হারুকি মুরাকামি একবার ট্রেনে কইরা কই জানি যাইতেছিল। এক তরুণী ডিরেক্ট আইসা তারে কইল, 'আমি আপনার লেখার খুব ভক্ত।' মুরাকামি তরুণীরে ধন্যবাদ দিল। তরুণী আবার কইল, 'আপনার কোন বইটা আমার সবচেয়ে পছন্দ জানেন? প্রথম বইটা, হিয়ার দ্য উইন্ড সিং। ওটাই আপনার সেরা বই। ওই লেখাটার পর থেকে দিন দিন আপনার লেখা খারাপ হচ্ছে।'
তরুণীর এই সমালোচনায় হারুকি মুরাকামি একমত হইতে পারে নাই৷ দিন দিন যে লেখা খারাপ হচ্ছে তা বিশ্বাস করে না জাপানের অন্যতম জনপ্রিয় এই লেখক। ৪০ বছর ধইরা লেখালেখি করতেছে লোকটা। মুরাকামি মনে করে, এত বছর ধইরা একটু একটু কইরা উন্নতির চেষ্টা করছে সে।
ট্রেনের ওই মেয়ে এক জ্যাজ শিল্পীর কথা মনে করাইয়া দিসিল মুরাকামিরে। পঞ্চাশ-ষাটের দশকে স্যাক্সোফোন বাজাইয়া বিখ্যাত হইছিল জিন কুইল নামের সেই শিল্পী। সে মূলত আরেক বিখ্যাত স্যাক্সোফোনবাদক চার্লি পার্কার দ্বারা অনুপ্রাণিত হইছিল। এক রাতে জিন কুইল বাজাইতে গেছে নিউইয়র্কের এক ক্লাবে। বাজানো শেষে এক লোক আইসা তারে কয়, 'আপনার তো কোনো নিজস্বতা নাই। আপনি দিনের পর দিন চার্লি পার্কারের মতোই বাজিয়ে যাচ্ছেন। চার্লি পার্কারকে নকল করছেন।'
জিন কুইল তখন তার হাতের স্যাক্সোফোনটা ওই লোকের দিকে আগায় দিয়া বলল, 'ঠিক আছে, আপনি না হয় আমাকে ওই চার্লি পার্কারের মতোই একটু বাজিয়ে শোনান। কাজটা যেহেতু সহজ, আপনিও নিশ্চয়ই পারবেন৷'
মুরাকামির মতে, এই ঘটনা থেইকা আমরা ৩টা বিষয়ে ধারণা পাই৷ এক, সমালোচনা করা সহজ। দুই, মৌলিক কিছু সৃষ্টি করা আসলেই খুব কঠিন। তিন, মৌলিক জিনিস সৃষ্টি কঠিন হলেও কাউকে না কাউকে কাজটা করতে হবে।
মুরাকামি বলল, সে ৪০ বছর ধইরা তিন নম্বর কাজটা করার চেষ্টা করতেছে। তারপরও কেউ যদি হারুকি মুরাকামিরে দুঃখ দিয়া কিছু বলে, সে তাইলে জিন কুইলের মতো বলবে, 'ভাই, আপনি না হয় একটু বাজিয়ে শোনান।'
মুরাকামি যে ৩টা ধারণার কথা কইল, তার সঙ্গে আমি চামে একটা যোগ করতে চাই। সেটা হইল, মৌলিক জিনিস সৃষ্টি যেমন কঠিন, সেটা অ্যাপ্রিশিয়েট করাও কম কঠিন না। যার উদাহরণ আমরা নিয়মিতই দেখি৷ ভবিষ্যতেও দেখব।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন