হলিউডের ডলবি থিয়েটারটা আজ ঝলমল করছে খুব। লস এঞ্জেলসে আজ একাডেমি অ্যাওয়ার্ড সেরেমনি। অস্কার নমিনেশন নিয়ে খুব হৈ চৈ চলছে। কাঁচা পাকা চুলে মোটা ফ্রেমের চশমা পরা এশিয়ান এক লোক বসে আছেন। ক্যামেরা বারবার তার দিকে ফোকাস হচ্ছে। তার ছবিও নমিনেশন পেয়েছে। শুধু নমিনেশন না, ভালো আলোচনা করছেন ক্রিটিকসরা। পরিচালকের ছোট গোঁফটা পেকে গেছে। হ্যাংলা পাতলা লোকটির পাশে বসে আছে তার ছেলে আর আরেকজন বৃদ্ধ। ছেলে ছবিটির সহকারী পরিচালক ছিলেন। আর বৃদ্ধ লোকটি ছবিটির গল্পকার। আশেপাশে অভিনেত্রী বন্ধুরা।
মঞ্চে উঠলো উপস্থাপক। নমিনেশন পাওয়া ছবিগুলোর পরিচালকদের ছবির ট্রেইলার দেখালো। শ্রেষ্ঠ পরিচালকের নাম প্রকাশ করতে আসলেন স্পিলবার্গ আর লাস্যময়ী নতুন এক অভিনেত্রী। চারিদিকে তুমুল করতালি।
হঠাৎই সব চুপ। খাম খুলছেন স্পিলবার্গ। নাম ঘোষণা হবে এ বছরের শ্রেষ্ঠ পরিচালকের, যার ছবি জিতে নিয়েছে অস্কার।
এন্ড দ্য অস্কার গো'স টু...
পিন পতন নিরবতা।
'জহির রায়হান ফর...... '
তুমুল করতালি। ছেলে অনল রায়হানের হাত ধরে দাঁড়ান জহির রায়হান। বুকে জড়িয়ে ধরেন বাবাকে অনল। বাংলাদেশের জন্য অস্কার নিয়ে ঘরে ফিরবে বাপ-ছেলে আজ। মঞ্চের দিকে রওনা দেবার সময় জহির রায়হান বৃদ্ধের হাত ধরেন। একা যাবেন না মঞ্চে। ভাইকে নিয়ে যাবেন। বৃদ্ধ বলেন- 'কি যে করিস'! জহির রায়হান চোখ গরম করে বলেন- 'ওঠো তো'!
মঞ্চে ওঠেন জহির রায়হান আর শহীদুল্লা কায়সার। মঞ্চে স্পিলবার্গ হ্যান্ডশেক করেন জহির রায়হানের। হাতে অস্কারের মূর্তিটির দিকে তাকিয়ে জহির রায়হান কিছু ভাবছেন। ডায়াসের সামনে দাড়িয়ে কিছু বক্তব্য তিনি রাখবেন।
তারপর...
তারপর আমার চিন্তায় বাঁধা পড়ে। আমার চোখ ঝাপসা হয়। এ তো আমার কল্পনা!
৩০ জানুয়ারি ১৯৭২, ভাই শহীদুল্লা কায়সারকে খুঁজতে গিয়ে আর ফিরে আসে নি। কেউ বলে দ্য ডেথ অফ এ জিনিয়াস। কেউ বলে অন্তর্ধান। আর আমি বলি কি, দূর্ভাগা জাতি আমরা! শত্রুকে চিনিয়ে দেই স্বজাতির বাসা। চিনিয়ে দেই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের বাসা। ধরে নিয়ে তুলে দেই পাকিস্তানির হাতে। আবার সেই খুনীদের জয়জয়কার করি।
১৪ই ডিসেম্বর রাজাকাররা যখন শহীদুল্লা কায়সার কে ধরে নিয়ে যায়, যাবার সময় স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে শহীদুল্লা কায়সার বলেছিলেন, ‘ভাল থেকো’।
ভালো আছি। ভালো থাকবো। কিন্তু 'এক নদী রক্ত পেরিয়ে, বাংলার আকাশে, রক্তিম সূর্য আনলে যারা, তোমাদের এই ঋণ কোনদিন শোধ হবে না।'
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন