শিবব্রত ও শরিয়তের ইউটোপিয়া

১১৬ পঠিত ... ১৭:৩৭, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০২৪

33

অখিল দাস ও মকসুদ আলী শৈশব থেকে একসঙ্গে বড় হয়েছে। পাটগাঁতি বাজারে পাশাপাশি দোকান তাদের। দুই বন্ধু কুটুর কুটুর করে সারাদিন সুখ দুঃখের আলাপ করতে থাকে। তাদের ছেলেদুটি শিবব্রত দাস ও শরিয়ত আলী ঢাকায় পড়তে গিয়ে দুই আধ্যাত্মক গুরুর পাল্লায় পড়ে যায়।

শিবব্রতের গুরু কট্টর হিন্দুত্ববাদের চিন্তাকামান আর শরিয়তের গুরু কট্টর ইসলামপন্থার চিন্তাকামান। কিন্তু তারা দুজন রবীন্দ্রনাথ ও রুমীর ভং ধরে সংস্কৃতি মামা সেজে আছেন।

শিবব্রত পেকে উঠতে থাকে অখণ্ড ভারতের স্বপ্ন নিয়ে। শরিয়ত ঝুনা হতে থাকে অটোমান সাম্রাজ্যের স্বপ্ন লালন করে। চিন্তাজগতে শিবব্রত কলকাতার জমিদার হয়ে ওঠে; আর শরিয়ত হয়ে ওঠে ইস্তাম্বুলের জমিদার। একজনের আছে মোদি; আরেকজনের এরদোয়ান। শিবব্রত তাই হায়া সোফিয়া হায়া সোফিয়া করতে থাকলে শরিয়ত তখন হায় বাবরি মসজিদ হায় বাবরি মসজিদ করতে থাকে।

অখিল দাস একবার ছেলের ভাবভঙ্গী দেখে বলে, ওরে শিবু ঢাকায় গিয়া তোর কী হইছেরে, সাপের পাঁচ পা দেখিছু নাকি! মকসুদ আলী ছেলেকে বকা দেয়, অত উইড়ো না শরু; ধপাস কইরা পইড়া যাবু।

কিন্তু শিবব্রতের নতুন বাপ তার দীক্ষাগুরু; যার নিজের ছেলেমেয়ে বিদেশে পড়ে; আর শরিয়তের নতুন বাপ দীক্ষাগুরুর ছেলেমেয়ে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে। তাদের যত মতাদর্শিক পরীক্ষা নিরীক্ষা অন্যের ছেলে-মেয়ে নিয়ে।

জুলাই বিপ্লবের পুরো সময়টা শিবব্রত হাসিনার হত্যাযজ্ঞকে সমর্থন করে বলে, মার হরকাতুল জিহাদ গুলিরে মার। আর ৫ আগস্ট হাসিনা পালালে শরিয়ত চেঁচায়, মার র এর এজেন্টগুলিরে মার।

হাসিনার রেখে যাওয়া পোড়োবাড়ি রিক্ত মাঠে যখন শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হিমশিম খাচ্ছে অন্তর্বতীকালীন সরকার; তখন শিবব্রতের দীক্ষাগুরু ব্যস্ত অখণ্ড ভারত প্রকল্প জোড়া লাগানোর কাজে। আর শরিয়তের দীক্ষাগুরু নতুন জোশ পেয়ে খেলাফত খেলাফত বলে মূর্ছা যায়।

শিবব্রত কল্পনায় বৃটিশ আমলের হিন্দু জমিদারের ভঙ্গিতে বলতে থাকে, নিম্নবর্গের ছাগলগুলি। শরিয়ত তখন অটোমান সাম্রাজ্যের আর্তুগুলের ভঙ্গিতে বলে, দালাল হনুমানগুলি।

হাসিনার ছেলে হিন্দিভাষায় পাগলামি করে যাবার কিছুকাল পরে গোলাম আজমের ছেলে প্রায় উর্দু ভাষায় পাগলামি শুরু করে দেয়। এক মাস্টারমাইন্ডের ছেলের আছে ট্যাটু, আরেক মাস্টারমাইন্ডের ছেলের আছে গামছা।

মেহনতী মানুষকে কাজ করে খেতে হয়। কিন্তু শিবব্রত ও শরিয়তের বাপের হোটেল ও দীক্ষাগুরুর হোটেলে খেয়ে অনেক চর্বি। শিবব্রতের ধ্যানজ্ঞান তাই সংস্কৃতিকে ইসলামমুক্ত করা; আর শরিয়তের কাজ সংস্কৃতিকে হিন্দুমুক্ত করা। বিরাট সব সংস্কৃতির তালেবর তারা।

অথচ অখিল দাস আর মকসুদ আলীর জীবন একটি দিনের জন্যও বদলায়নি; বদলায়নি বন্ধুত্ব। তারা দুজনে চিনি ছাড়া চা খেতে খেতে টিভি দেখে আর হাসে, হাসিনার প্রেস কনফারেন্সটা বন্ধ হইয়া টিভির সব মজাই চইলা গেছে গা!

 

১১৬ পঠিত ... ১৭:৩৭, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০২৪

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top