লেখা: অন্তরা ব্যানার্জি
বাবা আমায় শিখিয়েছিলেন জীবনে রিভার্স সাইকোলজি ইউজ করতে। এই শিক্ষা তিনি আমার ছোটবেলাতেই পেয়েছিলেন সম্ভবত। আমাকে খেতে বললে খেতাম না, অতিথিদের সামনে কবিতা বলতে বললে বলতাম না, কিন্তু যেই বলা হয়, ‘একদম ছুটোছুটি করবে না,’ আমি তরতর করে ছুটতে শুরু করতাম, চুপ করে থাকবে বললে গড়্গড় করে বকতে শুরু করতাম।
তবে জীবনে রিভার্স সাইকোলজি ব্যবহার করে আমি প্রচুর সুফল পেয়েছি। যেমন, যেদিন পড়া মুখস্ত নেই, সেদিনই স্যারকে বলা ‘আজ পড়া ধরবেন না?’ স্যারের আদ্ধেক স্যাডিস্ট উৎসাহ ওখানেই উবে যায়। বা যেমন কখনও বহুদিন ডেট করার পরও ছেলে যখন কমিটমেন্টের নাম নিচ্ছে না, তাকে বলেছি, ‘আমার না ওসব গদগদ প্রেম ফ্রেম পোষায় না, ক্যাজুয়ালি ডেট করছি ঠিক আছে, আই ডোন্ট লাইক ট্যাগস’ ব্যাস ওমনি ছেলে উলটো সুরে গাইতে শুরু করে। বা বেশ কিছুদিন প্রেম করার পর যখন বুঝছি কাটাতে হবে, কিন্তু যে ব্রেকআপ করে সে ভিলেন তখন বলেছি ‘পুচু, বাড়ি থেকে না বিয়ের জন্য প্রেশার দিচ্ছে, বাবার সাথে একবার কথা বলবে?’ ব্যাস! পাখি খাঁচা খুলে না, গরাদ ভেঙে হাওয়া।
আজ সকালে মেট্রোয় উঠেছি। হালকা ফুলকা ভীড়, গিরিশ পার্ক থেকে এক ইয়াবিশাল কাকিমা উঠলেন। দু'হাতে দুটো বিশাল ব্যাগ, উঠে সোজা আমার পাশ। প্রায় আমার উপরই গদাম করে বসে পড়লেন। আমি সাইড বারের গায়ের এঁটো চুইংগামের মত সেঁটে গেলাম, চিঁ চিঁ করে বললাম ‘একটু সরে বসবেন দিদি?’
তাতে মাসিমা দিদি এমন ভাবে তাকালেন যেন ওনার পৈতৃক জমির ভাগ চেয়েছি। বুঝলাম, এটা সোজা আঙুলে ওঠার ঘি না, টেবিল স্পুন লাগবে।
আমি রিভার্স সাইকোলজি দেবতার নাম স্মরণ করে, গলাটা খাঁকরে যথাসম্ভব মাঝরাতের মহিলা আর জে র মত সেক্সি করে, চোখে ইমরান হাশমির মত চাহনি এনে বললাম ‘বলছি আরেকটু সরে আসুন না, হেব্বি লাগছে...’
ব্যস, শাহরুখ খান র্যোমান্টিক গানে যেমন সড়াৎ করে হড়কে গিয়ে হিরোইনের পায়ের সামনে চলে আসে, মাসিমাদিও সড়াৎ করে আমার গায়ের উপর থেকে সরে গেলেন।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন