অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষে দেশ পরিচালনা কেন কঠিন?

৫৯ পঠিত ... ১৬ ঘন্টা ১০ মিনিট আগে

39

এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে প্রথমেই চোখে পড়বে দক্ষিণ এশীয় সমাজের কিছু রাগান্বিত খালু ও ফুপার চেহারা; যারা যে কোনো বিয়ের আসর থেকে রাগ করে বেরিয়ে যান। তখন তাদেরকে লোকজন অনেক বুঝিয়ে ফেরত আনে বিবাহ অনুষ্ঠানে। খালু ও ফুপা; খালা ও ফুপুর সঙ্গে বিয়ে হবার পর পরিবারের জামাই হিসেবে অনেক অ্যাটেনশন পান। সেই অ্যাটেনশন তারা আমৃত্যু পেতে চান। সময়ের বিবর্তনে বিভিন্ন পারিবারিক ডিসিশান মেকিঙে তাদের গুরুত্ব কমে গেলে; তারা তখন রেগেবেগে বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে যান।

আমাদের জাতির জীবন দার্শনিক ফরহাদ মজহার, আইনজ্ঞ জেড আই খান পান্না ও রাজনীতি প্রকৌশল শাস্ত্রবিদ মাহমুদুর রহমান এখন রাগান্বিত খালু ও ফুপা হিসেবে বিরাজ করছেন। তারা তিনজনই নিজেদের প্রধান উপদেষ্টা হবার যোগ্য মনে করেন; কিন্তু সমন্বয়ক ছাত্রছাত্রীরা পছন্দ করেছে ড. ইউনূসকে। এখন ঐ তিন গার্ডিয়ান অ্যাঞ্জেল, কেউ নতুন সংবিধান চাইছেন, কেউ ফ্যাসিস্টাধিকার চাইছেন, কেউবা ইউনূসকে প্রেসিডেন্ট করে দিয়ে নিজে প্রধান উপদেষ্টা হতে চাইছেন। রাজনীতির লালসালুর মাজারে রহমান অ্যান্ড রহমান কোম্পানির বাইরে কারও ভারতের ড. মনমোহন সিং-এর মতো পরিবারতন্ত্রের বাইরে প্রধানমন্ত্রী হবার উপায় নেই। সেখানে খালু ও ফুপাদের জন্য একমাত্র রয়েছে প্রেসিডেন্ট পদটি। সেটিও দখল করেছেন অপরিচিত এক জ্যাঠা। ফলে তাকে নিয়ে টানাহ্যাঁচড়া চলছে।

আমাদের জাতির জীবনে প্রথমবারের মতো ফ্যাসিস্টাধিকার বাস্তবায়নে সক্রিয় রয়েছে শেখ হাসিনার ফ্যাসিজমের দোসরেরা। তারা ফ্যাসিস্ট খালার হত্যা ও অগ্নিসংযোগের নির্দেশ সম্বলিত নতুন নতুন টেলিফোন কল ফাঁস করে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখাচ্ছে। শেখ হাসিনার লুট করো, অন্যকে লুট করতে দাও তারপর লুটিয়েন্স প্যালেসে পালাও নীতির অধীনে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ আওয়ামীলীগ কর্মী ক্ষমতা হারিয়ে দিশেহারা। ৫ শতাংশ আওয়ামী খুনী ভাতারের দেশ ভারতে পালিয়েছে। কিন্তু মিডিয়া-প্রশাসন-বিশ্ববিদ্যালয়-সাংস্কৃতিক বলয়-নারীবাদী সংগঠন ও ফেসবুকের এতিম আসরে হাসিনার দাসেরা ক্রন্দনে-আর্তনাদে-ছিদ্রান্বেষণে পাগলপারা। ফেসবুকের সজীব ওয়াজেদ জয় পৃষ্ঠাতে রিকশাচালকের মুখ দিয়ে বলানো হয়েছে, পৃথিবীর প্রতিটি নোবেল বিজয়ী একজন নাস্তিক। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দোকান ঠিকমতো না চলায়; এখন তারা ইসলামি চেতনার দোকান খুলতে ধীর পায়ে এগোচ্ছে। জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামীলীগের প্রেম হয়ে গেলেও অবাক হবার কিছুই থাকবে না এই মুহূর্তে।

ওয়ান ইলেভেনে ক্ষমতা হারিয়ে দেড় দশকেরও বেশি সময় বিষাদসিন্ধু পার করে; হাসিনার ফ্যাসিজমকে কোনোভাবেই সরাতে না পেরে বিএনপি ৫ আগস্ট পুনর্জীবিত হয়েছে ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে হাসিনা পতনে। দলটির প্রবাসী নেতা তারেক রহমান প্রতিটি স্টেটমেন্ট চিন্তা করে দিচ্ছেন। কিন্তু জেল ও গুম থেকে ছাড়া পাওয়া কালু-লালুর আর তর সইছে না; কবে পতাকাওয়ালা গাড়ি নিয়ে ঘুরবে। ফইন্নির অ্যালিট হবার এমন লোভ লাগিয়ে দিয়েছে লালসালুর মাজারদুটি; বিএনপির কালু-লালু আর আওয়ামীলীগের বাচ্চু-কাচ্চুকে নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। চাঁদাবাজির দখল ছেড়ে বাচ্চু-কাচ্চু পালিয়ে যাওয়ায়, লালু ও কালু বালুমহাল, জলমহাল, মিডিয়া, বাজার দখল করে এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কবরস্থান ও শ্মশানের সভাপতির পদ গ্রহণ করতে শুরু করেছে। চাঁদাবাজি করতে না পেরে শুকিয়ে যাওয়া লালু ও কালু তিনমাসেই বেশ চনমনে দেখাচ্ছে। তারা কখন ইউনূস সরকার যাবে এই অপেক্ষায় আওয়ামীলীগের জ্যাডা রাষ্ট্রপতির মাঝে সংবিধানের ধারাবাহিকতা খুঁজছে। পারলে আওয়ামীলীগকে গর্ত থেকে বের করে এনে পরশুই নির্বাচন চায় তারা। কারণ এবার তারা জিতবে এত নিশ্চিত। কিন্তু তর সইছে না ক্ষমতার বাসরঘরে প্রবেশের জন্য।

জামায়াত ৫ আগস্ট রাজনীতিকদের বৈঠকে ডাক পেয়ে কল্পনায় বিরাট রাজনৈতিক দল হয়ে উঠেছে। তৌহিদি জনতা আওমি জনতার স্থানটি পেতে আঁকুপাকু করছে। জামায়াত প্রধান ভাইরাল হয়ে ফেরেশতার ঢং-এ কথা বলছেন। এখন সে ডিনাইয়াল পার্টনার পেয়েছে। আওয়ামীলীগ গত পনেরো বছরের মানবতাবিরোধী অপরাধ ডিনাই করছে; সুতরাং একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধ অস্বীকারের এত অনুকূল সময় আর কখনও ছিলই না। কিন্তু ঘুরে ফিরে জামায়াতের ভোট দুই তিন শতাংশ। দুই-তিনটির বেশি আসন সে পাবে না। তাই তো প্রাপ্ত ভোটের শতাংশ ধরে বেশি আসন পেতে চায়। আর আছে পূর্বের মেনন-ইনু-দিলীপ বড়ুয়ার মতো নতুন প্রজন্মের ওয়ান ম্যান পার্টি। তারাও প্রাপ্ত ভোটের শতাংশ গুনে একটি আসন চায়।

গত পনেরো বছর ধরে মুখে আগুন আর পকেটে সিভি বা যোগ্যতা বৃত্তান্ত নিয়ে ফ্যাসিস্ট বিরোধী বিপ্লব করেছে যারা, সবাই একটা পদ পেতে চায়। প্রবাসী প্রতিভাবানেরা দেশে ফিরে ডেমোক্রেসির ঝড় তুলে দিতে চায়। দক্ষ উপদেষ্টা আসিফ নজরুল যাদের চেনেন, ড. ইউনূস যাদের এনজিওতে ভালো কাজ করতে দেখেছেন; অমুকের ছেলে, তমুকের জামাই, কে ইংরেজিতে ফটাশ ফটাশ করে; এসব যোগ্যতার ভিত্তিতে পদগুলো পিঠার মতো বানরদের মাঝে ভাগ করে দিলে; পদ না পাওয়া লোকেরা বিলা হয়ে যায়। সামান্য একটা পদ পাওয়া-না পাওয়ার ওপর ভিত্তি করে দেশটা এখন রসাতলে গেলেও কোনো ক্ষতি নেই তাদের।

আওয়ামীলীগ, বিএনপির দলান্ধ সমর্থক, জামায়াতের ধর্মান্ধ সমর্থক, হিন্দুত্ববাদীদের ধর্মান্ধ সমর্থক, পদ না পাওয়া বিপ্লবী আর জাতীয় খালু ও ফুফাদের অত্যাচারে দেশের প্রাণ ওষ্ঠাগত। অন্তর্জলী যাত্রার যে বুড়োদের জীবন সায়াহ্নে উপদেষ্টা হবার শখ হয়েছিল; এখন আওয়ামীলীগের কলতলার বুয়া ও চাকরদের চ-বর্গীয় গালাগাল খেয়ে তাদের শখ প্রায় মিটে আসার দিকে।

কীসের রাষ্ট্র সংস্কার; কীসের কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে সংবিধান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি সংস্কার? বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়েছিল আওয়ামীলীগের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তীর জমিদারি হিসেবে। দিল্লি-কলকাতার সেকেন্ড হোমে বসে সেই জমিদারেরা প্রতিদিন পশ্চিমা মিডিয়ায় বাংলাদেশ সম্পর্কে আকাশ কুসুম গল্প বলছে; ভারত তার কর্নওয়ালিশ বাপের তালুক ফিরে পেতে নেংটি পরিয়ে ময়ূখ নাচাচ্ছে। বিএনপি লীগের জমিদারিতে ভাগ বসিয়ে পলিটিকস ডিফিকাল্ট করে দেওয়ায়; এখন ঘুরে ফিরে বিএনপিকে দেশটাকে খাওয়ার সুযোগ দিতে হবে; আওয়ামীলীগ যখন পনেরো বছরে খাওয়া-দাওয়ার রেকর্ড করে গেছে। আমাদের বাংলাদেশের নাগরিকদের কাজ হচ্ছে উদয়াস্ত পরিশ্রম করে উপার্জন করা; আর আওয়ামীলীগ ও বিএনপির বাচ্চু-কাচ্চু-লালু-দুলুদের খাইয়ে পরিয়ে মোটাতাজা করা। কবি আবুল হাসান তাই তো বলেছিলেন, ফুল ফুটবে না, ফুল ফুটবে না, ফুল আর কখনোই ফুটবে না!

 

৫৯ পঠিত ... ১৬ ঘন্টা ১০ মিনিট আগে

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top