একটা গল্প আমাদের দেশের সব মানুষের পরিচিত। মাঝরাত, ঝড়, কেউ গুরুতর অসুস্থ, তাকে হাসপাতালে নিতে হবে, ভ্যান নিয়ে টানাটানি, বৃষ্টিতে ভিজে সাইকেল নিয়ে কেউ গ্রাম্য ডাক্তারকে ডাকতে গেছে।
দুইযুগ আগেও আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ঠিক এমনই ছিলো। সেই মধ্যরাতে ঝড়ে কাবু স্বাস্থ্যব্যবস্থা এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে জানেন? আমরা এখন চেক আপ করতে বিদেশে যাই। গত দুইযুগে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা এমন এক স্থানে পৌঁছে গেছে যে, আমাদের চিকিৎসা থেকে চেকআপ সবকিছুর জন্য হাতের লাগালেই আছে বিদেশ। যার বেশিরভাগই হয়েছে গত ১৪ বছরে।
কিছুদিন আগে বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মীকে দেখলাম চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য পরিক্ষার জন্য বিদেশ গিয়েছেন, আওয়ামীলীগের আরেক নেতা ওবায়দুল কাদেরের বিদেশে চিকিৎসা ও চেকআপের খবর প্রায়ই শোনা যায়, এমনকি বিরোধীদলের নেতা খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা করাতে নেয়ার কথা বলা যায় এখন।
এই পোড়া দেশে একসময় কী ছিলো? হাসপাতালগুলোয় ডক্তার নেই, যন্ত্রপাতি নেই, থাকলেও নষ্ট। আর এখন দেখেন। ৩৭ লক্ষ টাকা দিয়ে হাসপাতালের পর্দা কিনেছে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ড্রাইভারের অ্যাকাউন্টে থাকে শত কোটি টাকা। এই দুটি তথ্যই যথেষ্ট বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার জন্য।
আমি নেদারল্যান্ডে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই। এখানে প্রায়ই দেখা যায়, ওদের রাজনৈতিক ব্যক্তিরা নিজেদের দেশে নিজেদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন, চেকআপ করছেন। আমি অবাক হয়ে যাই, নিজেদেরকে আধুনিক ও সুপিরিয়র ভাবা এই দেশগুলোর দেউলিয়াত্ব দেখে। এতো উন্নত স্বাস্থ্যব্যবস্থার একটা দেশ চেকআপ জন্য বিদেশ যাওয়ার সামর্থ্য নেই।
দেশের স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নের আরও একটি তথ্য আপনাদের আমি দিতে পারি। আমাদের দেশের রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা দেখবেন কেউ দেশে মারা যায় না। তারা প্রথমে সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে যায়। এরপর সেখানে ভর্তি হয়। এরপর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। শেষ ত্যাগ করার জন্যও আমরা সিঙ্গাপুর যাই, এটাই আসলে স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন।
অনেক মানুষ আছে, চোখ থাকা সত্ত্বেও স্বাস্থ্যখাতের এই উন্নয়ন তাদের চোখে পড়বে না, আমি সরকারকে অনুরোধ করবো বিদেশ নিয়ে ওনাদের চোখগুলোকে একটু চেকআপ করিয়ে আনুন।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন