দীর্ঘ তিন দশক পর অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। নাটকীয় নির্বাচনের কথা আগে থেকে আঁচ না করতে পেরে ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেতে উঠেছিল অকৃত্রিম উৎসবে। আর নির্বাচন মানেই প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা এবং গণসংযোগ। আর একুশ শতকেও প্রচারের অন্যতম কার্যকরী পন্থা হলো লিফলেট এবং পোস্টার। নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনের আগের কিছুদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নেমে এসেছিল লিফলেটের স্রোত। প্রতিটি শিক্ষার্থীই অগণিত সাদাকালো লিফলেটের দেশে নিজেকেই যেন হারিয়ে খুঁজেছে।
কিন্তু নির্বাচন শেষ। পাশাপাশি নির্বাচনের নাটকীয়তাই অনেকটা শেষের দিকে। এখন এসব পোস্টার-লিফলেট দিয়ে কী হবে? এই এতো এতো লিফলেট-পোস্টার কি ফেলে দিতে হবে? না! তার কোন দরকার নেই। ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থীদের থেকে পাওয়া পোস্টার ও লিফলেটের অভিনব সব ব্যবহার নিয়ে ভেবেছেন পোস্টার রিসাইকেলিং গবেষক নাজমুল হক।
১# ভোটের ফলাফল আসার পর সবগুলো লিফলেট একসাথ করুন। সেখান থেকে যারা যারা বিজয়ী হয়েছে তাদের লিফলেট আলাদা করে মানিব্যাগে বা বুকপকেটে রেখে দিন। বিজয়ী প্রার্থীর সাথে দেখা হলেই পকেট থেকে তার লিফলেটটা বের করে বলুন-ভাই, শুধু আপনাকে ভোট দিবো বলে বুক পকেট থেকে প্রেমিকার ছবি সরিয়ে আপনার লিফলেট রেখেছি। একসাথে দুজনের সাথে দেখা হয়ে গেলে, বড় পোস্টের প্রার্থীর লিফলেট যেন বের হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
২# ক্যাম্পাসে ডাকসু সবসময় না এলেও বাদামওয়ালা বা আচারওয়ালা মামারা সবসময়ই তাদের পসার সাজিয়ে বসেন। নব্বইয়ের পর এই উনিশের ডাকসুতে যে পরিমাণ লিফলেট ও পোস্টার ছাপানো হয়েছে, তাতে বাদাম বা আচারওয়ালা মামাদের ঠোঙ্গার সাপ্লাইয়ে কোন ঘাটতি পড়বে না। তাই পছন্দের প্রার্থী নির্বাচনে না জিতলেও তার মুখের ছবিতে আচার কিংবা স্ট্রবেরি ভর্তা নিয়ে খেতে পারবেন ঠিকই।
৩# টিএসসিতে ১০ টাকার সিঙ্গারা, সমুচা পাওয়া গেলেও হাত মোছার জন্য টিস্যু এই প্যাকেজে পাবেন না। (১০ টাকায় এত কিছু পাওয়ার পর আবার টিস্যু?) খেতে যাওয়ার আগে পকেটে রাখতে পারেন পর্যাপ্ত পরিমাণ লিফলেট! তবে হাত মোছার আগে অবশ্যই আশেপাশে কোন ‘সহমত ভাই’ আছে কি না দেখে নিবেন। তাহলে হাত থেকে তেলের দাগ উঠলেও সহমত ভাইয়ের অনুভূতিতে দাগ লেগে যেতে পারে।
৪# ক্লাসে তাড়াহুড়ায় খাতা নিয়ে যেতে যদি ভুলে যান, তবে কাজে আসতে পারে আগে ডাকসুর পোস্টারগুলো। গুরুত্বপূর্ণ নোট তোলা ছাড়াও ক্লাসে একঘেয়েমি এড়াতে বন্ধুর কাছে নোট চালাচালিও করতে পারেন।
৫# সম্প্রতি বিজয় একাত্তর হলে গণরুমের ছাত্ররা গণরুমের মধ্যেই ঘরোয়া পোশাকে একটি র্যাম্প শোয়ের আয়োজন করেছে। এই অনুপ্রেরণায় ডাকসু নির্বাচনের সকল লিফলেট সংগ্রহ করে তা দিয়ে পোশাক বানিয়ে এমন একটি লিফলেট শো করা যেতে পারে। এই শোয়ের সাফল্য পরবর্তী সময়ে দেশের অন্যান্য নির্বাচনের লিফলেট নিয়েও এমন উদ্যোগে এগিয়ে আসতে তরুণদের উৎসাহিত করবে।
৬# যারা অনেকদিন যাবত ক্রাশকে প্রপোজ করবেন করবেন করেও পারছেন না, তারা নির্বাচনী লিফলেটের ব্ল্যাংক অংশে সুন্দর করে প্রেমের প্রস্তাব লিখে তা ক্রাশের দিকে ছুড়ে মারতে পারেন। ফলে ধরা খাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না তেমন! ধরা খেলেও দোষ সব লিফলেটের প্রার্থীর উপর চাপিয়ে দিবেন। কিন্তু ক্রাশ যেন উলটা লিফলেটের প্রার্থীর সাথে সেট হয়ে না যায় সেজন্য সুক্ষ্মভাবে কোথাও নিজের নাম দিয়ে রাখতে পারেন। আর যারা ভয়ে সরাসরি ব্রেকআপের কথা বলতে পারছেন না, তারা ‘তুমি কি আমার মেয়াদোত্তীর্ণ নির্বাচনী লিফলেট হবে?’ বলে ইশারায় ব্রেকআপের কথা জানাতে পারেন।
৭# টিএসসি, মল চত্ত্বর, পলাশী কিংবা শহীদ মিনারে বন্ধু কিংবা প্রেমিক/প্রেমিকাসহ আড্ডা দিতে গেলে বসতে হয় ফুটপাতে কিংবা নিচে। ফলে থেকে যায় জামায় ময়লা লেগে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। এক্ষেত্রে নির্বাচনী লিফলেটগুলোকে কাজে লাগাতে পারেন। নির্বাচিত প্রার্থীরা ক্যাম্পাসের আবর্জনা দূর করতে পারুক বা না পারুক, তাদের লিফলেট অন্তত আপনাদের জামায় ময়লা লাগা ঠেকাতে পারবে।
৮# যেসব প্রার্থী হেরে যাবেন, তারা শারীরিক নিগ্রহ থেকে বাঁচার জন্য ‘পিকে’ সিনেমার আমির খানের মতো মুখে বিজয়ী প্রার্থীর লিফলেট লাগিয়ে রাখুন। গাল ছাড়া শরীরের অন্যান্য জায়গায় মার খাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে পুরো শরীরেই লাগান। প্রেমিক সমাজ প্রপোজ করার পর চড়ের হাত থেকে বাঁচার জন্য এই ট্রিকস ফলো করতে পারেন। ডাকসুর নেতার ছবিতে মারার সাহস অনেকে নাও করতে পারেন।
৯# উপরের কোন বেহুদা কাজেই লিফলেটগুলো কাজে লাগাতে না পারলে সংরক্ষণ করে সযত্নে রেখে দিন। যদি আবারো নির্বাচন হতে ৩ দশক লেগে যায়। তখন এইসব লিফলেট ইতিহাসের দলিল হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। পরবর্তী প্রজন্মকে জানানো যাবে- একসময় ডাকসু নির্বাচন হতো, প্রার্থীরা লিফলেটও বিলি করতো!