Nvidia: রেস্তোরার ছোট্ট কেবিন থেকে বিশ্বসেরা হবার গল্প

২২১ পঠিত ... ১৮:০২, সেপ্টেম্বর ০১, ২০২৪

33 (15)

 

নব্বইয়ের দশকের শুরুর একটা দিনের কথা, উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ায় ডেনিস নামে একটা রেস্তোরাঁয় তিন প্রকৌশলী একত্রিত হয়েছেন। জায়গাটা তখন তেমন অভিজাত ছিল না—একটি সাধারণ ডাইনার রেস্তোরা যেখানে ট্রাকচালক থেকে শুরু করে পরিবার সমেত অনেকেই তাদের সকালের নাস্তা করতে আসে। তবে সেদিন, সেখানে এক নতুন ইতিহাসের সূচনা হয়েছিল, প্রায় নিঃশব্দে।

জেনসেন হুয়াং, যিনি এই রেস্তোরাঁতেই  ডিশওয়াশার হিসেবে কাজ করতেন, বসেছিলেন তার দুই বন্ধু এবং সহকর্মী ক্রিস মালাকাউস্কি এবং কার্টিস প্রিয়েমের সাথে। তিনজনই ছিলেন অভিজ্ঞ প্রকৌশলী, IBM এবং Sun Microsystems-এর মতো টেক জায়ান্টদের সাথে কাজের অভিজ্ঞতা ছিল তাদের। তারা শুধু অতীত স্মরণ করার জন্য একত্রিত হননি, বরং ভবিষ্যতের জন্য স্বপ্ন দেখছিলেন—এমন এক ভবিষ্যৎ যেখানে 3D গ্রাফিক্স পুরো কম্পিউটিং জগৎকে বদলে দেবে।

WhatsApp Image 2024-09-01 at 16.49.20_5b34ae7b

সেই সময়, ব্যক্তিগত কম্পিউটারগুলো ছিল বেশ প্রাথমিক পর্যায়ের, সেগুলো দিয়ে দৈনন্দিন সাধারণ কিছু কাজ করা যেত, কিন্তু এখনকার মতো বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা দিতে পারত না। হুয়াং, মালাকাউস্কি এবং প্রিয়েম এমন এক ভবিষ্যৎ কল্পনা করেছিলেন যেখানে কম্পিউটারগুলো জীবন্ত 3D গ্রাফিক্স তৈরি করতে পারবে, যা ভিডিও গেম থেকে শুরু করে দুর্দান্ত সব সিমুলেশন সব অন্য সবকিছুতেই বিপ্লব ঘটাবে। তারা জানতেন, তখনকার বাজারের প্রযুক্তি তাদের এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারবে না, তাই তারা নিজেরাই সেই প্রযুক্তি তৈরির সিদ্ধান্ত নিলেন।

ডেনিসে তাদের ঐ বৈঠক থেকেই জন্ম নেয় Nvidia, যা পরবর্তীতে কম্পিউটিং জগতের ভবিষ্যতকেই বদলে দেয়। হুয়াং, তাঁর অদম্য প্রচেষ্টা এবং ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্ব দিয়ে Nvidia-কে বিশ্বের অন্যতম ধনী কোম্পানিতে পরিণত করেন, যার বাজার মূল্য এখন ২.২ ট্রিলিয়ন ডলার। কিন্তু মালাকাউস্কি এবং প্রিয়েমের অবদানও কম ছিল না, যদিও তারা সেভাবে জনসাধারণের নজরে আসেননি।

কার্টিস প্রিয়েম, Nvidia-র সেই বিস্মৃত সহ-প্রতিষ্ঠাতা, কোম্পানির শুরুর চিপ ডিজাইনগুলোর পেছনে ছিলেন মূল কারিগর। সেসময় তিনি এমন এক ডিজাইন তৈরি করেছিলেন যা পরবর্তীতে GPU (গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট)-এর রূপ নেয়, যা আজকের উন্নত AI সিস্টেম এবং আধুনিক গেমিং কনসোলগুলোর প্রাণ হিসেবে কাজ করছে। তবে প্রিয়েম কখনও প্রচারের আলোয় থাকতে চাননি। Nvidia যখন বড় হতে লাগল, তিনি ধীরে ধীরে পেছনে চলে গেলেন, শুধুমাত্র তাঁর প্রযুক্তিগত কাজে মনোযোগ দিলেন এবং জনসমক্ষে আসা থেকে বিরত থাকলেন। Nvidia-তে তখন একটি কথা প্রচলিত ছিল, কার্টিসকে কখনও ক্যামেরার সামনে নিয়ে এসো না এবং কার্টিসকে কখনও কাস্টমারের সামনেও নিয়ে এসো না।

WhatsApp Image 2024-09-01 at 16.49.19_82918a81

১৯৯৯ সালে, Nvidia যখন শেয়ার মার্কেটে আসে, প্রিয়েম এক অদ্ভুত সিদ্ধান্ত নেন। তিনি তার বেশিরভাগ শেয়ার বিক্রি করে দেন, ফলে Nvidia-র শেয়ারের আকাশছোঁয়া মূল্য বৃদ্ধির ফলে যে বিপুল সম্পদ হতে পারত, তা থেকে বঞ্চিত হন তিনি। যদি তিনি তার শেয়ার ধরে রাখতেন, তবে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের একজন হতে পারতেন এই সময়ে এসে। কিন্তু প্রিয়েম এক ভিন্ন পথ বেছে নেন, তিনি তার বেশিরভাগ সম্পদ দান করেন, বিশেষ করে তার মাতৃ প্রতিষ্ঠান Rensselaer Polytechnic Institute-এ।

আজ, Nvidia মানেই হলো আধুনিক প্রযুক্তির শিখর। এর চিপগুলো AI বিপ্লবের মাথা হিসেবে কাজ করছে, স্বচালিত গাড়ি থেকে শুরু করে উন্নত চিকিৎসা গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু এর সবকিছুর সূচনা হয়েছিল একটি সাধারণ ডেনিস রেস্তোরাঁর ছোট্ট একটি বুথে, যেখানে তিন বন্ধু মিলে দুনিয়া বদলে দেয়ার  স্বপ্ন দেখেছিলেন।

Nvidia-র অসাধারণ সফলতার কথা বলার সময়, এর এই অপ্রত্যাশিত শুরু এবং কার্টিস প্রিয়েমের নিঃশব্দ প্রতিভার কথা স্মরণ করা উচিত, যিনি আলো থেকে সরে গেলেও, ২.২ ট্রিলিয়ন ডলারের এই কোম্পানির ভিত্তি গড়ে তোলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

২২১ পঠিত ... ১৮:০২, সেপ্টেম্বর ০১, ২০২৪

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top