রাবেয়া ও ললিতার আইডেন্টিটি ক্রাইসিস

২৪৭ পঠিত ... ১৮:০১, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২৪

20

বাসার বুয়া, ড্রাইভার, চৌকিদারদের সর্বনিম্ন পারিশ্রমিক দিয়ে বেগম সাহেবা ও চৌধুরাণী সেজে সারাদিন ফেসবুকে কালচারাল ফাইট করে রাবেয়া ও ললিতা।

রাষ্ট্রীয় বৈঠকে জামায়াতের নেতা দাওয়াত পেতে শুরু করলে রাবেয়া ক্ষমতায়িত হয়। তখন সে লাহোরের জমিদারের বৌ-এর মতো হুকুম চাঁড়ে, পর্দা-পুশিদা করবা; মাজার হইলো শিরক; অই খবরদার তাবিজ পরবা না; রবীন্দ্রনাথ হিন্দু আছিলো, তার কবিতা পড়বা না।

ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ থাকলে ললিতা নিজেকে দেশের মালিক মনে করে। তখন সে কলকাতার জমিদারের বৌ-এর মতো আদেশ দেয়, জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের মতো কস্টিউম পইরা আইসো, রবীন্দ্র সংগীতে মাথা দোলাও। দাড়ি-টুপি দেখলেই ছাগলের মতো লাগে।

১৫ জুলাই থেকে বাংলাদেশের বৈষম্যবিরোধী ছাত্রছাত্রীরা যখন জীবন দিচ্ছে খুনে হাসিনার কোটাল পুত্রদের গুলিতে; রাবেয়া তখন খেলাফতের স্বপ্নে দিওয়ানা হয়। স্বামী আদম ব্যবসায়ী মোফাক্ষারুলের দিকে তাকিয়ে প্রগলভ হয়ে বলে, মেরা সুলতান!

ললিতা তখন অখণ্ড ভারতের স্বপ্নটা হাতছাড়া হবার ভয়ে; স্বামী গার্মেন্টস ব্যবসায়ী পথিকৃত বাতেনের দিকে তাকিয়ে বলে, রোদ ঝড় বৃষ্টিতে লেন্দুপ দর্জিকে চাই।

বাংলাদেশের ভবিষ্যত হত্যায় রাবেয়া কিংবা ললিতার কিছু এসে যায় না; তারা পড়ে থাকে তাদের কাল্পনিক সাংস্কৃতিক আধিপত্যের লড়াইয়ে।

দেশের কৃষক-শ্রমিক-মেহনতী মানুষের অধিকারের দাবি কখনও ফেসবুক আলোচনায় আসতে পারে না। কারণ রাবেয়া ও ললিতার চর্বির আলাপ শেষ হয় না।

সরকারি চাকুরে বাবার বাসায় বড় হওয়া রাবেয়া ও ললিতা শৈশবে ম্যাগালোম্যানিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। ইউনিভার্সিটিতে প্রেম করে এমন কাউকে বিয়ে করেছে যে দুই নম্বর ব্যবসা করে গুলশানে একটা ফ্ল্যাট কিনে দিতে পারবে। বিশ্রামে হত এই দুই বণিকের স্ত্রীর একজন, তুরস্কের ড্রামা সিরিয়াল দেখে, আরেকজন কলকাতার চলচ্চিত্র দেখে সৃজিত সৃজিত করে। তাদের দুজনের ধারণা তারা উভয়েই বিরাট দুই সংস্কৃতি পালোয়ান হয়েছে; এই দেশের মানুষকে সংস্কৃতি শেখানোর গুরু দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে তারা।

প্রতিদিন এপার্টমেন্টের লিফটে দেখা হলে, দুজন দুজনের সাজ পোশাক নিয়ে মনে মনে হাসে। দুজনেই পোশাক পুলিশ। একজন মনে করে স্কিন টাইট ড্রেস পরে মাথায় হিজাব পরলেই বিরাট ইসলামের তালেবর সে। আরেকজন মনে করে ব্যাকলেস ব্লাউজের সঙ্গে শাড়ি পরলেই বাঙালি সংস্কৃতির কিংবদন্তী হয়ে ওঠে সে।

আসলে দুই নম্বরি উপার্জনে বসে খেলে মস্তিষ্কে চর্বি জমে। তখন একটা অথোরিটি পেতে ইচ্ছা করে। আর বাবা-মায়ের টানাটানির সংসার থেকে এসে কলুর বলদদের জমিদারি পেয়ে গেলে তখন মাথা তো খারাপ হবেই।

আদম ব্যবসায়ী মোফাক্ষার অফিসে রিসেপশনিস্ট মেয়েটার সঙ্গে প্রগলভ হয়; আবার হঠাৎ গাড়ি থেকে নেমে লাঠি দিয়ে তরুণীকে পেটাতে পেটাতে বলে, আবাসিক এলাকায় এইসব নষ্ট মেয়ে কেন। আলফাডাঙ্গার ছাতা প্রকৌশলীর নাতি মোফাক্ষার হঠাৎ কল্পনায় ইরানের খোমেনি হয়ে ওঠে। ঐ যে শুনেছিল ইরানে বিপ্লব হাইজ্যাক করেছিল মোল্লারা। মনের মধ্যে আঁকুপাকু করে, বাংলাদেশে তেমন একটু হলে ক্ষতি কী!

গার্মেন্টস ব্যবসায়ী পথিকৃত বাতেন ইউনিভার্সিটিতে একটু সংস্কৃতি করত। ফলে এখনও সুযোগ পেলে ফোনে সংস্কৃতি করে। এক কাক নায়িকা; মানে যে কেবল একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছে; সে একটি ভিডিও কল রেকর্ড করে ব্ল্যাকমেইল করছে; আমাকে বনশ্রীর এপার্টমেন্টটা লিখে দাও; নইলে সব ফাঁস করে দেব। বাতেন সেই থেকে অসহায় হয়ে ঘুরছে। হারুনের ভাতের হোটেল তো নেই হাওরে পদ্ম পুলিশটাকে দিয়ে কাক নায়িকাকে টাইট দেয়াবে।

একাত্তরের মাস্টারমাইন্ড গোলাম আজমের ছেলেটি আয়নাঘর থেকে বেরিয়ে বায়না জুড়ে দেয়, জাতীয় সংগীত বদলাতে হবে। দেশটা তো মামার বাড়ি; এইখানে মামাবাগে গিয়ে আবদার জুড়ে দিলেই হলো। রাবেয়া তখন ফেসবুকে তার ফেভারিট কালচারাল ওয়ারের টপিক পেয়ে যায়; রবীন্দ্রনাথ হিন্দু ব্লা ব্লা ব্লা; সুতরাং আব্দুল কুদ্দুসের লেখা জাতীয় সংগীত চাই।

ঐ যে জুলাই-অগাস্ট ছাত্র-গণহত্যার মাস্টারমাইন্ড শেখ হাসিনার পালক পুত্র ও কন্যারা যারা; ২১ দিন এই মানবতাবিরোধী অপরাধকে সমর্থন করে একটু বেকায়দায় ছিল; তারা জাতীয় সংগীত ইস্যুতে আকাশের চাঁদ হাতে পেয়ে যায়। আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা; কাঁদো বাঙালি কাঁদো ইত্যাদি চর্বিত চর্বন নিয়ে জাতীয় সঙ্গীত সুরক্ষা লীগ ফেসবুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সংখ্যালঘু লীগ, ডাকাত লীগ, পনেরো আগস্ট লীগ, আনসার লীগ, রিকশা লীগ, ডাক্তার লীগ এরকম নানারুপে প্রতিবিপ্লবে কামব্যাক করার চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাবার পর; এবার জাতীয় সংগীত বাজিয়ে ফেসবুকে আগের মতো রমরমা আওয়ামী লীগের দোকান খুলতে লেগে পড়ে সহমত ভাই ও শিবব্রত দাদা।

ললিতা তখন এসে সংস্কৃতি কথা তুলে ধরে। শেখ হাসিনার ক্যাচ ওয়ার্ড রাজাকার, পাকিস্তান ইত্যাদি দিয়ে গরুর রচনা লিখে। নিজেকে আবার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের চৌধুরাণী মনে হতে থাকে তার।

লোকজন মুখ টিপে হাসে, ভালোই হইলো ফেসবুকে দুই বাতিল পার্টির কাইজ্জা শুরু হইছে। একাত্তরের খুনিদের সমর্থক একদল যারা লীগের স্বৈরশাসনের কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারে নাই; আইছে জাতীয় সংগীত বদলাইতে। আর একদল দুই হাজার চব্বিশের খুনের সমর্থক; আইছে সংগীত আর দেশপ্রেম নিয়া আলাপ করতে। পিছা মারি অগো দুইডারে।

 

২৪৭ পঠিত ... ১৮:০১, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২৪

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top