সম্প্রতি প্রকাশিত গ্লোবাল ইনোভেশন ইনডেক্স ২০১৮- এর প্রতিবেদনে এশিয়ার উদ্ভাবনী দেশের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, যাতে সবার তলানিতে রয়েছে বাংলাদেশ। এই তালিকায় বাংলাদেশকে এতো নিচে দেখে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোয় বেশ শোরগোল পড়ে গেছে। কিন্তু যুগ যুগ ধরেই বাংলাদেশিরা চমৎকার সব প্রযুক্তি আবিষ্কার করে জীবন যাত্রার মানকে করেছে উন্নত। 'বাংলাদেশ উদ্ভাবন পারে না' এমন চক্রান্ত ঘুচিয়ে দিতে মাঠে নেমেছিল eআরকি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণা দল। তাদের গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশের এই চমৎকার জলবায়ুতে আমাদের জন্যই যে সব চমৎকার সব প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়েছে। আজ তেমনই ৮টি বাংলাদেশি লোকাল উদ্ভাবনীর উদাহারণ আজ থাকছে eআরকির পাঠকদের জন্য।
১# স্থাপনা নির্মাণে রডের বিকল্প বাঁশ
ইমারত নির্মাণে ইট, সিমেন্টের সাথে রডের ব্যবহার হয়ে আসছে বছরের পর বছর ধরে। কিন্তু বাংলাদেশি উদ্ভাবকরা ব্যয়বহুল রডের বদলে বেছে নিয়েছেন পরিবেশবান্ধব বাঁশ। বেশ কিছু নির্মাণকাজে স্থাপনার কাঠামো ধরে রাখার জন্য রডের বদলে বাঁশ ব্যবহার করে তার উপর সুড়কি দেয়া হয়েছে। এতে করে যেমন কমেছে খরচ, তেমনি বাঁশ ব্যবসায়ীদের জন্য উন্মুক্ত হয়েছে এক অপার সম্ভাবনার দুয়ার।
২# লেগুনার জাদুকরী আসন
হিউম্যান হলার যা লেগুনা নামে বহুল পরিচিত, তার সামনের দিকে চালকের পাশে একজন পর্যন্ত বসতে পারার যে আসন তাতে একজন মানুষই বসবে এমন ধারণাই করত যে কেউ। কিন্তু প্রচণ্ড উদ্ভাবনী চিন্তার জোরে লেগুনা সংশ্লিষ্ট মানুষেরা চালকের পাশেই গিয়ার শিফটারের পিছনের দিকের খানিকটা উঁচু জায়গাতেও একজন যাত্রী বসার ব্যবস্থা করেছেন। এক্ষেত্রে ঐ যাত্রীর দুই পা গিয়ার শিফটারের দুই দিকে রেখে বসতে হয়। এতে করে প্রতিটি লেগুনায় একজন করে অতিরিক্ত যাত্রী বসতে পারেন, যা আমাদের পরিবহন সংকট নিরসনে বেশ যুগোপযোগী একটি পদক্ষেপ।
৩# দোতলা বাসের বিকল্প আসন ব্যবস্থা
গণপরিবহনের সংকট নিয়ে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অভাব অভিযোগের মাঝেও একদল উদ্যমী তরুণ পিছিয়ে থাকেননি। বেশ কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ ছাত্র পুরোনো অশোক লিল্যান্ড দোতলা বাসের সামনের খোপের মত জায়গাটিকে বসার স্থান বানিয়ে আরও বেশি শিক্ষার্থীদের ভিতরে জায়গা করে দেয়।
৪# কাদার উপর পিচের ছিটা
বাংলাদেশি আরও একটি অভাবনীয় উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ব্যবহার হয়েছে রাস্তা নির্মাণে। সাধারণত রাস্তা নির্মাণে প্রথমে ভূমি সমান করে তার উপর ক্রমান্বয়ে ইট, বিভিন্ন রকম পাথর এবং অন্যান্য দরকারি বস্তু দিয়ে সবশেষে পিচ ঢালা হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি রাস্তা সংস্কার করতে গিয়ে সরাসরি কর্দমাক্ত রাস্তার উপর পিচ ঢেলে দেওয়া হয়।
৫# কান পরিস্কারে পালকের ছোঁয়া
যদিও অস্বাস্থ্যকর উপায়, তারপরও কটন বাড পৃথিবীজুড়েই বহুল ব্যবহৃত হয় কান পরিস্কারের জন্য। বাংলাদেশি মানুষরাও বৈশ্বিক এই উদ্ভাবনের সাথে তাল মিলিয়ে আসছে বহুদিন ধরে। কিন্ত উদ্ভাবনপ্রিয় বাংলাদেশিরা অবশ্য এতেই থেমে থাকেনি। পাখির পালক দিয়েও যে চমৎকার কান চুলকানো যায় তার উদ্ভাবিত হয়েছে এই দেশেই। অবশ্য এতে কানের বারোটা বেজে যাক আর পরিষ্কার না হোক, তা নিয়ে কেউ চিন্তিত নন। এই অবিস্মরণীয় আবিষ্কার আপনি শহরে গ্রামে যেকোনো সময়েই দেখতে পারবেন।
৬# মহাসড়কে চলবে গাড়ি, ফলবে ধান
সরকারের পক্ষ থেকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবার কথা দাবি করলেও, এখনো লক্ষ লক্ষ টন খাদ্য আমদানি করা হয় বাংলাদেশে। তাই, খাদ্যে সত্যিকারের স্বয়ংসম্পূর্ণ হবার লক্ষ্যে রাস্তার উপর ধান চাষ একটি যুগোপযোগী প্রযুক্তি।
৭# শ্যালো ইঞ্জিনের বিবিধ ব্যবহার
শুধুমাত্র ডিজেল ইঞ্জিন, যা আমাদের দেশে শ্যালো ইঞ্জিন নামে বহুল পরিচিত, দিয়েই বাংলাদেশের রাস্তা আর জলাশয়ে চলে অসংখ্য যানবাহন। আমরা শ্যালো ইঞ্জিন ব্যবহার করেছি সেচ কাজে, একই সাথে আমরা নৌকায় শ্যালো ইঞ্জিন জুড়ে দিয়ে নেমে পড়েছি নদীর বুকে। বাংলাদেশিরা এখানেই থেমে যাবার নয়, উদ্ভাবনী মস্তিষ্ক কাজে লাগিয়ে এই দেশে উদ্ভাবিত হয়েছে নসিমন, করিমন, আলগামন এবং ভটভটির মত অভূতপূর্ব সব তিন চাকার যাত্রীবাহী বাহন।
৮# উদ্ভাবনে লাগে না টাকা
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি ইনডেক্সে গবেষণা খাতে কোন দেশে কেমন খরচ হয় তার একটি তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। বছরে প্রায় ৪৭৬ বিলিয়ন ডলার গবেষণা খাতে খরচ করে এক নাম্বারে আছে আমেরিকা, তারপর চীন, জাপান, জার্মানিসহ পৃথিবীর সব উন্নত দেশ। গবেষণা খাতে বছরে অন্তত ১ মিলিয়ন ডলার খরচ হয় এমন সব দেশের নাম ছিল সেখানে। সুদান, নামিবিয়া, ঘানা, উগান্ডার মত দেশ সেখানে আপনি খুঁজে পাবেন। খুঁজে পাবেন লেসোথো, গাম্বিয়ার মত অচেনা দেশের নামও, কিন্তু সেখানে নেই বাংলাদেশের নাম। অর্থাৎ গবেষণা খাতে এতো বিনিয়োগ না পেয়েই আমরা উদ্ভাবন করেছি অসংখ্য নতুন নতুন প্রযুক্তি।