একদা লোডশেডিংয়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল

১৩৪৮ পঠিত ... ২৩:২৪, নভেম্বর ০২, ২০২০

 

সাল ২০২০।
রবীন্দ্রনাথ আর কাজী নজরুল নামে দুই কবি একই পাড়ায় থাকেন। করোনার প্রকোপে ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না কেউই। রবীন্দ্রনাথ এর প্রকৃতি দেখা কিংবা নজরুলের যাত্রা পালায় গান গাওয়া কোনটাই হয়ে উঠছে না।

দিনের পর দিন বাসায় বসে দুইজনই ভীষণ বোর হয়ে যাচ্ছে, বাইরে বের হলেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাবাহিনী অতর্কিতে বেত্রাঘাত করছে। নজরুল অবশ্য একবার প্রতিবাদ করেছিল, বিনিময়ে সেনাবাহিনী গুলি করে নজরুলের বীণায় অগ্নি ধরিয়ে দিয়েছে।

আজ সকাল ৯টা থেকে পাড়ায় কারেন্ট নেই। কম্পলেইন অবশ্য করেছেন কবিগুরু, কিন্তু কোন লাভ হয়নি, কারেন্টে লোকগুলো বোধহয় জানে না, লকডাউন খুললেই নোবেল পুরস্কার নিতে আমেরিকা যাচ্ছেন রবীন্দ্রনাথ।

নাহ, সকালটা আজ বেজায় খারাপভাবে শুরু হলো! এদিকে আড়াইটা বেজে গেছে, কারেন্টের কোন খোঁজ নেই। কবিগুরুর ইচ্ছে করছে কারেন্টের লোককে নিয়ে দু লাইন কঠোর কিছু লিখবেন। কিন্তু তাহলে আবার রিস্ক আছে, অনেকে ভাববে তিনি নজরুলকে কপি করছেন। তাছাড়া তিনি নরম মনের মানুষ। আরও একটা কারণ আছে। কারেন্টের বিষয়গুলা হ্যান্ডেল করে এক ব্রিটিশ কোম্পানি। কদিন পর নোবেল নিতে যাবেন, এখন ব্রিটিশ কারো উপর এরকম ভায়োলেন্ট হওয়াটা ঠিক হবে না।

তার চেয়ে নজরুলকে বলতে হবে কিছু লিখতে, ভায়োলেন্ট হওয়াটা ওর হবি। একটু ফ্রি টাইম পেলেই ভায়োলেন্ট হয়ে যায়। কবিগুরু তখনি মেসেঞ্জারে নজরুলকে নক দিলেন
'কারেন্টের লোকটা ভীষণ পাজি,
ওকে নিয়ে দু লাইন লিখো তো কাজী?"

রাত ৯টা।
প্রতিবাদ করতে গিয়ে কাজী নজরুলের বীণায় আবার অগ্নি লেগেছে। অগ্নি নিভাতে গিয়ে সারা শরীর ঘেমেটেমে একেবারে অস্থির। ফ্যানের সুইচ টিপতে গিয়েই দেখা গেল কারেন্ট নেই। আবারও ভায়োলেন্ট হয়ে যায় নজরুল, অবলীলায় বলে বসে 'F**k you কারেন্ট'!

নিজের অজান্তেই নজরুল একটা পোড়া পোড়া গন্ধ পেল। বুঝতে পারল গরমে সে গ্রিল হয়ে যাচ্ছে। অলরেডি কোয়ার্টার গ্রিল হয়ে গেছে, ফুল গ্রিল হয়ে যাওয়ার আগেই রবি ঠাকুরকে রিপ্লাই দিতে হবে।

ডাটা অন করতেই টুইং করে শব্দ হল, রিপ্লাই পেতে দেরি হওয়ায় রবি ঠাকুর ইতোমধ্যে আবার মেসেজ দিয়েছে 'রিপ্লাই দাও মোরে রিপ্লাই দাও'।

সাথে সাথে নজরুল রিপ্লাই দিলেন-
'আমি বিদ্রোহী রণক্লান্ত, কেবল কারেন্ট আসলেই হব শান্ত,
কে আছিস? কারেন্টের লোককে এক্ষুনি ধরে আন তো!'

রবীন্দ্রনাথের ফোন ততক্ষণ চার্জ শেষ হয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মেসেজটা তিনি আর দেখতে পারেননি। তিনি তখন উঠোনে বসে কবিতা লিখছেন-

'এই নিশি ক্ষণে মোর স্মার্টফোনে তিল চার্জ আর নাহি রে
ওগো আজ আমি থাকবো ঘরের বাহিরে...' 

লেখা: মিনহাজ আহমেদ

১৩৪৮ পঠিত ... ২৩:২৪, নভেম্বর ০২, ২০২০

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top