মুক্তিযোদ্ধার বর্ণনায় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ৮টি মজার ঘটনা

১০৪৬২ পঠিত ... ০১:০৩, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৭

মুক্তিযুদ্ধের কথা উঠলেই সবার আগে মনে পড়ে কতগুলো শব্দ—যেমন: হত্যা, খুন, ধর্ষণ, গোলাগুলি, অত্যাচার। তবে এত কিছুর পরও সে সময় ঘটেছিল উল্লেখ করার মতো বেশ কিছু মজার ঘটনা। আর সেগুলোরই কয়েকটি আমাদের বলেছেন বীরবিক্রম মেজর জেনারেল (অব.) আমীন আহম্মেদ চৌধুরী।

অলংকরণ: রাকিব রাজ্জাক

৩.
মিত্র বাহিনীর যৌথ ট্রেনিং চলছে। ট্রেনিংয়ের সময় বাঙালিরা পাথরওয়ালা ভাত খেতে পারত না। এটা দেখে এক ইন্ডিয়ান সেনা বলছিলেন—
—‘তোমরা তাহলে কী খাও?’
মুক্তিযোদ্ধা : আমরা আমাদের দেশে বাসমতি চালের ভাত খাই।
‘আয় হায়! তাহলে তোমরা যুদ্ধ করছ কেন? আমরা তো এই পাথরওয়ালা ভাত খেয়েও চুপচাপ আছি।’

৪.
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন জেনারেল ওসমানী একবার তাঁর গোঁফ কেটে ফেলেছিলেন। গোঁফ কাটতে যতক্ষণ, ঝামেলা লাগতে একটুও দেরি হয়নি। তাঁকে সবাই বলতে পাগল, আপনি যে ওসমানী এর প্রমাণ কী? আপনার গোঁফটাই তো আসল জিনিস, আপনি নিশ্চয়ই ছদ্মবেশী কেউ! শেষতক ওসমানীর অধীন এক অফিসার এসে তাঁকে শনাক্ত করেছিলেন বলে ঘটনাটা আর বেশি দূর এগোয়নি।

৫.
এক ইন্ডিয়ান আর্মির (মিত্র বাহিনী) বাসায় পার্টি হচ্ছে। সে সময় একজন কর্নেল তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ড্যান্স পার্টি দেখছেন। এমন সময় অবিবাহিত এক অফিসার এসে মহিলাকে বলছেন—
‘ইউ আর সো মাচ বিউটিফুল!’
এরপর তিনি কর্নেলকে বলছেন—
‘এসো, আমরা ড্রিংক করি আর তোমার বউকে ছেড়ে দাও, সবার সঙ্গে নাচুক। সঙ্গে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছ কেন?’
কর্নেল: তুমি আগে বিয়ে করো, তারপর তোমার বউকে সবার সঙ্গে নাচতে দিয়ো। দেখব তখন কেমন পার তুমি। আমি গেলাম।

অলংকরণ : রাকিব রাজ্জাক

৬.
জেনারেল ওসমানীর কড়া নির্দেশ ছিল, রাত ১০টার পর ক্যাম্পে ঢুকতে পাসওয়ার্ড লাগবে (ভয়েস পাসওয়ার্ড)। সে সময় একদিন ওসমানীর বেশ কয়েকজন অধীনস্ত সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট লুকিয়ে গিয়েছিলেন সিনেমা দেখতে। স্বভাবতই ফিরতে রাত হয়েছিল। এত রাতে গার্ড তাঁদের ক্যাম্পে ঢুকতে দিচ্ছিল না। গার্ড তাঁদের যা-ই জিজ্ঞেস করে, তাঁরা কোনো উত্তর দিতে পারছিলেন না। কারণ এরই মধ্যে সিনেমার আনন্দে সবাই পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন। শেষমেশ পাসওয়ার্ড মনে করে তাঁদের ক্যাম্পে ঢুকতে ঢুকতে রাত তখন আড়াইটা।

৭.
এক পাকিস্তানি সেনা আরেক সেনাকে জিজ্ঞেস করছে—
‘তুমি কি জানো Democracy কী?’
আগে বলো, তুমি কি লাহোর থেকে মুলতান যেতে পারবে?’
‘হ্যাঁ, পারব, অবশ্যই পারব।’
‘এটাই হচ্ছে Democracy.’

অলংকরণ: রাকিব রাজ্জাক

৮.
এবার শোনাব এক কিশোর মুক্তিযোদ্ধার কথা। ছেলেটার বয়স ছিল ১৩ কি ১৪ বছর। তো সেই ছেলেটা যুদ্ধের ময়দানে একদিন এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটিয়ে ফেলল। তুমুল যুদ্ধ চলছে। পাকিস্তানি বাহিনী পরাস্ত। বেঁচে আছে মাত্র দুজন মিলিটারি। তাদের মধ্যে একজন ভয়াবহ গুলিবিদ্ধ, বড়জোড় আর আধঘণ্টা বাঁচতে পারে। অন্যজনের এক পা গুলিতে ঝাঁজরা। এমন সময় হঠাৎ দাঁড়িয়ে রাইফেল তাক করে দাঁড়ানো সেই ১৩-১৪ বছরের ছেলেটি। কী অদ্ভুত, সে গুলি করছে না। ট্রিগারে তার আঙুল শক্ত করে চেপে ধরা, কিন্তু সে গুলি করছে না। সবাই বিস্মিত, কোথায় গেল ছেলেটার রাগ। এটা সেই ছেলে তো, যে কি না তার পুরো পরিবারের একমাত্র জীবিত ব্যক্তি। যে কিনা সব পাকিস্তানিকে একাই মেরে ফেলবে বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। যে কিনা আজকেও সবার সামনে থেকেই ফাইট করছিল। নাহ, কিছুই মিলছে না। এদিকে পায়ে গুলি লাগা আর্মিটি ধীরে ধীরে ক্রল করে এগিয়ে যায় মুমূর্ষু আর্মিটির কাছে। রীতিমতো আরেকটা যুদ্ধ করে বহু কষ্ট করে কাঁধে তুলে নেয় তাকে। তার মনেও ঝড় চলছে। যেকোনো মুহূর্তে গুলি করে দিতে পারে এ বাচ্চা ছেলেটা। কিন্তু কিছুই করার নেই। যদি বাচ্চাটার মনে একটু দয়া হয়, যদি সে গুলি না করে, তাহলে হয়তো এ যাত্রায় সে বেঁচে যাবে। সবাইকে হতবাক করে, যতক্ষণ না পাকিস্তানি আর্মিটি তার সহযোদ্ধাকে কাঁধে করে হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে চোখের আড়াল হলো, ততক্ষণ ছেলেটা রাইফেল তাক করে রাখল, কিন্তু কোনো নড়াচড়া বা গুলি করল না। স্বভাবতই এমন ঘটনার পর সবাই তাকে গুলি না ছোড়ার কারণ জানতে চাইল।
উত্তর এল, ‘কইতারি না কেন গুলি করি নাই।’
যুদ্ধের ময়দানে শত্রুর বিপক্ষে লড়াই করা এক অকুতোভয় যোদ্ধার মুখ থেকে কথাটা শুনতে সবার সেদিন কষ্টই হয়েছিল।

১০৪৬২ পঠিত ... ০১:০৩, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৭

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top