জ্বি, আইসিটিলীগ! এটি eআরকির কোনো 'সঙবাদ' নয়, এটি একটি সত্যিকারের সংগঠন। এই সংগঠনের একজন কর্মী জনাব মাহবুবুর রহমানের ভিজিটিং কার্ডের একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পরই জানা যায় এই 'ডিজিটাল লীগ' সম্পর্কে।
আওয়ামী লীগের এই জয়জয়াকারের যুগে এর আগে আওয়ামী শিশু লীগ, শিশু কিশোর লীগ, আওয়ামী তরুণ লীগসহ বেশ কিছু অযাচিত লীগের দর্শন পাওয়া গেছে। অবস্থা কিছুটা এমন যে এখন 'ইংলিশ প্রিমিয়ারলীগ' শুনলেও হঠাৎ হঠাৎ আওয়ামী লীগের নামধারী কোনো সংগঠন বলেই মনে হয়। এই ধারাতেই নতুন সংযোজন হলো 'আইসিটিলীগ'!
eআরকির পক্ষ থেকে প্রথমে ভিজিটিং কার্ডে উল্লিখিত মাহবুবুর রহমানের নাম্বারে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। নাম্বার বন্ধ পাওয়া গেলে আমাদের প্রতিনিধি ফোন করেন কার্ডে লেখা আরেকটি নাম্বারে অর্থাৎ 'আইসিটিলীগ'-এর ঢাকা অফিসে। তার সঙ্গে কথোপকথনটা ছিল এমন:
eআরকি: এইটা কি জয় ডিজিটাল মাতা শেখ হাসিনা আইসিটিলীগের ঢাকা অফিস? জনৈক ব্যক্তি: জ্বি। eআরকি: ভালো আছেন আপনি? জনৈক: কে বলছিলেন? eআরকি: আমি ফেসবুকে আপনাদের ভিজিটিং কার্ডটা পেলাম। তাই এর সম্বন্ধে জানতে ফোন দিয়েছি। এই আইসিটিলীগের কাজ কী? জনৈক: কাজটা ভাই রাজনৈতিক! eআরকি: কী কাজ? জনৈক: রাজনৈতিক! রাজনীতি করা!! eআরকি : আচ্ছা, আচ্ছা। তা আপনি এর সাথে কবে থেকে জড়িত আছেন? জনৈক : হুম!!!! eআরকি: মানে কবে থেকে এর সঙ্গে জড়িত আপনি। জনৈক: অনেকদিন ধরে! eআরকি: এটা কি সকল জেলা শহরে আছে? জনৈক: সব জেলায় নাই, বিভিন্ন জেলায় আছে, বিশ ত্রিশটা জেলায় আছে...! eআরকি: মানে মেইন বিভাগগুলো আর বড় জেলাগুলোয় আছে তাইতো? জনৈক: হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ! eআরকি: এটা কি ছাত্রদের জন্য? জনৈক : না না না, সবাই...যে কেউ ইচ্ছা করলে এখানে যোগ দিতে পারে। eআরকি: আইসিটিলীগের এই যে পলিটিক্সটা, এইটা কি ছাত্ররাজনীতি হিসেবে শুরু হয়েছে? জনৈক: না না, আইটি সেক্টর নিয়ে যারা কাজ করে বা মোটামুটি বুঝে...! eআরকি: গ্রাফিক্স ডিজাইন, প্রোগ্রামিং বা এ ধরনের কাজগুলো? জনৈক: গ্রাফিক্স ডিজাইন অথবা মনে করেন কিছুই জানে না কিন্তু আইসিটি সম্পর্কে ইন্টারেস্টেড জানার জন্য, আগ্রহ আছে বা জানতে চায়...! eআরকি : তাহলে এইটা দিয়ে রাজনীতি কীভাবে করবেন? মানে আইটি দিয়ে রাজনীতি কীভাবে হবে? জনৈক: হয় রে ভাই! eআরকি: হয়? জনৈক: হ্যাঁ! eআরকি: আপনি কত সাল থেকে এটার সাথে জড়িত? জনৈক: এইটা তো শুরুই হইছে অক্টোবর নভেম্বরের দিকে। পুরা বাংলাদেশকে ডিজিটালাইজড করা এর উদ্দেশ্য। eআরকি: ওওওও আচ্ছা। এটার নাম হচ্ছে জয় শেখ হাসিনা ডিজিটাল মাতা আইসিটিলীগ... এই নাম দিয়েই প্রথম থেকে শুরু হয়েছে? জনৈক: হ্যাঁ। (একটু সময় নিয়ে) eআরকি: আচ্ছা, আপনাদের অফিসটা কোথায় ঢাকাতে? জনৈক: কুড়িল, বসুন্ধরা। eআরকি: এই সংগঠনে যোগ দিতে হলে কী করতে হবে, মানে যোগ্যতা?
...কথোপকথনের এই পর্যায়ে ভদ্রলোক ফোন রেখে দেন। তাই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার এই মহান কাজের দায়িত্ব তাদের ঠিক কে দিয়েছে এবং তারা তা কীভাবে বাস্তবায়ন করছেন, সে সম্পর্কে কিছু তাৎক্ষনিক জানা গেল না।
এরপর এই ভিজিটিং কার্ডের প্রকৃত মালিক জনাব মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে বেশ কয়েকবার ফোন করার পর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়।
eআরকি: হ্যালো, মাহবুব বলছেন? মাহবুব: জ্বি। eআরকি: আচ্ছা, আপনি কি আইসিটিলীগের সাথে জড়িত? মাহবুব: ভাই এই আইসিটিলীগের আমি কিছুই না (খুবই বিরক্ত এবং ক্লান্ত ভঙ্গীতে)...ঢাকার একটা গ্রুপ পাশ করাইতে চাইছিল এই দলটাকে। eআরকি: আচ্ছা আচ্ছা। মাহবুব: কিন্তু এইটা পাশ করাইতে তারা ব্যর্থ হইছে...! eআরকি: আচ্ছা মানে এটার কোনো নিবন্ধন নাই বা কোনো অনুমতি নাই? মাহবুব: না না, এটার কোনো নিবন্ধন নাই বা অনুমতি নাই, তারা চেষ্টা করতেছে, কিন্তু তারা পারবে এইটা আমার বিশ্বাস হয় না! eআরকি: আচ্ছা, এদের কাজ কী? মানে এরা আসলে কী করতে চায়? মাহবুব: এরা আসলে সফটওয়্যারের কাজ করতে চায়, মানে স্কুল ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার, কলেজ ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার...! eআরকি: এটার সাথে আওয়ামী লীগের কী সম্পর্ক? মাহবুব: না, এরা আসলে ব্যবসায়িকভাবে ডেভেলপ করার জন্য করতে চাইছিল, এতে তারা ব্যর্থ হইছে! eআরকি: আপনি এটার সাথে কীভাবে জড়িত হলেন? মাহবুব: আমি এক মাস এদের সাথে কাজ করছি, আমাকে যশোরে একটা কমিটি করে দিতে বলেছিল, কমিটি করে দিয়েছি। এক মাস বেতন দিয়েছে। এরপর আর বেতন টেতন দেয় নাই! বেকার লোকের তো আর অভাব নাই, যদি সার্কুলার দেয় বেতন দেব, এই কাজ করো, ঝাঁপায়ে পড়ার জন্য বহুত লোক আছে...এই হচ্ছে বিষয়! eআরকি: মানে এটার সঙ্গে যে লীগের নাম আছে, এটা জাস্ট লীগের নাম ভাঙ্গায়ে খাওয়ার জন্য, এমনই তো? মাহবুব: হ্যাঁ, এইটা তারা পাশ করাইতে পারে নাই... যেহেতু পাশ করাইতে পারে নাই তাই এ ব্যাপারে আমার নো ইন্টারেস্ট...এখন তো দলীয় ভাবে সিদ্ধান্ত দিয়ে দিয়েছে, যে সাতটা বা আটটা সংগঠন আছে, এর বাইরে কিছু থাকবে না, মানে এরা চেষ্টা করছিল পারে নাই, মনে হয় না যে পারবে...!
এই দফায় ফোন রেখে দেয়ার পর ঢাকা অফিসে আরেকবার ফোন দেয়া হয়। যিনি ফোন ধরলেন তিনি জানালেন, এখন তিনি ব্যস্ত আছেন, 'পরে ফোন দেন' এটুকু বলে ওপাশ থেকে লাইন কেটে দেয়া হলো। এর কিছুক্ষণ পর মাহবুবুর রহমান নিজেই আবারও ফোন দেন:
মাহবুব: ভাই, আমি ঢাকার হেড অফিসে আরেকবার ফোন দিয়েছিলাম, বললাম যে আমরা তো এক মাস কাজ করেছি, এখন বিড়ম্বনার শিকার হই, মানুষজন ফোন দেয়। তারা বলল যে আমরা পাশ করানোর চেষ্টা করতেছি! এখন স্কুল ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার, কলেজ ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার এইগুলার ওপর ওরা কাজ করে...! : কিন্তু আওয়ামী লীগ থেকে তো কোনো ধরণের অনুমতি এখনও পাওয়া যায় নি? : না না, এখনও পর্যন্ত কোনো সম্পৃক্ততা নাই।