রাজনীতির খোলা মাঠ থেকে শুরু করে গোল বলের চতুষ্কোণ মাঠ যেটাই বলুন না কেন, জিততে হলে সকল মাঠেই ঐক্যবদ্ধ এবং দলবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হয়। আর এই দলবদ্ধভাবে খেলার উৎসাহ যোগানোর জন্য এবং বিশ্বকাপের উন্মাদনাকে এক ধাপ বাড়াতেই প্রতি বছর বিভিন্ন দেশও মাঠে নেমে পড়ে বিশ্বকাপের থিম সং নিয়ে। আনন্দ-উদ্যমের এসব গানগুলো বরাবরই খেলোয়াড় এবং সমর্থক সকলকেই সুখে-দুঃখে আত্নবিশ্বাস যুগিয়েছে।
বিশ্বকাপের গানের কথা বলতে হলে প্রথমেই চলে যেতে হবে সেই ১৯৬২ সালে। সেই বছরেই লস র্যাম্বলার্সের হাত ধরে চিলি বিশ্বকাপের প্রথম অফিসিয়াল গান ‘এল রক ডেল ম্যান্ডিয়াল’ প্রকাশিত হয়। তখনকার সময় এ ধরণের গানগুলো এখনকার মত এতটা জনপ্রিয় হতো না এবং আয়োজক দেশগুলোও কোনো অফিসিয়াল গান প্রকাশ করতো না। এরপর ১৯৯৮ সালে আয়োজক দেশ ফ্রান্স লাতিন শিল্পী রিকি মার্টিনের উপর বিশ্বকাপের জন্য খানিকটা হালকা ধাচের থিম সং তৈরির গুরুদায়িত্ব দেয়। তার গান ‘কোপা ডে লা ভিডা’ প্রকাশের পর আমেরিকার বিলবোর্ড টপ চার্টের এক নম্বর স্থান দখল করে নেয়। এই গানের সাফল্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই পরবর্তীতে অন্যান্য আয়োজক দেশগুলো নিয়মিতই বিশ্বকাপের জন্য আনন্দ-উচ্ছ্বাসে পরিপূর্ণ ‘ক্যাচি’ সব গান বানানোর চেষ্টা করতে থাকে। যার ফলশ্রুতিতে আমরা পরবর্তীতে ওয়াকা ওয়াকা বা ওয়েভিন ফ্ল্যাগের মতো দুনিয়া কাঁপানো সব থিম সং পেয়েছি।
শুধু যে আয়োজক দেশ থেকেই বিশ্বকাপের থিম সং প্রকাশিত হয়েছে তা কিন্তু নয়। কোকাকোলার মত কোন কোন বৈশ্বিক ব্র্যান্ড থেকেও প্রকাশিত হয়েছে বিশ্বকাপের থিম সং। বিভিন্ন বিশ্বকাপ আসরে প্রকাশিত হওয়া থিম সং গুলোর মধ্য থেকে সেরা দশটি থিম সং আজ থাকছে eআরকির পাঠকদের জন্য।
১০# লা লা লা (২০১৪)- শাকিরা
তিন যুগ পর বিশ্বকাপের আসর বসে কোন লাতিন দেশে। আর উৎসবের দেশ ব্রাজিলের বিশ্বকাপে শাকিরার 'লা লা লা' গানটি ছিল সেকেন্ড থিম সং। আগের বিশ্বকাপে শাকিরার গাওয়া থিম সং 'ওয়াকা ওয়াকা'র মত এ গানটিও প্রচণ্ড জনপ্রিয় হয়। আনন্দ উল্লাসের সাথে ফুটবল কী করে সবাইকে কাছে নিয়ে আসে তার গল্পই বলা হয়েছে এ গানে।
৯# দ্য টাইমস অফ আওয়ার লাইভস (২০০৬)- ইল ডিভো এন্ড টনি ব্র্যাক্সটন
দলবদ্ধ হয়ে কাজ করলে যে আমরা কতটা সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলতে পারি সেই কথাই বলা হয়েছে গানে গানে। শান্তি এবং সংহতির শক্তিশালী বার্তাই এই গানটিকে জনপ্রিয় করে তোলে।
৮# এল রক ডে মুনডিয়াল (১৯৬২)- লস র্যাম্বলার্স
এই গান থেকেই সকল কিছুর শুরু হয়েছিল। বিশ্বকাপ নিয়ে তৈরি প্রথম গান এটি। লস র্যাম্বলার্স যদি এই গান না তৈরি করতেন তবে বোধহয় কোনোদিনই গানে গানে বিশ্বকাপের উন্মাদনা প্রকাশ হতো না।
৭# অ্যানথেম(২০০২)- ভ্যানজেলিস
এই গানের অসাধারণ ও প্রাণবন্ত সুর এবং অনুপ্রেরণামূলক লিরিকের কারণে এই গানটি শ্রোতাদের কাছে এতটা জনপ্রিয়। অন্যান্য দেশের তুলনায় ঐ বিশ্বকাপের সহআয়োজক জাপানে এই গানটি বেশি জনপ্রিয়।
৬# গ্লোরিল্যান্ড(১৯৯৪)- ড্যারিল হল
খুব কম সংখ্যক গানই এটির মতন ভিন্ন আঙ্গিকে বিশ্বজুড়ে যে বৈচিত্রতা তা প্রকাশ করেছে।
৫# বুম (২০০২)- অ্যানাস্তাসিয়া
এই গানের কথার মাধ্যমে অ্যানাস্তাসিয়া যেভাবে শ্রোতাদের আত্নবিশ্বাসের সাথে সামনের দিকে এগিয়ে চলার প্রত্যয় যোগায় তা এক কথায় দুর্দান্ত।
৪# উন’ইস্তাতে ইতালিয়ানা (১৯৯০)- জিয়ান্না নান্নিনি এবং এডোরাডো বেন্নাতো
বিশ্বকাপের গানগুলোর মধ্যে এটি সকলের সবচেয়ে প্রিয় গান। নিজের স্বপ্নের পিছে নাছোড়বান্দার মতন লেগে থাকার উৎসাহ দেয় এই গান। কারণ, সবকিছু সম্ভব।
৩# ওয়েভিন ফ্ল্যাগ (২০১০)- কে’নান ফিচারিং ডেভিড বিসবাল
যদিও এই গানটি ফিফার অফিসিয়াল গান না, তবে এটি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে কোকাকোলার থিম সং। এই গানটি পুরো বিশ্বে প্রকাশিত হয় বেশ অনেকগুলো ভাষায়। অন্যান্য সব দেশের মত বাংলাদেশেও গানটি প্রচণ্ড জনপ্রিয় হয়। পতাকা আর মুক্তি যে একই সুরে বাঁধা, সে কথাই বলা হয়েছিল এই গানে। আকর্ষণীয় সুর আর কথায় এই গান সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পরে।
২# ওয়াকা ওয়াকা (২০১০)- শাকিরা
এই গানটি বিশ্বজুড়ে এতটা জনপ্রিয় হওয়ার কারণ বোধহয় গানটি বেজে উঠলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠা শাকিরার সেই অদ্ভুত নাচ। আপনি যেখানেই থাকুন না কেন গানটি কানে এলে আপনারও আপনা থেকেই নাচতে ইচ্ছে করবে! আফ্রিকায় হওয়া প্রথম বিশ্বকাপের থিম সং ছিল এটি। আফ্রিকায় বিশ্বকাপের উন্মাদনা খুব স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়েছিল এই গানে! ইউটিউবে এই গানের ভিউ প্রায় ২০০ কোটি।
১# কোপা ডে লা ভিডা (১৯৯৮)- রিকি মার্টিন
বিশ্বকাপের গান সম্বন্ধে ধারণাই বদলে দেওয়া এই গানটি সারাবিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় বিশ্বকাপ থিম সং। এই অসাধারণ গানটির ইউনিক এবং ক্যাচি মিউজিক অন্য সকলকেও অনুপ্রাণিত করে পরবর্তি বিশ্বকাপগুলোতে এমন গান তৈরির জন্য। বিশ্বকাপের কথা ভাবলে সর্বপ্রথম এই গানের কথাই মাথায় আসে। বিশ দশকে এসেও কোনো গান এখন পর্যন্ত এই গানের সমতুল্য হতে পারেনি।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন