বদরুল ভাইয়ের মন্ত্রীভাব

১৭৪ পঠিত ... ১৭:২২, জানুয়ারি ১৪, ২০২৫

35

বদরুল ভাইয়ের শরীরের মধ্যে মন্ত্রী ভাবটা প্রবল হচ্ছে। মন্ত্রীত্ব ঠিক হয়েই আছে; শুধু শপথ গ্রহণের মুহূর্তটা আসছে না। কতগুলো পুঁথিপোড়ো অকম্মা লোক অযথা সংস্কার সংস্কার করে সময় ক্ষেপণ করছে। এরা আসলে বোঝে না; নির্দলীয় লোক মানেই ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার। দেশের মালিক হচ্ছে পলিটিক্যাল পার্টি। পলিটিক্যাল পার্টি দয়া করে দেশের প্রজাদের দেশে থাকতে দেয় বলে, তারা দেশে থাকতে পারে।  

বৃটিশ আমলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে যেভাবে দেশকে জমিদারি অঞ্চলে ভাগাভাগি করা হয়েছিল; রাজনৈতিক দলগুলো সেই জমিদারি এলাকাগুলোর নাম দিয়েছে নির্বাচনী এলাকা। বৃটিশ আমলের জমিদারিতে জমিদারের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। এখন এক এক নির্বাচনী এলাকায় দুজন করে জমিদার। তাদের মধ্যে একজনকে এলাকা ছাড়া করে আরেকজন জমিদার হবার যে পদ্ধতি; তাকেই গণতন্ত্র বলে।

গায়ের রঙ একটু ফর্সা হলে রাজনৈতিক দল তাকে জমিদারি দেয়। আর বিশেষ কোনো গুণ না থাকলেও চলে। প্রজারা ফর্সা জমিদার, তার পুত্র-কন্যা, জামাই, নাতি-নাতনিকে পর্যায়ক্রমে গদিনশীন করে। ফর্সা জমিদারের মুষকো কালো ক্যাডার বাহিনী থাকে। তারা গরিব প্রজাদের ওপর চাঁদাবাজি করে জমিদারি কর আদায় করে। চাঁদাবাজির টাকা জমিদার পর্যন্ত আসে।

বদরুল ভাই চিন্তা করে, দ্বি-দলীয় ঐক্যের ভিত্তিতে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা বিনাশ করার পরেও এত শিক্ষিত লোক কোত্থেকে আসে যারা দিনমান এমন সংস্কার সংস্কার করে। দুধভাতে এত উৎপাত বদরুল ভাইয়ের সহ্য হয় না।

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের জমিদারি পাওয়া গিয়েছিল বৃটিশদের কাছ থেকে। কিন্তু গণতান্ত্রিক বন্দোবস্তের জমিদারি পেতে হয় ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। বদরুল ভাই তাই মুখস্থ করে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের ন্যারেটিভ। কী রকম বাক্য ও শব্দ বললে ভারতও খুশি, এমেরিকাও খুশি; মনের মধ্যে তা সাজায়। বিকেলের দিকে সাংবাদিকেরা হাজির হয় বদরুল ভাইয়ের মিডিয়া বাইট বা কামড় খেতে। যেহেতু মুক্তিযুদ্ধে ভারত সাহায্য করেছিল, তাই মিডিয়া বাইটে মুক্তিযুদ্ধ শব্দটা থাকলে তারা পছন্দ করে। আর মুক্তিযুদ্ধের পর দেশের জন্য বিশেষ কিছুই করেনি রাজনৈতিক নেতারা; ভোট ডাকাতি বা দেশডাকাতির কথা তো আর বলা যায়। এমেরিকা পছন্দ করে, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন কথা দুটি। সুতরাং এসব ক্যাচওয়ার্ড ভেতরে ঢুকিয়ে মিডিয়া বাইট দেয় বদরুল ভাই।

বদরুল ভাই ফ্যাসিস্ট পতনের জন্য ষোল বছর বল নিয়ে মাঠে দৌড়াদৌড়ি করেছে। কিন্তু গোলপোস্টের কাছেই কখনও যেতে পারেনি। ফ্যাসিস্টেরা ল্যাং মেরে ফেলে দিয়ে সাইড বেঞ্চে বসিয়ে দিয়েছে। কিন্তু কোত্থেকে কয়েকটা হাঁটুর বয়েসী ছেলে-মেয়ে এসে ফ্যাসিস্টের গোল পোস্টে বল ঢুকিয়ে দিয়েছে।

যদিও সর্বময় আলো পত্রিকা ফ্যাসিস্টের পতনে বাম বুড়োদের ভূমিকা নিয়ে সারগর্ভ প্রতিবেদনা জাগাচ্ছে। বৃটিশ আমল থেকে পাকিস্তান আমল হয়ে বাংলাদেশ আমলে এস্টাবলিশমেন্টের প্রমোদ বালক হয়ে ইসলাম ধর্মের ম্যানেজাররা যারা সাকুল্যে পাঁচটা আসন পাবে; তারাও আজ কল্পনায় নিজেদের ক্ষমতার ভাগীদার ভাবছে। কিছু ছোকরা বৃটিশ আমলের হিন্দু জমিদারের মতো পোশাক পরে বাম বুড়োদের কথাবার্তা কপি করে কথা বলছে; কিছু ছোকরা পাকিস্তান আমলের মুসলমান জমিদারের পোশাক পরে ইসলামি বুড়োদের মতো কথা বলছে। এই দুটি পক্ষ সমর্থনহীন যেই নেতা সেই কর্মী গোছের দুই বিগ মাউথ।

বদরুল ভাই দেখছে, তার দলের তরুণেরা অত পট পট করে কথাও বলতে পারে না, তাই ন্যারেটিভ বানাতে পারে না। ফলে কষ্ট করে সব ন্যারেটিভই তাকে বানাতে হয়। দলের ক্যাডাররা প্রতিদিন জিজ্ঞেস করে, ভাই মন্ত্রী হবেন কবে! এমনকি ঘুমের মধ্যে একটা পতাকাওয়ালা গাড়ি, সচিবালয়ের বিরাট চেয়ার, এলাকায় ১০১টি তোরণ, ৭১টি ফুলের মালা এসে জিজ্ঞেস করে, প্রিয়তম কবে মন্ত্রী হবে তুমি! বয়স তো হয়েছে; যদি টেঁসে যাও!

বদরুল ভাই ঘুম থেকে উঠে দ্রুত পায়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসে মিডিয়ায় কামড় দেয়, ফালাও সংস্কার, আমরা দেশের মালিক। আমরা ৫৪ বছর রাষ্ট্রের কত সোনালী সংস্কার করেছি তা কী মনে নেই। অতি দ্রুত নির্বাচন দিয়ে সুশীলেরা বিদায় হও। আমার মেয়ে-জামাইকে রাজযোটক হয়ে ঘুরতে দাও। কতদিন জমিদারিটা ঘুরে দেখেনি ওরা।

 

১৭৪ পঠিত ... ১৭:২২, জানুয়ারি ১৪, ২০২৫

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top