‘লুঙ্গি ড্যান্স, লুঙ্গি ড্যান্স, লুঙ্গি ড্যান্স’ ব্যান্ড দলের বাজানো গানের সুরে নেচে-গেয়ে সামনে চলেছে একদল তরুণ। কর্নেডে নতুন সুর, প্রথম বাংলাদেশ আমার, শেষ বাংলাদেশ। ড্রামের বিট পালটালেও, উদ্দাম নাচ চলছে একই নিয়মে। কে কী নাচল তাতে মাথাব্যথা নেই বাদক দলের। কী গান বাজাল তাতেও কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই নাচুনেদের। ড্রামের তালটাই আসল, নাচার জন্য আর কিছুর প্রয়োজন নেই। তারা একটু পরপরই নতুন নতুন সুরে বাদ্য বাজাচ্ছে। বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি যখন যেটা ইচ্ছা হয় বেজে ওঠে। সব গানেরই প্রথম চার লাইনের বাজনা। এই গানের সিরিয়ালে জাতীয় সংগীতও আছে।
সামনে নাচ-গান করার একটা দল তার পরেই ব্যান্ড দল। সবার পেছনে অন্যরা। লিড ড্রাম, সাইড ড্রাম, দুটি কর্নেট, একজোড়া করতাল। পুরো দলে কর্নেট বাদ্যটা বাজানো একটু কঠিন। আর এর বাদকও পান বেশি পারিশ্রমিক। বাকিরা সবাই দিনের জন্য ভাড়ায় বাজাচ্ছেন।
এখন এই দৃশ্য সচরাচর না হলেও এক সময় ঢাকার মুসলমানি, নাক ফোঁড়ানি, বিয়ে ও অন্যান্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যাবলির অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল ব্যান্ড দল। ছেলে পরীক্ষায় পাশ করেছে ডাক বাদক দল, মহল্লার দল পাশের মহল্লার সঙ্গে খেলায় জিতেছে ডাক ব্যান্ড দল, নতুন ঘরে উঠতেও বাদক দল বা ব্যান্ড পার্টির ডাক পড়ত। ঢাকার নবাবি শাসনামলে ব্যান্ড পার্টি বিভিন্ন সামাজিক, ধর্মীয় উৎসব এবং সভা-শোভাযাত্রায় সুশিক্ষিত-সুসজ্জিত বাদকদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়।
৮-১০ জনের এই বাদক দল বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র নিয়ে রংবেরঙের বাহারি পোশাক পরিহিত হয়ে বাজনা পরিবেশন করতে করতে এগিয়ে চলত। ঢাকার বেগমবাজারে ছিল কিছু ব্যান্ড বাদক দলদের আখড়া। নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে এরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে সবাইকে আনন্দ দিত। আলুবাজারেও ছিল প্রাচীন ব্যান্ড দলের আবাস।
আলুবাজারে গেলে এখনও চোখে পড়বে কিছু ব্যান্ডের দোকান। একটি ড্রাম কিংবা কর্নেট নিয়ে পোশাক পরিহিত এক বাদকের ছবি সংবলিত সাইনবোর্ড। নামগুলোও বেশ বাহারি যেমন, আনন্দ ব্যান্ড পার্টি, নিউ গীতালি ব্যান্ড, গাউছিয়া, দ্য লায়ন, ভান্ডারি, নিউ স্টার, আল মদিনা, বাংলাদেশ ব্যান্ড পার্টি, লিলি ব্যান্ড পার্টি, শাপলা ইত্যাদি।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন