খসখস করে কী যেন লিখছেন। শহীদুল্লা কায়সারের ডান হাতে ব্যস্ত ভঙ্গীতে ছুটছে কলম।
বাঁ হাতে ধরা সিগারেটটা যে পুড়ে পুড়ে ছাই হচ্ছে, সেদিকে খেয়াল নেই। টেবিলে রাখা চায়ের কাপ থেকে এক চুমুক দিয়েই পিক করে ফেলে দিলেন। চাও জুড়িয়ে ঠান্ডা হয়ে গেছে সেই কখন।
শহীদুল্লা কায়সারের কপালের চিন্তার ভাঁজ। কিছুতেই পছন্দের শব্দটা ধরতে না পারার অস্থিরতা। শব্দেরা যেন লুকোচুরি খেলছে তার সঙ্গে। শহীদুল্লা কায়সার আসলে লিখছেন যত, তার চেয়েও কাটাকুটি করছেন বেশি। অনেক দিন পর তাঁর সংশপ্তক উপন্যাসের পান্ডুলিপি নিয়ে বসেছেন। রমজানের চরিত্রটা ঢেলে সাজাতে হবে। ধূর্ত রমজানেরা যে বেশভূষা পাল্টে নেমে পড়েছে বাংলার মাটিতে। চারদিকে তাদেরই গিজগিজে ভিড়।
অদূরে একটা টেবিলে বসে তন্ময় হয়ে ভাবছেন সিরাজুদ্দীন হোসেন। সাধারণত খুব একটা রাগারাগি করেন না। মেজাজ গরম তার ধাতে নেই। কিন্তু এখন কিছুতেই মেজাজ ধরে রাখতে পারছেন না। এ কালের ছোকরা সাংবাদিকেরা একটা ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্ট যদি ঠিকমতো করতে পারত! ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনালকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য জামাতের লোকেরা যে কোমর বেঁধে নেমেছে, দেদার টাকা ঢালছে, এই সহজ ব্যাপারটা কেউ বুঝতে পারছে না! নাহ্ এদের দিয়ে হবে না। সিরাজুদ্দীন হোসেন নিজেই একটা রিপোর্ট লিখতে বসে গেলেন। লেখার মাঝখানে 'সেলিনা, সেলিনা' বলে কাউকে ডাকলেন। ব্যস্তসমস্ত ভঙ্গীতে ছুটে এলেন সেলিনা পারভীন। বোঝা যাচ্ছে, কাজটা সতীর্থ এই সাংবাদিককে নিয়েই করতে চান তিনি।
জহির রায়হানকে বেশ উৎফুল্ল দেখাচ্ছে। ডিজিটাল ফরম্যাটে ছবি বানানোর কায়দাটা মাত্রই শিখেছেন। এত সহজে এত কম খরচে ছবি বানানো যায় দেখে তিনি রীতিমতো মুগ্ধ। ৩৫ মিলিমিটারের যুগ শেষ! অবশ্য ডেপথ অব ফিল্ড ৩৫ মিমির মতো হচ্ছে না, এটা নিয়ে একটু খচখচানি আছে মনে। কিছুক্ষণের মধ্যে সেই দ্বিধা কাটিয়ে উঠলেন। লেট দেয়ার বি লাইট নতুন করে বানাবেন। একাত্তরের শেষভাগে কীভাবে রাও ফরমান আলী নামের এক কসাইয়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ১৪ ডিসেম্বর জামাতের রাজাকার আল-বদরেরা বুদ্ধিজীবী নিধনযজ্ঞে মেতেছিল, সেটাই এবার ফ্রেমবন্দী করতে চান জহির রায়হান।
স্বর্গ থেকে অনেক দূরে মর্তে যা কিছু ঘটছে, তাতে শহীদুল্লাহ কায়সার-জহির রায়হানরা নিরুদ্বিগ্ন থাকতে পারছেন না। নিজেদের লড়াইটা এবার স্বর্গ থেকেই তারা নিজেরাই লড়তে চান। ক্যামেরায় এক চোখ রেখে জহির রায়হান বলে উঠলেন: অ্যাকশন!
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন