হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে ফেসবুকে যেভাবে আবেগী স্মৃতিচারণামূলক স্ট্যাটাস লিখবেন

১৬৩৬ পঠিত ... ১৫:৩৬, জুলাই ১৯, ২০২০

প্রতি বছর ঈদের মতো হুমায়ূন স্মৃতিচারণ বিষয়ক দিনও আসে দুইটি। একটি জন্মদিন, অপরটি মৃত্যুদিন। হুমায়ূন সাহিত্যের মতো 'হুমায়ূন স্মৃতিচারণা'ও যে সাহিত্যে আলাদা শাখা হয়ে উঠতে পারে, এমনটা বললে সারকাজম ভাববেন না কিন্তু। অনেকেই হয়তো জানেন না, হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে বিভিন্ন ভক্ত ও পাঠকদের ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে ইতিপূর্বে একটি বইও বের হয়েছে। তাই সুলিখিত পত্রের মতো সুলিখিত স্ট্যাটাসেরও সাহিত্যের মর্যাদা পাওয়ার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।

জন্মদিনে একটু ফান টাইপ কথা লেখা গেলেও, বিশেষত মৃত্যুদিনের হুমায়ূন স্মৃতিচারণায় একটু আবেগ থাকাই স্বাভাবিকতা। সেই আবেগী স্ট্যাটাস লেখাও যে খুব কঠিন কাজ, তা ভাববেন না। কিছু নিয়মকানুন বা স্ট্রাকচার ফলো করলে আপনিও সুন্দর একটা আবেগঘন হুমায়ূন স্মৃতিচারণামূলক স্ট্যাটাস লিখতে পারবেন। আমি নিজেই একাধিকবার লিখেছি। এবার তাই আগের লেখা জিনিস পনেরশতম বারের মতো পোস্ট না করে বরং নিজ অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া হুমায়ূন স্মৃতিচারণা লেখার টিপসগুলো আপনাদের জানাচ্ছি। সবারই আছে আবেগী স্ট্যাটাস লেখার অধিকার, কী বলেন?

 

১#

প্রথমেই রাবীন্দ্রিক গানের লাইন দিয়ে শুরু করলে মুডটা ঠিকঠাক আসে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে পছন্দনীয় কিংবা পপুলার লাইনগুলো হলো-
'নয়ন তোমায় পায় না দেখিতে, রয়েছ নয়নে নয়নে'
'তুমি রবে নীরবে, হৃদয়ে মম...'
'যদি মন কাঁদে। তুমি চলে এসো এক বরষায়...'
(জেনে রাখা জরুরি, শেষেরটা কিন্তু রবীন্দ্রনাথের গান না, হুমায়ূন আহমেদের গান)

কোটেশন আকারে প্রথমে যেকোনো একটি পংক্তি দিয়ে এরপর লেখা শুরু করবেন। একাধিক দিলেও যে সমস্যা আছে তা না, তবে একবারে দিলে জগাখিচুড়ি মনে হবে। লেখার ভেতরে ভেতরে গ্যাপ দিয়ে সবগুলাই দেয়া যায়।

 

২#

বৃষ্টি নিয়ে লিখুন, জোছনা নিয়ে লিখুন। এক ফাঁকে রবীন্দ্রনাথ নিয়েও লিখতে পারেন। আপনি বৃষ্টি চিনিয়েছেন, জোছনা চিনিয়েছেন, আজও বৃষ্টি হয়, আজও জোছনা হয়, আপনি কি জানেন/দেখেন--- এই ধরনের লাইন জমতে পারে ভালো। বৃষ্টি/জোছনা নিয়ে নিজের ফিলিংস বা অভিজ্ঞতা লিখে এক পর্যায়ে 'তখন আমি ভাবছিলাম হুমায়ূন স্যারের কথা' এভাবে লিখলেও চলে।

 

৩#

হুমায়ূনের লেখা বিভিন্ন বইয়ের নাম রেফারেন্স হিসেবে লেখার মধ্যে মিশে থাকবে। যেমন- তেঁতুল বনে আজও জোছনা হয়, বয়ে যায় লিলুয়া বাতাস/ মাতাল হওয়া, ইচ্ছে হয় ময়ূরাক্ষী নদীর তীরে বৃষ্টি বিলাসে মেতে উঠি, আজ আমি কোথাও যাবো না কারণ কোথাও কেউ নেই, মধ্যাহ্নে হুট করে মনে হয় কে কথা কয়, আপনি কি সবই দেখছেন মেঘের ওপর বাড়িতে বসে দরজার ওপাশে... ইত্যাদি। লেখার ভেতরে লাইনে লাইনে যত বেশি বইয়ের নামের রেফারেন্স আসবে, লেখা তত বেশি সার্থক। এতে দুই ধরনের উপকার- প্রথমত, একজন বিজ্ঞ হুমায়ূন পাঠক হিসেবে আপনার ইমেজ গড়ে ওঠে, দ্বিতীয়ত যেহেতু বইগুলো অন্যরাও পড়েছে তাই রিলেটেবল হয় এবং আবেগপ্রবণ হয়ে লাভ রিয়্যাক্ট করার সম্ভাবনা বাড়ে...

 

৪#

হুমায়ূন আহমেদের বেশ কিছু বই নিয়ে আপনার শৈশবস্মৃতি উলেখ করুন। কীভাবে আপনার শৈশব-কৈশোর-তারুণ্য জুড়ে হুমায়ূন সাহিত্য নানান প্রভাব ফেলেছে, সেগুলো লিখুন। তবে প্রিয় লেখকের নাম জিজ্ঞেস করা হলে কখনোই হুমায়ূন আহমেদ বলবেন না। বলবেন, জর্জ বার্নার্ড শ, এডগার এলেন পো...

 

৫#

হুমায়ূনের চরিত্রগুলো নিয়ে দু কথা চার কথা না বললেই নয়। এ ক্ষেত্রে সবসময়ই প্রিফারেবল ত্রয়ী- হিমু, মিসির আলী, শুভ্র। তারা এখন কোথায়, কী করছে, হুমায়ূন আহমেদকে ছাড়া কি তাদের ভালো লাগছে? সেসব নিয়ে বলতে পারেন। এদের একসঙ্গে নিয়ে গল্পও লিখতে পারেন, যে গল্পটি পড়লেই চরিত্রগুলো সম্পর্কে আপনার ধারণা এবং ধারণার অভাব, দুটোই স্পষ্ট হয়ে যাবে। তবে আবেগীয় আবহ নির্মাণে তা সবসময়ই কার্যকর।

হিমু মিসির আলী শুভ্রর বাইরে মানে মেইনস্ট্রিম চরিত্র নিয়ে না লিখে একটু ব্যতিক্রম হতে চাইলে আপনার হাতে আছে মতি মিয়া, রানু, মাজেদা খালা এরাও।

 

৬#

ওপারে হুমায়ূন আহমেদ কী করছে, সেই ধরনের ফিকশনাল কথাবার্তা স্ট্যাটাসের আবেগীয়-আপিল বাড়ায়। ওপারে মানে, পরকাল বলা যাবে না। বলতে হবে- অন্য কোনো জগতে। অন্য জগতের সঙ্গে পৃথিবীর মিল আছে কিনা সেরকম প্রশ্ন বা অনিশ্চয়তা ছুড়ে দিয়ে শেষ করলে ভালো। স্যাম্পল বাক্য- 'আমি কল্পনায় দেখি, অন্য এক জগতে তিনি টিনের ছাদ দেয়া বারান্দায় বসে একমনে লিখে যাচ্ছেন, পাতার পর পাতা লিখছেন, মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে, আচ্ছা, সেই অন্য জগতেও কি এই পৃথিবীর মতোই বৃষ্টি হয়?'

 

৭#

কোথাও কেউ নেই, অয়োময়, বহুব্রীহি, এইসব দিনরাত্রি, আজ রবিবার এইসব নাটক সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে পারেন। অনেকটা এভাবে- 'তখন আমার বয়স দুই কি তিন মাস, স্পষ্ট মনে আছে টিভিতে চলছে কোথাও কেউ নেই...'

 

৮#

হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে যদি কখনও আপনার দেখা হয়ে থাকে (দূর থেকে দেখছেন, সেটাও ইনক্লুডেড) সেই অংশটা আলাদাভাবে ফোকাস করে লিখবেন। লেখার ভঙ্গিতে যেন হুমায়ূন কতখানি মজার মানুষ বা ইন্ট্রেস্টিং লোক ছিলেন তা উঠে আসে। অথবা খুব সিম্পল ঘটনা নিয়ে রহস্যও করতে পারেন (উনি যেমন করতেন আর কি)। মনে করেন, আপনি একবার অন্যপ্রকাশের স্টলে গেছিলেন, দেখলেন উনি ভেতরে বসা। ভিড় ঠেলে কোনোরকমে একটা অটোগ্রাফ নিতে পারলেন। ইন্টারাকশন এতটুকুই। পায়ে গোটা দশেক পাড়া আর পেছনে এক ডজন গুতা খেয়ে আপনি জান বাঁচিয়ে ভিড় থেকে বেরোতে পারছেন এটাই অনেক। এই ঘটনাটিই আপনি লিখবেন এভাবে-

'আমি অটোগ্রাফের জন্য খাতা বাড়িয়ে দিলাম। উনি আড়চোখে একবার আমার দিকে দেখলেন। আমার নাম জিজ্ঞেস করলেন। আমি বললাম স্যার হিমু লেখেন। উনি কিছু বলেননি ঠিকই, কিন্তু না জানি কেন, একটু মুচকি হেসে অটোগ্রাফ দিলেন। আমাকে দেখেই কি উনার সত্যিকারের হিমু মনে হয়েছিল? কে জানে!'

 

৯#

এটা স্পেশালি মেয়েদের জন্য। রূপার চরিত্র (মানে হিমুর ইউনিভার্সের রূপা) যে ফেসবুকারদের কল্যাণে কী পরিমাণ অপ্রয়োজনীয় রোমান্টিক লুতুপুতু রূপ লাভ করেছে, তা দেখে গেলে হুমায়ূন আহমেদ নিজেও হতাশ হতেন। তবে আবেগী লেখার সময় এসব নিয়ে ভাবার দরকার নেই। বারান্দায় নীল শাড়ি পরে হিমুর জন্য রূপার অপেক্ষা নিয়ে লিখুন। কদমফুল নিয়ে লিখুন, স্পেশালি বাদল দিনের প্রথমটা। আপনার কিশোরী মনকে হুমায়ূনের নারী চরিত্র কীভাবে প্রভাবিত করেছে, লাইনে লাইনে তা ফুটিয়ে তুলবেন।
একটু এক্সেপশনাল থাকার জন্য হুমায়ূনের অন্যান্য অলমোস্ট একইরকম নারীচরিত্র (রানু, নীলু, মুনা ইত্যাদি) নিয়েও লিখতে পারেন।

 

১০#

ম্যাজিশিয়ান, জাদুকর এসব বিশেষণ ফাঁকে ফাঁকে লিখতে কিন্তু ভুল করবেন না। তবে কথায় বলে, শেষে আবেগ যার, সব আবেগ তার। স্ট্যাটাসের শেষে আবেগের ধাক্কা না থাকলে পুরো লেখার আবেগটাই যেন ম্যাড়ম্যাড়ে হয়ে যায়। একটু সেফ খেলতে শুরুর মতো শেষেও ব্যবহার করতে পারেন গান-কবিতার লাইন। আমার মতে সবচেয়ে প্রিফারেবল লাইন হলো-

'ও কারিগর, দয়ার সাগর, ওগো দয়াময়
চান্নিপসর রাইতে যেন মরণ আমার হয়।'

১৬৩৬ পঠিত ... ১৫:৩৬, জুলাই ১৯, ২০২০

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top