হিমুর হাতে কয়েকটি স্যানিটাইজার অথবা হিমুর হলুদ মাস্ক 

১৬৩৬ পঠিত ... ১৬:৪৯, জুলাই ১৯, ২০২১

HIMUR-HOLUD-MASK

ঢাকায় এখন লকডাউন।

এখন আর ঘুম থেকে উঠে জানালার ঝাপ খুললে চা-পরোটা আসে না। জানালা খুললে চায়ের দোকানের জায়গায় পুলিশের গাড়ি দেখা যায়। লকডাউন সফল করার জন্য পুলিশের নিয়মিত টহল চলছে। 

বাবা তাঁর উপদেশমালায় বলেছিলেন, মহাপুরুষদের সমস্যা হবে মহান। ছোটখাটো বিষয় নিয়ে তাঁদেরকে বেশি মাথা ঘামালে চলবে না। অথচ ছোট একটা বিষয় নিয়ে আমাকে মাথা ঘামাতে হচ্ছে। হলুদ মাস্ক খুঁজে পাচ্ছি না। 

রূপাকে কল করলে সে হয়তো একশো আটটা হলুদ মাস্ক পাঠিয়ে দিবে। কিন্তু হিমুদেরকে এত নির্ভরশীল হলে চলে না। হিমুরা হবে স্বাধীন। কারও মায়ায় পড়া হিমুর কাজ নয়। 

হাতে কয়েকটি হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং হলুদ পাঞ্জাবির সাথে হলুদ মাস্ক পরে খালার বাসার উদ্দেশে রওনা দিলাম। মাজেদা খালার জরুরি তলব। 

খালা বলল, হিমু, এসেছিস ভালো করেছিস। এই নে এইটারে বলে স্মার্টফোন। তুই তো আবার এসব ভালো বুঝিস না। ভিডিও কলে দেখ একটা  অতি রূপবতী মেয়ে আছে। ওর সাথে কথা বল। খাতির জমা। ওর সাথেই তোর বিয়ে। এই  লকডাউনেও যদি বিয়ে করতে না পারিস, তাহলে আর জীবনেও বউয়ের মুখ দেখতে পারবি না। জলদি কর। তোর খালু বলদটার মতো হা করে তাকিয়ে আছিস কেন? নে ধর। 

খালা করোনার মধ্যেও আমার বিয়ে নিয়ে পড়ে আছে। অবস্থা সুবিধার না। বাদলের সাথে দেখা করা দরকার। 

বাদল আর ছাগলের মধ্যে কোনো পার্থক্য করা যাচ্ছে না। এই করোনায় বাসায় থাকতে থাকতে তাঁর চুল-দাড়ি রামছাগলের মতো দেখাচ্ছে। রামছাগল হয়তো বাদল দেখে গলা ধরাধরি করে বলবে, নে বন্ধু। অনেকদিন পর দেখা। চল একসাথে কাঁঠালপাতা খেয়ে আসি। 

ছাদে খালু খালি গায়ে বসে রঙিন পানি গিলছে। আমাকে দেখে বলল, হলুদ মাস্কে তোমাকে বানরের মতো লাগছে। কিন্তু ব্যাপার না। তোমার মুখ দেখতে পাচ্ছি না, এটাই আসল কথা। তোমার খালার মুখটা দেখতে না পারলে খুব শান্তি লাগতো। 

আরেক ঢোক রঙিন পানি গিলে খালু বলল, তোমার খালা তো বদ্ধ উন্মাদ হয়ে গেছে। সে কী করেছে জানো? সূদুর বরিশাল থেকে এক গাড়ি থানকুনি পাতার অর্ডার করেছে। থানকুনি পাতা খেলে নাকি করোনা সেরে যাবে। 

খালুর রঙিন পানির প্রভাব এত সহজে কমবে না। আমার বিদায় নেওয়া দরকার। খালা বিষয়টা বুঝতে পেরে বলল, হিমু, বসো। জরুরি কথা আছে। 

লকডাউনে রাতে ঘোরাঘুরি মুশকিল। ভাবলাম খালুর কথাই শোনা যাক। Everyone should be listened. 

বুঝলা হিমু, এই করোনা বিষয়টা পুরোটাই ফাজলামো। আরে বাবা, তুমি এত বড় একটা রোগ। সেই অনুযায়ী তো উপসর্গ হওয়া লাগে, তাই না? উপসর্গ হওয়া লাগতো যেমন ধরো হাত বা পা পুরোপুরি অবশ হয়ে যাওয়া কিংবা গলা দিয়ে কোনো সাউন্ড বের না হওয়া। তা না হয়ে উপসর্গ হলো সর্দি-জ্বর, যা বাঙালির জনমভর লেগে থাকে। এইটারে ফাজলামো না বললে কারে ফাজলামো বলবা বল। 

আবার নাকি বলা হয় বাংলাদেশের মানুষ করোনাকে পাত্তা দিচ্ছে না। যেই রোগের লক্ষণ সর্দি-জ্বর, সেই রোগকে পাত্তা দেওয়ার কী আছে। যত্তসব ফাজলামো! 

খালুর 'থিওরি অব ফাজলামোবিটি' আমার পছন্দ হচ্ছে। আইনস্টাইন সাহেবেরও পছন্দ হতো। 

-তারপর শোনো হিমু, লক্ষণ প্রকাশ পেতে নাকি চৌদ্দ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। আরে শালা তুই কিসের মারাত্মক ভাইরাস হইলি লক্ষণ প্রকাশ পাইতে চৌদ্দ দিন লাগে। এই শালা করোনা নিশ্চিত ভাইরাস সমাজের বলদের বংশধর। 

খালুর 'থিওরি অব ফাজলামোবিটি' আমার অত্যধিক ভালো লাগছে। তাই দ্রুত এই জায়গা ত্যাগ করতে হবে। বেশি ভালো লাগার পাশে বেশিক্ষণ থাকা হিমুদের মানায় না। 

আমি বের হয়ে যাচ্ছি। খালু তখনো বক্তৃতা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর ট্রাম্প শালা হইলো আস্ত গাধা একটা। শালায় কয় করোনা নাকি চীনের ল্যাবে তৈরি। তুমি শালা এত গাধা হও কেমনে? মেইড ইন চীন প্রডাক্ট হইলে এতদিন লাস্টিং করে?

বাইরে বের হয়ে দেখি জ্যোছনার আলো যেন গলগল করে পড়ছে। প্রকৃতি আমাদের জন্য কতই না সৌন্দর্য ধরে রেখেছে! তবু আমরা প্রকৃতির উপর অত্যাচার চালিয়েই যাচ্ছি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সহজভাবে বলতে গেলে করোনা একরকম প্রকৃতির প্রতিশোধ। সেরা জীব খ্যাত মানুষ হয়তো প্রকৃতির উপর অত্যাচার করা থামাবে না। তবে কি একসময় চাঁদের আলোয় কয়েকজন যুবককে দেখা যাবে না? গলগল করে জোছনা পড়বে না? বর্ষায় কদম ফুল ফুটবে না? কী জানি! হতেও পারে, নাও হতে পারে। লেখকদের বস শেক্সপিয়ার তো অনেক আগেই বলে গেছেন, To be, or not to be, that is the question.

১৬৩৬ পঠিত ... ১৬:৪৯, জুলাই ১৯, ২০২১

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top