প্রিন্সেস ডায়ানা ও প্রিন্স চার্লস এর কণিষ্ঠ পুত্র প্রিন্স হ্যারির বিয়ে নিয়ে তোলপাড় চলছে পুরো বিশ্বে। আগামী ১৯ মে, শনিবার যুক্তরাজ্যের বার্কশায়ারে অবস্থিত উইন্ডসর ক্যাসলে অনুষ্ঠিত হবে এ বছরের সবচেয়ে আলোচিত বিয়েটি। এই জুটির প্রণয় থেকে পরিণয় অর্থাৎ প্রেম থেকে বিয়ে যদি বাংলাদেশী কায়দায় হতো, তবে কেমন হতো? আসুন দেখে নেওয়া যাক।
বন্ধুর মাধ্যমে পরিচয় আর তারপর দেখতে দেখতে বন্ধুত্ব গড়িয়ে প্রেম হয়ে গেল হ্যারি আর মেগানের। মিডিয়ার চোখ এড়িয়ে চুটিয়ে প্রেম চালালেও ছেলের দাদী অর্থাৎ মহারাণী এলিজাবেথের লোকজনের চোখ এড়াতে পারল না তারা। সম্পর্কের কথা জানতে পেরেই রাণী রেগে যান।
যেন তেন খানদানের সাথে তো আর সম্পর্ক করা যায় না। মেয়ের ফ্যামিলি কেমন, বংশে কোন ঝামেলা আছে কি না এইসব নিয়ে বিস্তর খোঁজাখুজির পরেও আশ্বস্ত হতে পারেন না তিনি।
আবার মেয়ের বাড়িতেও যে রাজপুত্রের সাথে প্রেম জেনেই সবাই মেনে নিল তা কিন্তু না। বিদেশী ছেলে শুনেই ক্ষেপে গেলেন মেয়ের বাবা! তার উপর ছেলের বিসিএস দেয়ার বয়স শেষ হয়ে গেছে! ক্যারিয়ার নাই এমন ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে কি তিনি তার মেয়ের সর্বনাশ করতে পারেন?
কিন্তু কথায় আছে, প্রেম মানে না কোন বাঁধা। ‘আমি ওকে ছাড়া বাঁচব না!’, ‘আমি ওকে আমার প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবেসেছি’ এ সব কথাতেও যখন কোন কাজ হয় না, তখন মেগান খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেন। আর রাজপুত্র হ্যারি ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার ব্যর্থ চেষ্টাও করে ফেলেন এক দুইবার।
এত সব নাটক সিনেমার পর অবশেষে রাণীর মন খানিকটা নরম হলে নাতির এই সম্পর্কে সে ভেবে দেখবেন বলে ঠিক করলেন। মহারাণী চাইলে তো আর বিয়ে ঠেকিয়ে রাখা যায় না। মেগানের নিমরাজি বাবাও অবশেষে সায় দিলেন বিয়েতে।
অনেক দেন দরবারের পরে, বিয়ের পর মেগান অভিনয় ছেড়ে দেবে এই শর্তে দুই পরিবারকে রাজি করে তাদের বাগদান সম্পন্ন হয় লন্ডনে। যদিও ডিভোর্সি মেয়ে দেখে বরের দাদী রাণী এলিজাবেথ একটু মনোঃক্ষুণ হয়েছিলেন, তারপরও শেষমেশ রাজি হন তিনি।
এরপরেই আসে দেনা পাওনার বিষয়। দুই পরিবারের মুরুব্বীরা আলোচনায় বসেন এবং যথারীতি বাকবিতন্ডায় মেতে ওঠেন তারা। বরের চাচা একসময়ের রাজপুত্র এন্ড্রু উত্তপ্ত গলায় বলে ওঠেন, ‘আমাদের ছেলেও রাজপুত্র! একটা টিভি, একটা ফিনিক্স সাইকেল আর সাথে বাকিংহাম প্যালেসটা সাজায়া দিলেই চলবে! এর কম হইলে আমরা এই মেয়েরে বউ বানামুই না!’ কনের মামা বলেন, ‘আমাদের মেয়েও ফেলনা না। নাটক সিনেমায় অভিনয় করে। ৫০ লাখ টাকা দেনমোহরের নিচে আমরা মেয়ে দিমু না!’ এ সব দেখে বরের বাবা প্রিন্স চার্লস মন খারাপ করে বলেন 'মা মরা ছেলেটা আমার! ওর কি একটু স্বাদ আহ্লাদ নাই!' এরকম বাকবিতন্ডার পরে দুই পরিবার সম্মত হন নগদ ১৫ লাখ টাকা দেনমোহরে আগামী ১৯ মে, রোজ শনিবার উইন্ডসর ক্যাসল কমিউনিটি সেন্টারে হবে বিয়ে। যৌতুক নির্ধারিত হয় একটা ফিনিক্স সাইকেল, একটা ওয়ালটন টিভি আর বাকিংহাম প্যালেসের জন্য কয়েকটা খাট-পালঙ্ক আর ড্রেসিং টেবিল।
এই রাজকীয় বিয়েতে অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় ১৩ টি। যার মধ্যে অন্যতম প্রি ওয়েডিং ফটোগ্রাফি, আকদ, হালদি নাইট, ‘সাংগিত’ নাইট, মেহেন্দি নাইট, নিকাহ-১, নিকাহ-২, ওয়ালিমা, পোস্ট ওয়েডিং ফটোগ্রাফি ইত্যাদি। ৩০ জন ময়-মুরুব্বি বিশিষ্ট একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয় এই অনুষ্ঠানগুলোকে অবাধ ও শুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করার জন্য।
গায়ে হলুদ অথবা হালজামানার ‘হালদি নাইট’ এর দিন ঠিক হয় বিয়ের এক সপ্তাহ আগে। বাজেট সমস্যার কারণে বর কনের হলুদ সন্ধ্যা আয়োজন করা হয় বরের বাসা অর্থাৎ বাকিংহাম প্যালেসের ছাদে। মেগানের হলিউডি বান্ধবীরা বলিউডি গানের সাথে চোখ ধাঁধানো নৃত্য পরিবেশন করেন। তাদের ‘কালা চশমা’ গানটি খুব দ্রুতই মিলিয়ন ভিউ-এর মাইলফলক অর্জন করে।
গায়ে হলুদের পরেই সবার চিন্তা ভাবনায় আসে বিয়ের মেন্যুর বিষয়টি। বিয়ের দিন প্রথম চাঞ্চল্য দেখা যায় বরের গাড়ি বহর পৌছাতে দেরি করলে। বারংবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও বরের চাচা জানায় তারা মেট্রোরেল প্রজেক্টের জ্যামে আটকা পড়েছেন। বাকিংহাম প্যালেস থেকে কমিউনিটি সেন্টারে পৌছাতে তাদের সময় লাগে ঘন্টা সাতেক। শেষ পর্যন্ত দেখা যায় বর মুখে রুমাল দিয়ে হেঁটে হেঁটে আসছেন, জ্যামের কারণে বর পক্ষের বাকিরা এখনো এসে পৌছায় নি।
বরের শেরওয়ানির পকেটে রাস্তায় ফলফ্রুট খাবার জন্যে ৫০০ টাকা ছিল। আর গেটের টাকা আর মেয়ের জন্য শাড়ি-গয়নার লাগেজ ছিল অন্য এক গাড়িতে। সে মহা ফাঁপরে পড়ে যায় গেটে এসে। কনে পক্ষের দুর্ধর্ষ গেট ধরা স্কোয়াড তাকে টাকা ছাড়া ঢুকতেই দিবে না। ক্লান্ত বর পানি চাইলে তাকে শরবত এনে দেয় কনেপক্ষের এক ছোকরা তাকে কমলা রঙয়ের শরবত দেয়। শরবতে লবণ মরিচ থাকতে পারে ভেবে ছেলে এ সব ছুঁয়েও দেখে না।
পরবর্তীতে বরপক্ষের অবশিষ্ট অংশ চলে আসলে উইন্ডসর ক্যাসেলের গেটে যেন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। কনে পক্ষ সরাসরি কোহিনুর দাবি করে বসে। তারা বলে কোহিনুর না দিলে তারা বরকে ভিতরে যেতেই দেবে না। কিন্তু সেই কবে আত্মসাৎ করা কোহিনুর কেউ চাইলেই কি দিয়ে দিতে হবে নাকি? মামা বাড়ির আবদার? বরপক্ষ দরদাম শুরু করে ৫ হাজার থেকে। হট্টগোলের ভেতর ভীড়ের পেছন থেকে একজন দুরসম্পর্কের শ্যালিকা বলে ওঠে, ‘সামান্য কয়টা টাকা দিতে পারে না, আসছে আমার রাজপুত্তুর!’ শেষ পর্যন্ত ত্রিশ হাজারে দফারফা হয়। নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়ে এ যাত্রায় মানসম্মান বাঁচে প্রিন্স হারির।
বিয়ের স্টেজে বসার কিছুক্ষণ পরই কনেপক্ষের নিয়োগকৃত একদল অভিজ্ঞ কমান্ডো সূক্ষ্ম অভিযান চালিয়ে রাজ পরিবারের প্রহরীদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে চুরি করে ফেলে হ্যারির জুতা জোড়া! জুতা হারিয়ে আবারও দেন দরবারে আসতে হয় ছেলের বাড়ির লোকদের! এবারে আরও হাজার পাঁচেক টাকা খসে যায়!
খাবার দাবারের কমতি ছিল না এই বিয়েতে। পুরান ঢাকার মনা পালোয়ানের কাচ্চি ছিলো এই বিয়ের প্রধান আকর্ষণ! তবুও কাচ্চিতে আলু কম টাইপ একটা শোরগোল উঠেছিলো। আবার অনেকেই জর্দার মিষ্টি এবং রানের মাংস পাননি বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযোগ করেন।
অন্যদিকে রাজকীয় এই বিয়ের ফটোগ্রাফির দায়িত্বে ছিলেন বিখ্যাত ফটোগ্রাফার প্রিতম রাজা। তবে গোপন সূত্রে জানা যায়, পেমেন্ট নিয়ে অসন্তুষ্ট প্রিতম রাজা। এখনো পেমেন্ট ক্লিয়ার না হওয়ায় তিনি মনোঃক্ষুণ। এ বিষয়ে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করেছে বর ও কনের পরিবার।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ সব বিষয় যেন কোনভাবেই জনসমক্ষে না আসে তার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ব্রিটিশ গোয়েন্দা বাহিনী। MI-6 এর একদল নিষ্ঠাবান গোয়েন্দার কল্যাণে এই ‘কাচ্চির আলু আন্দোলন’ দানা বেধে উঠতে পারে নি বলে জানা গেছে।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন