যেও না ভিসি… ও...ও... যেও না ভিসি

২০৮ পঠিত ... ১৭:১৪, আগস্ট ২৭, ২০২৪

20

শিক্ষাগুরু হে বিদায়ী ভিসি কূল,

শিক্ষাঙ্গনে তোমরা ছিলে আঁধার দিশারী, শিরভগ্নতায় তোমরা বরেন্য, তোমরা ছিলে এই শতকের হাউন আঙ্কেল।

 

হে ভণ্ড শিক্ষক মণ্ডলী,

একবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে মানবতা তখন কেবল জীর্ণতার আবরণ ভেঙে শিক্ষার আলোয় দীক্ষিত হতে শুরু করেছে। এমনই এক ক্রান্তি কালে দেশের সেরা সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলে তোমরা। তোমাদের কাছে সবার আশা ছিল আকাশ চুম্বি, সেটি তোমরা পূরণও করেছ। বিশ্ববিদ্যালয়ে চাষ করেছ গণরুম, গেস্টরুম, ছাত্রলীগ, হেলমেট, হকিস্টিক, সিঙ্গারা, নকল গবেষণাপত্র ও বিল্ডিং। ফলনও হয়েছে বাম্পার। চাষ করেই থেমে যাওনি, ছাত্রলীগ যেন নিজেদের মতো করে বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে পারে— তোমরা সেটিও নিশ্চিত করেছ পিও অভিভাবকের মতো।

 

হে উন্নয়নের মহাপ্রেমিক,

সবুজে ঘেরা বিশ্ববিদ্যালয় এগুলা এক সময় জঙ্গলে ভরপুর হয়ে যাচ্ছিল। হলের ভেতরে সাপ, রাস্তাঘাটে বাঘ, ভাল্লুক আর সিংহের হুংকারে এক সময় কেউই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাচ্ছিল না। সেই সময় আর কেউ নয়, তোমরা এগিয়ে এসেছিলে। শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য বিল্ডিং কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ তা যেমন জেনেছি তেমনি তোমরা জঙ্গল সাফ করে বানিয়েছ রঙ বে রঙের বিল্ডিং।

 

হে অদম্য চাটুকার,

চাটুকারিতায় তোমরা ছিলে বিশ্ব মানের। সপ্তম আশ্চর্যকে যদি কখনও বর্ধিত করার সুযোগ পাওয়া যায় সেখানে তোমাদের জিহবাও অন্তর্ভুক্ত হবে। তোমরা শিক্ষক হয়েও ছাত্রদের দিয়েছ অবাধ সম্মান, নিজের ছেলের মতো স্নেহ করেছ, শিক্ষক হয়েও ছাত্রলীগের পা চাটায় তোমাদের জিভ ছিল বলাকা ব্লেডের চেয়েও বেশি ধারাল।

 

হে মহা দলবাজ,

অসাধারণ এক শিক্ষা নীতি ছিল আপনাদের, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার বিকাশের চাইতে আপনাদের কনসার্ন ছিল শিক্ষকদে মধ্যে দলাদলি। ভিসি হওয়ার পাশাপাশি তোমরা হতে পেরেছিলে আওয়ামীলীগের নেতা, কেউ কেউ ক্যাডার। শিক্ষক ও ছাত্রদের মধ্যে লেজুর ভিত্তিক রাজনৈতিক বিকাশে রেখেছিলে কান্ডারীর ভূমিকা। তোমাদের আশেপাশে কোথাও সততার মৃদু আলোর ঝলক দেখা গেলেই নেভানোর জন্য পাঠাতে নিজ হাতে পোষা হেলমেট বাহিনীকে। তাই তো আজ বলতে বাধা নেই,

উত্তাল তরঙ্গে তমি বৈঠাহীন তরী,

কণ্টকাকীর্ণ পথ দিচ্ছ পাড়ি।

তুমি মিথ্যা কান্ডারী,

তুমি আধার দিশারী।

হে কালের চাটুকার,

উদয় অস্তের আবর্তনে, মুর্খতার প্রবল আকর্ষণে তোমরা থেকেছ ভারী।

সন্তানসম হৃদয়ে ক্ষতের সৃষ্টি করে কত রক্ত ঝড়িয়েছ বারে বারে,

চিত্তে তব কত ব্যথা, কত যাতনা দিয়ে তোমরা করেছ অপরাধ শত।

হে কালের চাটুকার,

আজি এ বিদায় ক্ষণে, মানসপটে সে স্মৃতি ভেসে ওঠে বারে বার।

 

হে আলস্যের রাজপুত্র,

তোমরা লাঞ্চের আগেও অলসতা করতে, অলসতা করতে লাঞ্চের পরেও। অলিম্পিকে অলসতা নামক কোনো ইভেন্ট থাকলে চোখ বন্ধ করে তোমরাই ছিনিয়ে নিতে শত শত সোনা।

 

হে ছাত্রলীগের গুন্ডাদের আশ্রয়স্থল,

তোমরা ছিলে দয়ালু, অনন্য। নিজেদের সন্তান তুল্য ছাত্রলীগের সোনার ছেলেদের রক্ষায় তোমরা নিজেদের সব বিলিয়ে দিয়েছ। তাদেরকে দিয়েছিলে হলের মধ্যে সাধারণ ছাত্রদের উপর আধিপত্য, সৎ শিক্ষকদের মনের মধ্যে ভয় ঢুকানোর জন্য দিয়েছিলে তাদের অবাধ স্বাধীনতা। ছাত্রলীগ তোমাদের এই অবদান কখনোই ভুলবে না।

 

হে দয়ালু,

তোমরা ছিলে পরম দয়ালু, স্বজনপ্রীতিতে তোমরা ছিলে হাতেম তাই। ভিসি হওয়ার পরও ভুলে যাওনি আত্মীয়দের। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি সেক্টরে যত পেরেছ তত আত্মীয় ঢুকিয়েছ। স্বজনপ্রীতিতে তোমরা সারাবিশ্বের কাছে উদাহরণ হয়ে থাকবে।

 

হে বোবা,

দেশে ঘটেছে কতকিছু। ৩টি বিনাভোটের নির্বাচন, দুর্নীতি, টাকা পাচার, ঋণখেলাপি, গুম, খুন— তোমরা ছিলে বোবা। কথা বলোনি। পৃথিবীর ইতিহাসে তোমাদের আগে আর কোনো বোবা একটি দেশের সরকারের এত উপকার করতে পারেনি।

২০৮ পঠিত ... ১৭:১৪, আগস্ট ২৭, ২০২৪

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top