জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে একটা দেশ বা একটা মহাদেশও বলা যায়। ক্যাম্পাসের নানান জায়গাকে সুন্দর সুন্দর নামকরণ করার একটা ট্রেন্ড আছে জাবিয়ানদের মাঝে। এই ক্যাম্পাসে সিডনি মাঠ আছে, মনপুরা আছে, সুন্দরবন আছে, আছে সুইজারল্যান্ডও। নানান প্রয়োজনে, অপ্রয়োজনে জাবিয়ানদের পদচারণায় মুখর থাকে প্রতিটি জায়গা।
অসাধারণ এই ক্যাম্পাসের মাওলানা ভাসানী হলের দক্ষিণ পাশে আছে এক টুকরো সুইজারল্যান্ড। সুইজারল্যান্ড নামকরণ কীভাবে হয়েছে সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরিষ্কার বলতে পারেনি। তবে শশী হিমু নামের এক সাবেক জাবিয়ান জানিয়েছেন, ক্যাম্পাসের কোনোকিছুর নামকরণের জন্য বিশেষ আয়োজন-অনুষ্ঠান করতে হয় না। কেউ হয়তো জাগয়াটিতে গিয়েছে, ভালো লাগার পর হয়তো আড্ডাতেই কেউ বলেছে, জায়গাটা তো সুইজারল্যান্ডের মত। ব্যস, এরপর ক্যাম্পাসের প্রতিদিনের জীবনে ঢুকে গেছে এই সুইজারল্যান্ড। চল মামা সুইজারল্যান্ড যাই, চল মামা সুইজারল্যান্ডে গিয়ে বসে থাকি, চল মামা সুইজারল্যান্ড চা খাই, চল মামা সুইজারল্যান্ড গিয়ে আড্ডা মারি। অন্যান্য আরও অনেক জায়গার মত এভাবেই হয়তো এটির নাম সুইজারল্যান্ড হয়ে গেছে।
জায়গাটির নাম সুইজারল্যান্ড কেন? এমন প্রশ্নে অন্তু নামের এক অলস জাবিয়ান বলেন, এসে ঘুরে যান। তাহলেই বুঝবেন।
তবে কেন জায়গাটির নাম সুইজারল্যান্ড তা বোঝা যায় আরেক জাবিয়ান নারমিন সুলতানা উপমার কথায়। তিনি জানান, সবুজ ঘাসের চাঁদরে ঢাকা উঁচু-নিচুঁ ভূখণ্ডটি দেখতে অনেকটা সুইজারল্যান্ডের গো-চারণ ভূমির মতো। এর তিন দিকে লেক। লেকের পাশে গাছের সারি স্থানটিকে একেক ঋতুতে দেয় একেক রূপ। কখনও সেখানে বসে পানকৌড়ির মেলা, কখনও বা বৃষ্টিতে অপরুপ হয়ে ওঠে লেক আর গাছে ঢেকে থাকা সুইজারল্যান্ড। শুষ্ক ঋতুতে যেমন গাছের পাতা ঝড়ে দাঁড়িয়ে থাকে কঙ্কাল গাছগুলো, তেমনি বসন্ত এলেই সুইজারল্যান্ডে লাগে সবুজের ঘোর। কিছুদিন পর জায়গাটি ভরে যাবে জারুল ফুলে। সুইজারল্যান্ডের মত অপরুপ দৃশ্য দেখতে পায় বলেই হয়তো শিক্ষার্থীরা জায়গাটির নাম দিয়েছে সুইজারল্যান্ড। জাবির সুইজারল্যান্ড।
সুইজারল্যান্ড আপনাদের কাছে কেমন প্রিয়? এমন প্রশ্নে সুইজারল্যান্ডকে আলাদা করতে নারাজ তিনি। উপমা জানান, সুইজারল্যান্ড হোক কিংবা সুইমিংপুল—ক্যাম্পাসের প্রতিটি জায়গাই জাবিয়ানদের কাছে সমান আবেগের। সেজন্য আলাদা করে কম প্রিয়, বেশি প্রিয় নাই। তবে সুইজারল্যান্ড জায়গাটি বসন্তের পূর্ণিমায় অদ্ভূত সুন্দর। সুইজারল্যান্ডের বহুমুখী ব্যবহারের কথাও জানান উপমা। কেউ এখানে প্রেম করতে যায়, কেউ যায় আড্ডা দিতে। কারও কারও কোনো কাজ নেই, যায় হাওয়া খেতে কিংবা সুইজারল্যান্ডের ঘাসে উদাস হয়ে শুয়ে থাকতে।
সুইজারল্যান্ড জাবির বর্তমান শিক্ষার্থীদের কাছে যেমন পছন্দের জায়গা, তেমনি সাবেক শিক্ষার্থীদের কাছেও। শশী হিমু জাবি অধ্যায় শেষ করেছেন অনেক আগে। কাগজে কলমে তিনি সাবেক। কিন্তু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ভিন্ন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, এখানে কেউ সাবেক হয় না। জাহাঙ্গীরনগর জীবনের শুরু আছে, শেষ নাই। সুইজারল্যান্ডের কথা জানতে চাওয়ায় তিনি জানালেন, আমি ক্যাম্পাসে থাকার সময় সুইজারল্যান্ড নামকরণ হয়নি। তবে সুইজারল্যান্ড আমি গিয়েছি। সুইজারল্যান্ড হওয়ার আগেও গিয়েছি সুইজারল্যান্ড হওয়ার পরেও গিয়েছি। মারজুক রাসেল যেমন বলেছিলেন, শাহবাগ থেকে পৃথিবীর যেকোনো দেশে যাওয়া যায়। তেমনি জাবিতে গেলেই সুজারল্যান্ড, সিডনি, মনপুরা সুন্দরবন যাওয়া যায়। আপনারাও এসে ঘুরে যান জাবির সুইজারল্যান্ড।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন