়ে মারবেন আমার দিকে। টাকা দিতে হবে না। আংকেলকে পরে টাকা দিয়ে দেব। উনার থেকে ৫ টাকা নেবেন।

লোকটার আমার প্রস্তাবটা মজা লাগল না। চেহারা দেখেই বুঝা গেল।

সে বলল, ছুঁড়ে মারার চার্জ কে দেবে? ওটার জন্য ৫ টাকা। মোট ১০ টাকা দিতে হবে। 

কথা না পেঁচিয়ে এবার রাজি হলাম। সে হাসতে হাসতে আমার দিকে এগিয়ে এসে, এক কেজি চিনির টাকা নিলো।

বলল, ভাইজান! আপনার সাথে একটু দুষ্টামি করেছি। টাকা লাগবে না। মানুষের উপকারেই তো মানুষ এগিয়ে আসবে। টাকাটা দেন। আমি এক প্যাকেট চিনি এনে দিচ্ছি।

: অমুক কোম্পানীর চিনি আনবেন প্লিজ!

রিল্যাক্সে একটু সোফায় বসে টিভি ছেড়েছি! ভালো লাগছিল যে, আজকে ময়লা পানিতে আর নামতে হয়নি।

কিছুক্ষণ পর বউয়ের চিৎকার! এই তোমাকে চিনি আনতে বলেছি! তুমি লবনের প্যাকেট কেন নিয়ে এসেছ!  

স্পিচলেস হয়ে গিয়েছি। কী অঘটন ঘটে গিয়েছে বুঝতে পারছি। দৌড়ে নিচে নেমে লোকটাকে আর খুঁজে পেলাম না।

দেখি পানিতে দুটো পিচ্চি লাফালাফি করতেছে। ওদেরকে বললে, ওরা রাজি হলো। চিনি এনে দিতে।

দোকানদারকে চিৎকার দিয়ে বললাম, ওদেরকে দুইটা চিপস দিয়া দেন! ওরা খাবে। আমার জন্য দিতে হবে না। আমি অলরেডি বিচিতে ৯০ টাকার চিপ খেয়েছি!

 

৩৫৮ পঠিত ... ১৭:৪৭, জুলাই ১৩, ২০২৪

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top