জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাপা সেন্টারের (যেটিকে এ্যাস্থেটিক জনগণ আদর করে বলেন ‘চিকিৎসা কেন্দ্র’) ঠিক সামনেই অবস্থিত জাকসু (জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) ভবন। বিটিভিতে যখন আলিফ লায়লা আর ম্যাকগাইভারের প্রচারও শুরু হয়নি তারও আগে শেষ জাকসু নির্বাচন হওয়ার পর আর কোনো কমিটি না হওয়ায় ভবনটা মোটামুটি পূর্ণদৈর্ঘ্য বেকারত্বে ভুগতে ভুগতে প্রত্নতাত্ত্বিকদের গবেষণাগারে পরিণত হতে চলেছে ।
সারাবছর বন্ধ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সমাপনী অর্থাৎ র্যাগ উপলক্ষে খোলা হয় জাকসু ভবন। এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১ তম আবর্তন অর্থাৎ ২০১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সমাপনী উৎসবের জন্য আবারও জমজমাট জাকসু ভবন।
এই শিক্ষা সমাপনী উৎসব উপলক্ষেই ৪১ তম আবর্তন গত কুরবানী ঈদের আগে সীদ্ধান্ত নেয় ঈদের পরে জাকসু ভবন ছবি এঁকে ভরিয়ে ফেলার। বিএনপি ঈদের পরের আন্দোলন এখনো করে উঠতে না পারলেও ৪১ তম আবর্তন ঠিকই ঈদের পরের ছবি আঁকা প্রকল্প শুরু করতে পেরেছে। ছবি আঁকার জন্য ৪১ তম ব্যাচ ডাক দেয় তাদের জুনিয়র এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সব থেকে অলস ছাত্র হিসেবে পরিচিত চারুকলা বিভাগের আবদুল্লাহ মামুরকে। সাধারণত অলস ব্যক্তিরা এমন বনের মোষ তাড়ানোমূলক কাজগুলো বেশ আগ্রহ নিয়েই করে থাকে। আবদুল্লাহ মামুরও এর ব্যতিক্রম নন। তিনিও ঝাঁপিয়ে পড়লেন জাকসু ভবনকে রাঙিয়ে দেওয়ার কাজে।
আবদুল্লাহ মামুর তখন ডাক দিলেন তার অন্য জুনিয়রদেরকে! তারপর তারা দলবেঁধে লেগে পড়েন জাকসু ভবনের সাদা দেয়াল জুড়ে রঙ ছড়াতে। সিক্ত, আবির, সৌরভ, রায়হান, জাকিয়া, মং, ফারিসা, দিহান, সাদা, ফয়সাল, মিমো, ঐশী, স্থির, প্রিমা মিলে দলবেঁধে কয়েক রাতের মাঝেই রং তুলি দিয়ে জাকসু ভবনের দেয়ালে এঁকে ফেলে চমৎকার সব ছবি।
এই অসাধারণ কাজটির অভিজ্ঞতা নিয়ে জানতে চাওয়া হলে আবদুল্লাহ মামুর eআরকিকে বলেন, ‘দেয়াল রাঙানোর এই রংবাজিতে আমার সাথে চারুকলা বিভাগের জুনিয়র ছাড়াও জুটে যায় চারুকলার বাইরের অনেকেই। তারা রাতভর সাথে থেকে আঁকাআঁকিতে সঙ্গ দিয়েছে। ছবি আঁকার সাথে গান-বাজনাও চলেছে সমান তালে। প্রতিদিন বারোটায় শুরু করে ভোর পর্যন্ত চলে আঁকাআঁকি। কয়েকদিন টানা কাজের পর যখন সবগুলো ছবি শেষ হয় তখন চোখে মুখে ক্লান্তির থেকে বেশি যেটা ফুটে ওঠে সেটা হলো মুগ্ধতার আনন্দ!’ পাশাপাশি তাদের সীমাবদ্ধতার কথাও উল্লেখ করেন মামুর, ‘প্রথমে ভবনের ভেতরে ও বাইরে উভয় দেয়াল জুড়েই ছবি আঁকার পরিকল্পনা করা হলেও সময় এবং রঙের অপ্রতুলতার কারণে শুধুমাত্র জাকসু ভবনের ভিতরের দেয়ালজুড়ে ছবি আঁকার সিদ্ধান্ত নিই।’
তবে এসব সীমাবদ্ধতা যে তেমন কোন প্রভাব ফেলেনি জাকসু ভবনের ছবিগুলো দেখলেই তা বোঝা যাবে। মামুরের আশা, সামনের দিনগুলোতে ক্যাম্পাসের অন্য সব দেয়ালজুড়েও থাকবে নানান ছবি। পোস্টার-ব্যানারের বাইরে এসব বর্ণিল আঁকাআঁকি নিয়ে প্রাণবন্ত হয়ে থাকবে ক্যাম্পাস, এমন আশাই ব্যক্ত করেছেন এর আগে ক্যাম্পাসের আরও নানান জায়গা ওয়াল পেইন্টিং করে রাঙিয়ে তোলা মামুর! তো eআরকির পাঠকরা, দেখে নিন নতুন রূপে বদলে যাওয়া জাকসু ভবনের ছবি।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন