লকডাউন ভালোবাসা: প্রেম যেভাবে মানে না লকডাউনের বাঁধা

১৬১৫ পঠিত ... ০০:৩৭, এপ্রিল ৩০, ২০২০

অলংকরণ: মুবতাসিম আলভী

পদ্মা গার্মেন্টসের ফ্লোর ম্যানেজার মো. মিজানুর বেশ চিন্তিত অবস্থায় আছে। তার হাতে আজকের কর্মীদের উপস্থিতির তালিকা। ফ্লোরে সত্তর জন কাজ করার কথা কিন্তু দেখা যাচ্ছে কাজ করছে ৭২ জন। বাড়তি দুই জন কীভাবে এলো! কোথা থেকে এলো! মিজানুর তো সবার আইডি কার্ড চেক করেই ঢুকিয়েছিল।

লকডাউনের ভেতরেই সীমিত আকারে গার্মেন্টস খুলে দেয়া হয়েছে আজকে। নির্দেশ অনুযায়ী কম শ্রমিক কাজ করার কথা, সেখানে তার ফ্লোরে অতিরিক্ত দুইজন। যে কোন মুহূর্তে বড় স্যার ইন্সপেকশনে এলে খবর আছে মিজানুরের। চাকরি নিয়ে টানাটানি শুরু হওয়ার আগেই মিজানুর ছুটে যায় গার্ড রুমে।

গার্ডরুমে ফ্লোর ঘরের সিসিটিভি ফুটেজ, গার্ডকে দ্রুত ফুটেজ চেক করতে বলে মিজানুর। ভিডিও প্লে হলো, ওই তো দেখা যাচ্ছে মিজানুর একে একে সবার আইডি কার্ড দেখছে, তারপর হাতে একটা স্লিপ দিয়ে ভেতরে ঢোকাচ্ছে।

হঠাৎ চোখ আটকে যায় মিজানুরের। বোরকা পরা একজন বেশ মোটাসোটা নারী ঢুকেছে, মুখ ঢাকা। মিজানুর যখন অন্য আরেকজনের আইডি কার্ড পরীক্ষা করছিল, সেই ফাঁকে ঢুকেছে সেই বোরকাওয়ালি। পুরো ভিডিওতে আর কোন অসংগতি নেই। অথচ ভিডিওতে মাত্র একজন এক্সট্রা ঢুকেছে। যাক, ওই বোরকাওয়ালীকে খুঁজে বের করলেই হবে।

মিজানুর ও সিকিউরিটির লোকগুলোর সহায়তায় বোরকাওয়ালী ধরা পড়ে। ততক্ষণে জিনিসটা ফ্লোর ম্যানেজারের হাতে নাই। ডিজিএম পর্যন্ত চলে গেছে। মিজানুর যখন বোরকাওয়ালীকে হাতেনাতে ধরেছিল, তখন জিন্স টি শার্ট পরা আরেক যুবক এর বিরোধিতা করতে আসে। তাকেও ধরা আনা হয়। আইডি চেক করতে গিয়ে মিজানুর জানতে পারে, এই সেই দ্বিতীয় অনুপ্রবেশকারি।

ডিজিএম: তোমরা কী উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে এসেছ? কী ষড়যন্ত্র ছিল তোমাদের? বলো।

কোন উত্তর নাই। ডিজিএম সাহেব এবার রেগে ওঠেন- চুপ করে আছো কেন? তোমাদেরকে আমি পুলিশে দেব। টেল মি। হোয়াই ইউ বাস্টার্ডস আর ডুয়িং ইন মাই অফিস?

: মাইন্ড ইয়োর ল্যাঙ্গুয়েজ। উই আর নট বাস্টার্ডস! বোরকার ভেতর থেকে ইংরেজিতে কথা বলে ওঠে মেয়েটা। ডিজিএমসহ রুমের সবাই তব্দা মেরে যায়।

এবার সেই যুবকটা এগিয়ে আসে। নম্র ভঙ্গিতে অনুরোধ করে, 'প্লিজ স্যার, ডোন্ট হ্যান্ডওভার আস টু পুলিশ।'

এবারে নড়েচড়ে ওঠে সবাই। সামান্য গার্মেন্টসকর্মী হয়ে ফটর ফটর করে ইংরেজি বলছে কীভাবে! ডিজিএমের ঝাড়ি খেয়ে বোরকার নেকাব সরায় মেয়েটা। পনেরো বছরের এক ফুটফুটে সুন্দরী মেয়ে!

এতটুকু একটা মেয়েকে দেখে গার্জিয়ানের নাম্বার চায় ডিজিএম। যুবক তখন ছুটে এসে ডিজিএমের পা চেপে ধরে। প্লিজ স্যার, বাবা মা'কে কল করবেন না।
-আচ্ছা, তাহলে বলো, কী উদ্দেশ্যে তোমরা এখানে ঢুকেছ?

: আসলে স্যার, আমি বুয়েটে পড়ি। থার্ড ইয়ার, আমার নাম রাকিব। আর ওর নাম মিলি। ক্লাস সেভেনে পড়ে, ভিকারুন্নেসায়। আমরা স্যার, বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড!
: কী! বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড তো এখানে কেন?
: স্যার হয়েছে কী, লক ডাউনে পুলিশ আর আর্মির ভয়ে এক মাস যাবত আমরা দেখা করতে পারছিলাম না। তাই কাল রাতে যখন জানতে পারি, গার্মেন্টস খুলে দেয়া হচ্ছে, তখনই প্ল্যানটা করি। গার্মেন্টসকর্মী সেজে এখানে ঢুকে পড়ি।

পুরো‍ রুমে তুলা পতন নিস্তব্ধতা। সিকিউরিটি গার্ডরা তখন এই অমর প্রেমের গল্প শুনে আবেগে কেঁদে ফেলছে। চোখের পানি মুছে মিজানুর জিজ্ঞেস করে, 'ওকে তো ঢুকতে দেখলাম। কিন্তু আপনি কোন গেট দিয়ে ঢুকলেন?'

মুচকি হেসে রকিব জবাব দিলো, 'একই গেট দিয়ে। গেট পার হওয়ার সময় আমি ওর বোরকার মধ্যে লুকিয়ে হামাগুড়ি দিচ্ছিলাম...'

১৬১৫ পঠিত ... ০০:৩৭, এপ্রিল ৩০, ২০২০

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top