দেখতে দেখতেই শেষ হয়ে গেলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বৈশ্বিক আসর, বিশ্বকাপ ফুটবল! এরই মাঝে যেমন কোন ফুটবলার নিজের জাত চিনিয়েছেন নতুন করে, তেমনি অনেকেই ব্যর্থ হয়েছেন প্রত্যাশাপূরণে। গত কয়েক মৌসুমে ভালো খেলে আসা অনেক ফুটবলারের জন্যই রাশিয়া বিশ্বকাপ খুব একটা সুখকর ছিল না। আর এমন ফুটবলারদের নিয়েই eআরকি তৈরি করেছে বিশ্বকাপের 'ফ্লপ একাদশ'।
এই একাদশ বানাতে যেয়ে রীতিমত ঘাম ছুটে গেছে eআরকির ফুটবল গবেষক দলের। প্রচুর প্রতিযোগীকে পিছনে ফেলে শেষে যে ১১ জন খেলোয়াড় এবং ১ জন ম্যানেজারকে আমরা বাছাই করেছি তাই দেখে নিন আজকের এই পর্বে।
গোলকিপার : ডেভিড ডে হেয়া
বিশ্বের দুই হেভিওয়েট গোলকিপারের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ হয় এই পজিশনের জন্য। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে গত কয়েক মৌসুম মাঠ কাঁপানো গোলকিপার ডে হেয়া এই বিশ্বকাপেও কাঁপিয়েছেন, তবে নিজের পা। আর তার প্রতিপক্ষ গত এক বছর গায়েব থাকা ম্যানুয়েল নয়্যার। ইনজুরি থেকে ফিরেই নয়্যার আসেন জার্মানির গোলবারের নিচে। তবে তার পারফর্মেন্স তেমন আহামরি না হওয়ায় তাকে ফ্লপ গোলকিপার রাখার জন্য তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। তবে জার্মানির গোলবারের নিচে তাকে খুঁজে না পাওয়ায়, ফ্লপ একাদশে গোলকিপারের দায়িত্ব দেয়া হয় ডে হেয়াকে।
ডিফেন্ডার: ওটামেন্দি, রামোস, হামেলস, মিরান্ডা
এই বিশ্বকাপ গোলের বিশ্বকাপ, এই বিশ্বকাপ পেনাল্টির বিশ্বকাপ। তাই ডিফেন্ডার বাছাই করাটা আমাদের জন্য মোটেও কঠিন কিছু ছিল না। শুরুতেই ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে এই মৌসুমে সেরা ডিফেন্ডারের দায়িত্ব পালন করা ওটামেন্দির নাম আসে। বিশ্বকাপ আসতেই ওটামেন্দি যেন ফিরে গেলেন ডিফেন্সে আর্জেন্টিনার সেই পুরোনো সুনাম বজায় রাখতে। প্রতিপক্ষের আক্রমণ ভঙ্গের চেয়ে নিয়মভঙ্গেই তাকে বেশি ব্যস্ত দেখা যায়।
তার পাশেই জায়গা করে নিয়েছেন স্পেনের ডিফেন্ডার সার্জিও রামোস। রামোস এবং পিকে দু’জনই এই পজিশনের যোগ্য দাবীদার হওয়া সত্বেও শুধুমাত্র শারীরিক শক্তির জোরে রামোস এই পজিশন লুফে নেন। এতটুকু বলা যেতেই পারে, স্পেনের আক্রমণভাগ যদি এই বিশ্বকাপে এতো ঝাঝালো না হতো, তবে জার্মানির সাথে সাথে স্পেনকেও প্রথম রাউন্ডেই বাড়ি ফেরার টিকেট কাটতে হতো।
ডিফেন্সের তৃতীয় সংযোজন জার্মানির ম্যাটস হামেলস। তিনি এই পজিশনে কেন, তা নিশ্চই আর বলার কোন প্রয়োজন নেই। জার্মানির মিডফিল্ড এই বিশ্বকাপে তুলনামূলকভাবে ভালো খেলার পরেও ডিফেন্সের ভুলে গোল খেয়ে বাদ পড়লো, যার দোষ পরে অনেকাংশেই হামেলসের উপর। বাকি একজন ডিফেন্ডার ব্রাজিলীয় খেলোয়ার মিরান্ডা। যদিও ব্রাজিল তাদের ভালো অ্যাটাক ও ডিফেন্সের কারণে বিশ্বকাপে অন্তত কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত টিকে ছিল! তবে মার্কুইনহোসকে একাদশে ঢোকা থেকে আটকে রাখতে মিরান্ডা প্রথম ম্যাচে এতই ব্যস্ত ছিলেন যে, তিনি প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে আটকে রাখার কথা বেমালুম ভুলে যান। তার ভুলেই সুইজারল্যান্ড গোল দিয়ে জয়বঞ্চিত করে ব্রাজিলকে।
মিডফিল্ড: মুলার, ওজিল, অ্যাসেনসিও
মিডফিল্ডার খুঁজতে গিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় থমাস মুলারকে নির্বাচিত করা হয়। গত দুই বিশ্বকাপে জার্মানির হয়ে গোলের পর গোল দেয়া মুলার এই বিশ্বকাপে জার্মানির হয়ে কোন গোলই করতে পারেননি। ফলে অকালেই নেইমারের মতন ঝরে পড়ে যায় জার্মানি। মিডফিল্ডে মুলারের সঙ্গী হিসেবে তারই স্বদেশী মেসুত ওজিল ছিলেন আমাদের পছন্দ। তিনিও মাঝমাঠে নিজ দলের হয়ে কোন ভূমিকা রাখতে পারেননি।
আর তিন নাম্বারে আছেন অ্যাসেনসিও। তার ফ্লপ হবার পিছনে বোধহয় তার নিজের চেয়েও দলের ম্যানেজারের দোষ বেশি। কোন ম্যাচেই তাকে প্রথম একাদশে রাখা হয়নি। কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে সুপার সাব এই তরুণ বদলি হয়ে নেমে তেমন কোন সুবিধা করতে পারছেন না।
ফরওয়ার্ড: সালাহ, ওয়ের্নার, লেওয়ানডস্কি
সালাহ, গত দুই বছর পৃথিবীর সবচেয়ে আলোচিত ফুটবলার। নিজ কাঁধে মিশরকে বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব পার করিয়েছেন। তবে চ্যাম্পিয়নস লিগে কাঁধে ব্যথা পাওয়ায় বিশ্বকাপে আর নিজের কাঁধে রাখতে পারেননি নিজের দেশকে। ফলে নিজে দুই গোল দিলেও বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হয় তার দলকে।
আরেক ফরোয়ার্ড ওয়ের্নার এই দলবদলের বাজারে ঝড় তুলবেন বলেই মনে করা হয়। তবে সেই কথার কোন বাস্তব প্রতিফলন এই বিশ্বকাপে তার কাছে পাওয়া যায়নি। তিন ম্যাচে কোন গোল নেই ওয়ের্নারের নামের পাশে। তাই অ্যাটাকে সালাহর পাশের জায়গাটি এই জার্মানের জন্যই বরাদ্দ।
তাহলে ওয়ের্নারের পাশের জায়গা? তা আমরা রেখে দিয়েছি পোলিশ স্ট্রাইকার রবার্ট লেওয়ানডস্কির জন্য। রিয়াল মাদ্রিদকে এক ম্যাচে চার গোল দিয়েই আলোচনায় এসেছিলেন ‘লণ্ডভণ্ডস্কি’। আর এই পারফর্মেন্স তিনি বজায় রাখেন প্রত্যেক বছর, বায়ার্নের হয়ে। তবে এই বিশ্বকাপে এই খেলোয়ার ছিলেন সম্পুর্ণ অনুজ্জ্বল।
ম্যানেজার: জোয়াকিম লো
এই দলের ম্যানেজার ঠিক করতে আমাদের ঘাম ছুটে গিয়েছিল। অনেক দরখাস্ত জমা পড়লেও একেবারে শেষে টিকে ছিলেন শুধু হোর্হে সাম্পাওলি আর জোয়াকিম লো।
সেভিয়া ও চিলির হয়ে দুর্দান্ত সব খেলা উপহার দিয়ে সাম্পাওলি অনেকটা বিখ্যাত হয়েই আর্জেন্টিনার দায়িত্ব নেন এবারের বিশ্বকাপে। কিন্তু এত তারকা খেলোয়ার দলে রাখার পরেও তার বাজে ট্যাক্টিক্সের কারনে বেশ ধুকতে ধুকতে গ্রুপ পর্ব অতিক্রম করে আর্জেন্টিনা। তবে সাম্পাওলির এ সব সাফল্যও ছাপিয়ে যান জার্মান কোচ জোয়াকিম লো। তার দৃঢ় মনোবল ট্যাকটিসে ভর করে জার্মান ঘরের ছেলেরা খুব দ্রুতই ঘরে ফিরে যেতে সক্ষম হয়।