সকাল থেকে বুকের বাম পাশটা ব্যথা করছে মাহাথির মোহাম্মদের। প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন আজ আট বছর ধরে। আগেও বেশ কয়েকবার এমন হয়েছে।
শ্বাস নিতেও বেশ কষ্ট হচ্ছে। আগে ব্যাথাটাকে গুরুত্ব না দিলেও আজকের ব্যথাটা ক্রমশ বাড়ছে। শেষ পর্যন্ত ব্যথা এতটাই অসহ্য হয়ে উঠল যে তাকে দ্রুত কুয়ালালামপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। সারা মালয়েশিয়ায় এখানেই আছে হৃদরোগের সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা।
পরীক্ষা করা হলো। ধরা পড়লো চর্বি জমে হৃদযন্ত্রে বন্ধ হয়ে গেছে তিনটি শিরা। ডাক্তারি ভাষায় যাকে বলা হয় ব্লক। করতে হবে এনজিওপ্লাস্টি (শিরার মধ্যে বেলুন ফুলিয়ে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করা)। কিন্তু হাসপাতালে নেই এনজিওপ্লাস্টি করার সুবিধা। যেতে হবে পাশের দেশ সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে।
কিন্তু মাহাথির মোহাম্মদকে এ কথা জানাতেই বেঁকে বসলেন তিনি। এমনিতেই সিঙ্গাপুরের সাথে খাবার পানি এবং একটা দ্বীপের মালিকানা নিয়ে বিরোধ তার ওপর প্রবল আত্মসম্মানবোধ।
মাহাথির মোহাম্মদ ডাক্তারদের বললেন, কোন দেশের প্রধানমন্ত্রীর অন্য দেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার অর্থই হলো সেই দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা একদমই ভালো না। আমি তো অন্য দেশকে এটা জানাতে চাই না। আপনারা বলুন কত দিনের ভিতর এনজিওপ্লাস্টির প্রযুক্তি দেশে আনতে পারবেন? বিদেশে গিয়ে আমি চিকিৎসা করাতে পারলেও আমার জনগণের তো সে সামর্থ নেই। প্রধানমন্ত্রী হয়ে আমি এটা পারব না। প্রযুক্তি দেশে আনুন। সেই প্রযুক্তিতেই আমার চিকিৎসা হবে।
ডাক্তাররা অনেকবার তাকে বোঝালেন। কিন্তু মাহাথির মোহাম্মদ তার সিদ্ধান্তে অটল। এর কিছুদিন পর এনজিওপ্লাস্টি না করায় অবস্থা আরও খারাপ হলো মাহাথিরের। হার্ট অ্যাটাক হলো তার। উপায়ন্তর না দেখে মালয়েশিয়ার চিকিৎসকরা করলেন হার্ট বাইপাস সার্জারী। সুস্থ হলেন মাহাথির মোহাম্মদ।
এই ঘটনারও তিন বছর পর মাহাথির মোহাম্মদ এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় স্থাপিত হয়েছিলো ন্যাশনাল হার্ট ইনস্টিটিউট মালয়েশিয়া। আরও দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল দেশপ্রেমী এ মানুষটির। প্রতিবারই তিনি চিকিৎসা নিয়েছিলেন তার নিজের প্রতিষ্ঠিত হার্ট ফাউন্ডেশনে।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন