বিয়ের পরের দিনে এসে আমি মোটামোটি বিপদে পড়েছি বলা যায়। কারণ আজ আমার রান্না করতে হবে।
বিয়ের পরেরদিন বেশিরভাগ বাড়ির বউয়েরা রান্না করে। আমি এতদিন রান্নার বিষয়টাকে পাত্তা দেইনি, কারণ মনে করেছি ইউটিউবে দেখে করে ফেলবো। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এখানে নেটের অবস্থা খুব বাজে।
মা আমাকে যদিও বলেছেন, 'বউমা তোমার সমস্যা হলে বলো', কিন্তু আমি কোন মুখে বলি যে আমার পুরোটাতেই সমস্যা!
সাকিব বলেছে, 'প্যারা নাই চিল। মনে করো তুমি এখন মাস্টারশেফ এর সেটে যাবা। এতদিন যত দেশের যত রান্না দেখেছো সব মিলিয়ে নতুন কিছু ক্রিয়েট করো।' সাকিবকে এজন্য আমার এত পছন্দ। যাই হোক না কেন ও আমার পাশে থাকে।
রান্নাঘরে গিয়ে দুই ঘন্টার ভেতর রান্না শেষ করলাম। জীবনে এই প্রথম ভিডিও দেখা ছাড়া নতুন কিছু রান্না করতে গিয়ে আমি ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম, তাই মা বলেছিল, 'বউমা তুমি একটু রেস্ট নাও। মেহমানদের আমি খাবার দিয়ে দিবো। তুমি পরে এসো।'
আধাঘণ্টা পর আমার ননদ দৌড়ে রুমে আসলো। এসে বললো ভাবি দ্রুত আসো।
আমি ভয় পেয়ে গেলাম। দ্রুত দৌড়ে বাইরে গেলাম। গিয়ে দেখি আমার চাচাশ্বশুর তার বন্ধু, আত্মীয়-স্বজন যা বাকি আছে সবাইকে এনে আমার রান্না দেখাচ্ছেন। আমি ভয়ে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। বিয়ের পরেরদিন এসেই যদি উল্টোপাল্টা কাজ করার খ্যাতি অর্জন করি তাহলে বিষয়টা বেশ বাজে হয়ে যায়।
সে যাই হোক, সবাই দেখি আমার রান্নার দিকে ভিড় জমিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে আমি জ্ঞান হারাবো... এমন এক সময় আমার চাচাশ্বশুর বললেন, 'মা তুমি তো আর্টিস্ট। তুমি আজ যা রান্না করছো, তা আমি জীবনেও কখনো খাইনি। এজন্য দেখো সবাইকে ডেকে এনেছি।'
আমার বিশ্বাস হচ্ছিলো না যে কেউ অন্তত আমার ভেতরের সুপ্ত রাঁধুনীকে ধরতে পেরেছে। খুশিতে আমি আবেগাপ্লুত হয়ে যেই কেঁদে দেবো, এমন অবস্থায় পাশ থেকে সাকিব বললো, 'ছোঁয়া ভুলেও ঢাকা গিয়ে কাউকে বলিও না যে তুমি তেতুল মুরগির টক, গরুর মাংস গাজরের ঝোল, আর দই পুঁইশাক দিয়ে সালাদ বানিয়েছো। এরা বুঝে না বলে এটাকে স্বর্গীয় খানা মনে করতেছে, কিন্তু বিশ্বাস করো আমার এই উঠানে শুয়ে শুয়ে কাঁদতে মনে চাচ্ছে। ঢাকা চলো আগে, রান্নার জন্য একটা লোক রাখতে হবে।'
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন