সচিবালয়ে গরু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সামনে গো-মাতার ব্রোঞ্জের মূর্তি দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না আমরা সঠিক জায়গাতেই এসে পড়েছি। পাকা দালানের ওপর গোবরের শৈল্পিক প্রলেপে এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে; মন্ত্রণালয়ের দেয়ালে দেয়ালে গরুর নান্দনিক চিত্রকলা; নানাকক্ষে চেয়ার টেবিলে বসে সুন্দর অফিস করছেন গরুরা।
গোবিষয়ক মন্ত্রী গোবর্ধন যোগী গরুর শিং-এর শিরোস্ত্রাণ পরে বৈঠক করছেন গো-বিজ্ঞানী ও গবেষকদের সঙ্গে।
বৈঠকে ‘গো-বিজ্ঞান অনুসন্ধান’-এর প্রধান সমন্বয়কারী সুনিল মানসিংখা বলেন, ‘প্রায় ৩০টি রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব গরুর মূত্র দিয়ে।’
জাতীয় আয়ুর্বেদ অনুষদের পরিচালককে সংকর রাও বলেন, 'আয়ুর্বেদ ঔষধ হিসেবে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী গরুর মূত্র।'
রামদেব পতঞ্জলির পরিচালক বলকৃষ্ণ বলেন, ‘আমরা দিনে প্রায় ২০ টনের মতো গরুর মূত্র উৎপাদন করি। তা সত্ত্বেও আমরা চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছি।’
এমনকি হারবাল চিকিৎসায়ও ব্যবহার করা হচ্ছে গোমূত্র। গত দুই দশক ধরে প্রায় ১২ লাখের বেশি ক্যান্সার রোীর চিকিৎসা গোমূত্রের মাধ্যমে করা হয়েছে।
মন্ত্রী মহোদয় অত্যন্ত গর্বিত ভঙ্গিতে বলেন, 'গো-মূত্রে যে স্বর্ণের উপস্থিতি রয়েছে; সে কথাটা বলুন; গো-হত্যা সোনার ডিম দেয়া হাঁস হত্যার মতোই নির্বোধের কাজ। তাই তো আমরা গো-রক্ষা আইন প্রণয়ন করেছি।'
বৈঠকে গো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোবেচারান্দ্র মিশ্র জানান, তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মোহন ভাগবত নামে একজন গবেষক গো-অর্থনীতিতে ডি-লিট ডিগ্রি লাভ করেছেন। তার গরু বিষয়ে একাধিক গ্রন্থও রয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত একজন গো-কর্মকর্তা জানতে চান, 'এই গবেষকের বিশেষত্ব কী!'
উপাচার্য উত্তর দেন, 'এই গবেষক বিশ্ববিদ্যালয়ে গো-শালা নির্মাণ করে দেখিয়েছেন, গরুর দুধ বিক্রি করে একটি অনুষদের খরচ নির্বাহ করা যায়। তবে তার গবেষণা শিরোনামঃ শুধুমাত্র দুধ নয়, গরুর অন্যান্য বর্জ্য পদার্থের উপরেই মূল অর্থনৈতিক ভিত পোক্ত হয় গোশালাগুলির।'
গো-মন্ত্রী বলেন, 'খুব গুণী গবেষক; ঠিক জায়গাটি বেছে নিয়েছেন; বিপথগামীদের গো-মাংস খাওয়ার বদ-অভ্যাসের কারণে আমাদের শিশুরা গরুর দুধের পুষ্টিগুণ থেকে বঞ্চিত হয়।'
গো-সার্ভিসের আরেক কর্মকর্তা প্রস্তাব রাখেন, 'গরু যেহেতু আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক; আমরা ইউনেস্কোর কাছে গরুকে ইউনেস্কো হেরিটেজ এনিম্যাল হিসেবে ঘোষণার জন্য প্রস্তাব রাখতে পারি।'
মন্ত্রী মহোদয় গো-মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী গোহারা শাহকে অনুরোধ করেন ইউনেস্কোর সঙ্গে লবি করার বিষয়টি দেখতে
গো-পুলিশের মহাপরিদর্শক উসখুশ করছিলেন। গো-মন্ত্রী জিজ্ঞেস করেন তাকে, আপনি কী কিছু বলতে চান!
গো-পুলিশ পরিদর্শক বলেন, 'আমাদের লোকবল বাড়ানো দরকার; গরুর মাথাপিছু গো-পুলিশের সংখ্যা খুবই কম।'
গো-মন্ত্রী আশ্বাস দেন, 'বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখা হচ্ছে।'
গো-মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী গোহারা শাহ পরমাণু গবেষক ড. গোকুল সুব্রামানিয়ামকে তার গবেষণা আপডেট জানানোর অনুরোধ রাখেন।
ড. গোকুল বলেন, 'গোবরের মাঝে পারমানবিক তেজস্ক্রিয়তা নিষ্ক্রিয়করণের উপাদান রয়েছে। সুতরাং পারমানবিক হামলা ঠেকিয়ে দিতে গোবরই যথেষ্ট হবে।'
গো মন্ত্রী বলেন, 'বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রককে অবহিত করা হোক।'
গো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোবেচারান্দ্র বলেন, 'গো-বিজ্ঞান স্কুল-কলেজের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা গেলে; ভবিষ্যতে বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখায় গো-বিদ্যার অধ্যয়ন সম্ভাবনার নতুন জানালা খুলে দিতে পারে।'
গো-প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'সাধু প্রস্তাব। আমি আরেকটা বিষয় ভাবছিলাম; দেখুন রঙ খেলাটা হোলি উতসবের মাঝেই সীমাবদ্ধ। অথচ আবহমান কাল ধরে গোবর ছোড়া উৎসব আমাদের প্রাত্যহিক বিনোদনের অংশ। সংস্কৃতি মন্ত্রকের মাধ্যমে গোবর ছোড়া উৎসবকে সর্বজনীন উৎসব হিসেবে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া গেলে জনজীবনে তা ভীষণ আনন্দের খোরাক জোটাবে।'
গো-মন্ত্রী এক গো-কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন, দ্রুত এই সর্বজনীন গোবর ছোড়া উৎসব বিষয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রকে চিঠি দেয়া হোক।
ঘাবড়ে গিয়ে গো-কর্মকর্তার হাত থেকে কফি পড়ে যায় মেঝেতে।
রামদেব পতঞ্জলির পরিচালক বলকৃষ্ণ বলেন, 'কোন অসুবিধা নেই মেঝের ময়লা দাগ মুছে ফেলতে রয়েছে আমাদের পতঞ্জলি ফ্লোর ক্লিনিং লিকুইড। টিস্যু সহযোগে মুছে দিলেই ঝকঝক করবে মেঝে।'
গর্বে গো-মন্ত্রী বুকের ছাতি ছয় ইঞ্চি বেড়ে যায়। সভায় উপস্থিত সবাই যথাসম্ভব বুকের ছাতি ছয় ইঞ্চি বাড়িয়ে বসতে চেষ্টা করে।
সভার এক গো-প্রতিনিধি অভিযোগ করেন, 'প্রতিটি গরুকে একটি ন্যাশনাল আইডি কার্ড দেবার ব্যাপারটা থেমে আছে কেন! ভোটাধিকার গরুদের গণতান্ত্রিক অধিকার। সুতরাং আর দেরি কেন!'
গো-মন্ত্রী আশ্বাস দেন, 'এ ব্যাপারে কাজ চলছে। একই সঙ্গে একটি করে রেশন কার্ড পাবে গরুরা। এতে তারা সহজেই তাদের খাবার জোগাড় করতে পারবে। তাছাড়া দেশব্যাপী গরুদের জন্য হেলথ ক্যাম্প চালু হচ্ছে। গরুরা কল্যাণ রাষ্ট্রের স্বাদ শীঘ্রই পাবে।
গো-পুলিশের মহাপরিদর্শক এর সঙ্গে যুক্ত করেন, 'শহরের রাস্তাগুলোতে গরুর পথচারী অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। কোন গাড়ি এসে যদি কোন গরুকে ধাক্কা দেয়; তাহলে বড় জরিমানার টাকা গুনতে হবে গাড়িচালককে।'
গো-প্রতিনিধি বলেন, 'সভা শেষে মন্ত্রকের গো-মিলনায়তনে গরুরা একটি ছোট সাংস্কৃতিক পর্ব পরিবেশন করবে; আপনারা সবাই আমন্ত্রিত।'
গো-মন্ত্রী বলেন, 'চলুন তবে সেখানেই যাওয়া; সাংবাদিক ভাইয়েরা আসুন; দেখে যান গরুদের সাংস্কৃতিক নবজাগরণ কীভাবে ঘটেছে!'
গো-মিলনায়তনে ঢুকতেই রীতিমত চক্ষু চড়ক গাছ। অসম্ভব সেজেগুজে গরুরা বসে আছে।
সাংবাদিকরা বিস্ময় প্রকাশ করতেই গো-প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'গরুদের জন্য বিউটি পার্লারের চল হচ্ছে। চালু হয়েছে গরুদের জিম ও সুইমিংপুল। আর এই মিলনায়তনে যে আলোকসজ্জা দেখছেন; এসবই গো-বিদ্যুতের জাদু।'
অনুষ্ঠানের শুরুতে গরু ঐক্য পরিষদের সভাপতি তার সংক্ষিপ্ত ভাষণে বলেন, 'আমরা চাই সরকারি চাকরিতে গরুদের জন্য বিশেষ কোটা থাকবে। ক্রীড়া-সংগীত-চলচ্চিত্রে গরুদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। আর আমাদের একান্ত চাওয়া অন্ততঃ একটি গরু নভোচারী হিসেবে মহাকাশযানে ভ্রমণের সুযোগ পাক। গরু আকাশে উড়তে পারে না; এই মিথটি ভেঙ্গে দিতে হবে।'
এরপর শুরু হয় সমবেত সংগীত,
'রজনী প্রভাতে উঠি ব্রজরাখালগণ
সজ্জা করে পরস্পর চরাতে গোধন
এক স্থলে হৈল যত রাখাল মণ্ডলী।'
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন