এক্কেবারেই খেয়ে-দেয়ে কাজ ছিল না যাদের

১৪২ পঠিত ... ১৭:২১, মে ২০, ২০২৪

WhatsApp Image 2024-05-20 at 17.19.26_ecc53c73

আপনি যদি বলেন, আমি বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিতে চাই। সমুদ্রে সাঁতরে টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন যাবো, আপনি যদি আরও বলেন, আপনি সাইকেল চালিয়ে সারা বাংলাদেশ ঘুরতে চান, আপনি যদি আরও বলেন, আপনি এভারেস্ট নামক পৃথিবীর সর্বোচ্চ পাহাড়টিতে উঠতে চান—বাংলাদেশে আপনাকে সবাই একসুরে একটা কথাই বলবে, ‘খায়া দায়া কোনো কাজ নাই?’

পৃথিবীতে অসংখ্য মানুষ আছে যাদের আসলেই খেয়ে দেয়ে কোন কাজ থাকে না। এই তালিকার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছেন বিখ্যাত বড় লেখক সাহিত্যিক থেকে শুরু করে সায়েন্টিস্ট পর্যন্ত। কিংবা হালের সাঁতারু, ম্যারাথন অ্যাথলেট কিংবা পর্বতারোহী। সমাজের এইসব কথা শুনতে শুনতেই তারা পাড়ি দেয় এই কঠিন পথ। জানান দেয়, মানুষের অ্যাবিলিটির কথা। আমাদের সামনে যারা দাঁড়িয়ে থাকে জীবনের কঠিন পথ পাড়ি দেয়ার অনুপ্রেরণা নিয়ে। বাংলাদেশেরও কিছু মানুষ আছে যাদের কোনো কাজ কর্ম নাই। তাদেরকে পাহাড়ের নেশায় নেশাখোর বললেও ভুল হবে না। এমনই কিছু মানুষকে নিয়ে আমাদের আজকে লেখা। খেয়ে দেয়ে কাজ না থাকায় যারা পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু স্থান মাউন্ট এভারেস্টে পৌঁছে গেছে। 

 

মুসা ইব্রাহিম:

প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন মুসা ইব্রাহিম। পেশায় তিনি একজন সাংবাদিক ও পর্বতারোহী। ২০১০ সালের ২৩ মে বাংলাদেশ সময় সকাল ৫টা ১৬ মিনিটে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন এবং লাল-সবুজ পতাকা ওড়ান মুসা। মূলত তার হাত ধরেই পর্বতবিজয়ী দেশের তালিকায় উঠে আসে বাংলাদেশের নাম।

পর্বতবিজয়ী মুসা ইব্রাহীমের জন্ম ১৯৭৯ সালে লালমনিরহাট জেলার মোগলহাটে। পেশাগত জীবনে মুসা ইব্রাহীম বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টিফোর, ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারে কাজ করেছেন।

 

নিশাত মজুমদার:

২০১২ সালের ১৯ মে বেলা সাড়ে ১১টায় প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে পৃথিবীর শীর্ষচূড়া এভারেস্টে আরোহণ করেন নিশাত মজুমদার। তার এ বিজয়ের মাধ্যমে নারীদের শক্তি ও অর্জন হিমালয় উচ্চতায় স্থান পায় বলে প্রতীয়মান হয়। এর আগে ২০০৩ সালে এভারেস্ট বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চূড়া কেওক্রাডং জয় করেন নিশাত।

এছাড়া ২০০৭ সালের মে মাসে বিএমটিসির অর্থায়নে দার্জিলিংয়ের হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট থেকে মৌলিক পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ নেন। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে হিমালয়ের মেরা পর্বতশৃঙ্গ (২১ হাজার ৮৩০ ফুট) জয় করেন। এভারেস্ট অভিযানের প্রস্তুতি হিসেবে পরের বছরের মে মাসে হিমালয়ের সিঙ্গুচুলি পর্বতশৃঙ্গে (২১ হাজার ৩২৮ ফুট) ওঠেন।

নিশাতের জন্ম ১৯৮১ সালের ৫ জানুয়ারি লক্ষ্মীপুরে। তিনি ঢাকার ফার্মগেটের বটমূলী হোম উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, শহীদ আনোয়ার গার্লস কলেজ এবং ঢাকা সিটি কলেজ থেকে পড়াশোনা করেছেন।

 

এম এ মুহিত:

মুহিত ২০১০ সালেই এভারেস্ট অভিযানে গেলেও বিরূপ আবহাওয়ার কারণে সে সময় ব্যর্থ হন। এরপর ২০১১ সালে অভিযানে সফল হন। ওই বছর ২০১১ সালের নিশাত মজুমদারের পর ২১ মে দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট শৃঙ্গ জয় করেন। এছাড়া ২০১২ সালেও  এভারস্ট জয় করেন এম এ মুহিত।

১৯৯৭ সালে অক্টোবরে সীতাকুন্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়ে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যান। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের ১৮০০ ফুট উচ্চতায় উঠে পর্বতারোহণ নেশায় মগ্ন হন তিনি। সেই নেশাই পরবর্তীতে তাকে অনুপ্রেরণা দেয়। ২০০৪ সালে এভারেস্ট বেসক্যাম্প ও কালাপাথার ট্রেকিংয়ে অংশ নেন তিনি। এরপর ভারতের দার্জিলিংয়ের হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট থেকে মৌলিক পর্বতারোহণ এবং একই প্রতিষ্ঠান থেকে ২০০৫ সালে উচ্চতর পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ নেন।

১৯৭০ সালের ৪ জানুয়ারি ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার গঙ্গাপুরে এম এ মুহিতের জন্ম। তিনি ঢাকার পোগোজ স্কুল, নটর ডেম কলেজ ও ঢাকা সিটি কলেজে পড়াশোনা করেছেন।

 

ওয়াসফিয়া নাজরীন:

দ্বিতীয় বাংলাদেশি নারী হিসেবে ২০১২ সালে এভারেস্ট জয় করেন ওয়াসফিয়া নাজরীন। ওই বছরের ২৬ মে সকাল পৌনে ৭টায় বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্টের চূড়ায় আরোহণ করেন তিনি।

ওয়াসফিয়া নাজরীন বাংলাদেশের প্রথম পর্বতারোহী হিসেবে সাত মহাদেশের সাতটি সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ জয় (সেভেন সামিট) করেছেন। ইন্দোনেশিয়ার পাপুয়া অঞ্চল দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার (ওশেনিয়া) সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কারস্তনেজ পিরামিড জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি ২০১৫ সালের ১৮ নভেম্বর সকাল ১০টা ১৯ মিনিটে সাতটি পর্বত জয়ের রেকর্ড করেন।

এছাড়া ২০২২ সালের ২২ জুলাই প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তিনি বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কে২-ও জয় করেন। দুঃসাহসী অভিযানের জন্য ওয়াসফিয়া নাজরীনকে ২০১৪ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফির বর্ষসেরা অভিযাত্রীর খেতাব দেওয়া হয়।

১৯৮২ সালের ২৭ অক্টোবর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন ওয়াসফিয়া নাজরীন। ঢাকার স্কলাসটিকা স্কুল ও যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় এগনেস স্কট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। স্টুডিও আর্ট বিষয়েও তিনি স্কটল্যান্ডে কিছুদিন পড়াশোনা করেছেন।

 

খালেদ হোসেন:

এভারেস্টজয়ী খালেদ হোসেন বেশি পরিচিত সজল খালেদ নামে। এভারেস্ট জয় করে ফেরার পথে মৃত্যুবরণকারী প্রথম বাংলাদেশি তিনি। ২০১৩ সালের ২০ মে সকাল আনুমানিক ১০টায় এভারেস্ট জয় করেন তিনি। কিন্তু এভারেস্টের সর্বোচ্চ চূড়া জয় করে নেমে আসার থেপ সাউথ সামিটে (উচ্চতা প্রায় ২৮,৭৫০ ফুট) পৌঁছার পর শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন তিনি। ৮ হাজার ৬০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থানকালে মৃত্যুবরণ করেন।

এর আগে তিনি ২০১১ সালের মে মাসে তিব্বতের নর্থ ফেস ধরে এভারেস্ট অভিযানে গেলেও শারীরিক অসুস্থতার জন্য ব্যর্থ হন তিনি। খালেদ এর আগে সিকিমের ফ্রে পর্বত (২০০৬), নেপালের মাকালু (২০০৯), হিমালয়ের বাংলাদেশ-নেপাল ফ্রেন্ডশিপ পিক (২০১০), অন্নপূর্ণা রেঞ্জের সিংগুচুলি পর্বত (২০১১) জয় করেন।

 ১৯৭৯ সালে মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার আটপাড়া ইউনিয়নের সিংপাড়া হাসারগাঁও গ্রামে তার জন্ম। শিক্ষাজীবনে তিনি কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে স্নাতক এবং ফিল্ম স্টাডিজে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন।

পর্বতারোহণ নিয়ে এডমন্ড ভিস্টর্সেলের লেখা ‘পর্বতের নেশায় অদম্য প্রাণ’ বইটি অনুবাদ করেছেন। চলচ্চিত্রকার হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। খ্যাতিমান সাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবালের উপন্যাস অবলম্বনে তিনি নির্মাণ করেন ‘কাজলের দিনরাত্রি’ নামের চলচ্চিত্র।

 

বাবর আলী:

ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে গতকাল রোববার (১৯ মে) এভারেস্ট জয় করেছেন চট্টগ্রামের বাবর আলী। বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে তিনি পৃথিবীর উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গে সফলভাবে আরোহণ করেন। সেখান থেকে নেমে তিনি লোৎসে পর্বত আরোহণের পথে রয়েছেন।

বাবর আলী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) থেকে এমবিবিএস পাস করেন। ৩৩ বছর বয়সী এ যুবক লেখাপড়া শেষে শুরু করেছিলেন চিকিৎসা পেশা। তবে তাতে থিতু হতে পারেননি। চাকরি ছেড়ে দেশ-বিদেশ ঘোরার কর্মযজ্ঞ শুরু করেন। এভারেস্ট জয়ের আগে বাবর আলী ৯টি পর্বতের চূড়ায় উঠেছেন।

গত বছরের ১৩ এপ্রিল কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর থেকে সাইকেলযাত্রা শুরু করেন বাবর আলী। পথে ভারতের ১৩টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত বিভিন্ন অঞ্চল পাড়ি দিয়ে এক মাসের চেষ্টায় তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারী গিয়ে থেমেছিলেন। এছাড়া ২০১৯ সালের পরিবেশ রক্ষার ব্রত নিয়ে বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় হেঁটে ভ্রমণ করেন তিনি।

তথ্যসূত্র: দেশ রূপান্তর

১৪২ পঠিত ... ১৭:২১, মে ২০, ২০২৪

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top