সকাল থেকে সাদিয়া বসে আছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। মাঝে মাঝে কোনো কারণ ছাড়া বসে থাকতে ইচ্ছা করে, আজ সাদিয়ার এমন একটি দিন। অনেক পরিপাটি মানুষের ভীড়ে নিজেকে ফকির মনে হচ্ছে। পুরাতন একটা গোলাপী কামিজ পড়ে এসেছে সাদিয়া। স্যান্ডেল ছিঁড়ে যায় যায় অবস্থা, রুক্ষ রঙিন চুলে জটলা পাকিয়ে আধো সন্ন্যাসী হয়ে বসে আছে।
সাদিয়া বসেছে একটা গাছের নিচে। একটু দূরেই এক জোড়া হিমু রূপা বসে আছে। ফটোশ্যুট করতে এসেছে। রোমান্টিক কাপল পিকচার্স। মেয়েটার হাতে 'রূপা', আর ছেলেটার হাতে 'হিমু রিমান্ডে।' দেখেই মনে হচ্ছে এরা অরিজিনাল হুমায়ূন আহমেদের অরিজিনাল ফ্যান।
সাদিয়াও হুমায়ূন আহমেদকে ছোটোবেলা থেকে ভালোবাসে। তাই হয়তো হিমু রূপার প্রতি একটু না চাইতেও খানিক আগ্রহ সৃষ্টি হলো। সাদিয়া স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাদের গতিবিধি লক্ষ্য করলো।
দু'জন ক্যামেরাম্যান ঝপাঝপ ছবি তুলছে।
প্রায় এক ঘন্টা পর ছবি তোলা শেষ হলো। এই মুহূর্তে কাজল টানা আয়ত চোখগুলো দেখে মেয়েটাকে ক্লান্ত মনে হচ্ছে। সাদিয়ার ভীষণ কথা বলতে ইচ্ছা হচ্ছে।
কিন্তু যেচে কথা বলা কি ঠিক হবে?
কথা বলবে কি বলবে না— দ্বিধান্বিত অবস্থায়ই সাদিয়া মেয়েটাকে প্রশ্ন করেই ফেললো।
— হুমায়ূনকে খুব ভালোবাসেন বুঝি?
প্রেমিক-প্রেমিকার দু'জনের নজরই তখন সাদিয়ার দিকে। মুখে প্রাঞ্জল হাসি।
—হ্যাঁ, তা আর বলতে!
—সবচেয়ে প্রিয় বই কোনটা?
এবার সাদিয়ার অহেতুক প্রশ্নে মেয়েটা বিরক্ত হলো। ঘুরে বসলো প্রেমিকের দিকে। সাদিয়া আবার কথা বাড়ালো।
—'কৃষ্ণপক্ষ' পড়েছেন নিশ্চয়ই? অসম্ভব সুন্দর গল্প, একবার পড়লে ভোলা যায় না এমন।
দু'জনই সমানতালে মাথা নাড়লো, দুজনেই পড়েছে। সাদিয়া আবার বললো, 'অরুর জন্য খুব কষ্ট হয় আমার।'
তখন মেয়েটা এক অদ্ভুত প্রশ্ন করলো। আস্তে আস্তে বললো, 'অরু কে?'
সাদিয়ার সন্দেহ হলো। তবে এমন একটা ভাব করলো যেনো মেয়েটির কথা শুনতে পায়নি।
সন্দেহ কাটাতে জিজ্ঞেস করলো, "হুমায়ূন আহমেদের 'পুতুল নাচের ইতিকথা" একটা দারুণ বই। কি বলেন?'
এবার হিমু-রূপা আগের বারের চেয়েও জোরে জোরে মাথা নাড়তে লাগলো। যার অর্থ— 'অবশ্যই দারুণ বই।'
এবার প্রেমিকটি প্রেমিকাকে দেখিয়ে সাদিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো, 'লাস্ট বইমেলায়ই ওকে গিফট দিলাম।'
—হুমায়ূন আহমেদের লোটাকম্বল, কপালকুণ্ডলা, মেমসাহেব বইগুলোও অসাধারণ।
—তা আর বলতে! পাশে বসা রূপা উত্তর দিলো।
সাদিয়া হাসলো৷
নীল শাড়ি পরা রূপা এবার সাদিয়াকে প্রশ্ন করলো, 'হুমায়ূন আহমেদের লেখা আপনার পছন্দের বই কোনটা?'
সাদিয়ার আর কথা বলতে ইচ্ছা হলো না। উঠে দাঁড়িয়ে যখন যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন হঠাৎ মনে হলো শেষবার উত্তর দিয়ে যাওয়া যাক।
সাদিয়া দু'কদম পিছিয়ে মেয়েটার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
'হুমায়ূনের লেখা আমার প্রিয় বই- পথের পাঁচালী!'
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন