থাকব নাকো বদ্ধ ঘরে দেখব এবার জগত্টাকে
কেমন করে ছুটছে মানুষ ফন্দি-ফিকির-রথের পাকে।
যুগ হতে যুগ যুগান্তরে
ছুটছে তারা কেমন করে
কিসের নেশায় কিসের মজায় ছুটছে তারা লাখে লাখে
ব্যাপারখানা দেখব এবার, এই কপালে যাহাই থাকে!
কেমন করে দু-চারজনে ফরেন থেকে ‘জিনিস’ আনে
হরেক চিজে ভরায় বাড়ি তুষ্ট করে বিবিজানে
ঝপাং করে প্লেনে উঠি
কোথায় যে সব চলছে ছুটি
ক্যামনে কামায় দু-চারজনে টাকা-পয়সা নানানখানে
ফুলে-ফেঁপে কেউ বড় হয়—নদী যেমন জোয়ার বানে!
কেমন করে ওঠায় বিভব মানব-শিশু পকেট কেটে
ধান্দাবাজি ক্যামনে করে—বুদ্ধি কত ওদের পেটে!
কেমন করে ঘুষ লোকে খায়
চোর ঘোরে রোজ কিসের আশায়
কেমনে করে রাহাজানি দিনদুপুরে পুকুরচুরি
দেখব আমি এসব ব্যাপার এবার থেকে বিশ্ব ঘুরি!
রইব নাকো বদ্ধ খাঁচায় দেখব এবার নিজের চোখে
কেমন সুকৌশলে চালাক ঠকায় হাবাগোবা লোকে!
আমার সীমার বাঁধন টুটে
দশ দিকেতে চলব ছুটে
চক্ষুলজ্জা রাখব না আর ভদ্রতাটা ফেলব ছুড়ে,
‘সুখ’ জিনিসটা দেখব আমি আপন হাতের মুঠোয় পুরে।
এই করিনু পণ মোরা এই করিনু পণ
কোটিপতির মতো করে গড়ব এ জীবন
বাঁচব মোরা সহজ সুখে
তেজ ফুটবে সিনায় বুকে
মোদের দেখে ভিরমি খাবে সবার দুনয়ন।
সাগর যেমন গ্রাস করে নেয় সকল নদীর জল
ফুলে-ফেঁপে যেভাবে হয় দুরন্ত উচ্ছল
তেমনি করে মোরাও সবে
সকল কিছু শুষব ভবে
মোদের পায়ে হুমড়ি খাবে এই ধরণীতল।
সূর্য যেমন নিখিল ধরায় করে আলোকপাত
আলোর ধাঁধায় সকল লোকের চক্ষু করে মাত
তেমনি মোরা বিশ্বলোকে
ধাঁধিয়ে দেব সকল চোখে
মোদের দেখে দূর হতে লোক করবে প্রণিপাত।
মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে
যুগ যুগ ধরে আমি বাঁচিবারে চাই
সুন্দর বিল্ডিং আর পুষ্পিত কাননে
যদি হুরপরি আর ব্যাংক ব্যালান্স পাই...
শহরে বাসেতে চলা চির তরঙ্গিত
ইচ্ছা হয়, করে ফেলি ক্যাডিলাক ক্রয়
সুখের পায়রার মতো গাহিয়া সংগীত
নব্য লাটের মতো মাতাই আলয়।
তা যদি না পারি তবে বাঁচি যত কাল
তোমাদের মধ্যিখানে লভি যেন ঠাঁই
তোমাদের শিরোপরি ভাঙিয়া কাঁঠাল
মজাসে আরাম করে একা একা খাই।
ইহাতে কাহারও যদি মাথা ফাটে হায়
মেডিকেলে গিয়ে তাহা করিয়ো সেলাই।
গাহি তাহাদের গান...
অপরের গায়ে পিক ফেলে যারা মজা করে খায় পান।
মোটরে ও বাসে পথ পাশে পাশে ছিটিয়ে রঙিন পিক
অফিসে দেয়ালে মনের খেয়ালে ভরায় চতুর্দিক,
তাহাদের মতো বেপরোয়া লোক কটা আছে ধরণীতে?
মাতিয়া উঠিছে হৃদয় আমার তাদের মহিমা-গীতে!
তাহাদের পরে কখনো করি না গোসা,
কদলি খাইয়া পথমাঝে যারা ফেলে যায় তার খোসা!
সে নবাবজাদা ছিটায় যে কাদা হাঁকিয়ে মোটরগাড়ি,
ভাবে যত এই পথের দুপাশে পায়ে হাঁটা নরনারী
ইহাদের জামা প্যান্ট শাড়িগুলো ধুইতে লাগে না টাকা
লন্ড্রিঅলারা যেন ইহাদের মামা খালু নানা কাকা!
অপরের লাগি যাহাদের মনে কোনোই ভাবনা নাই,
সকাল-সাঁঝেতে সকল কাজেতে তাহাদের গান গাই!
গাহি গান তাহাদের...
বেহায়া যাহারা, চোখের চামড়া কিছু নাই যাহাদের!
তাহাদেরও গান গাই...
অপরে যাহারা দোহন করিয়া দূরে বসে ক্রিম খায়!
যাহারা শুধুই তকে তকে ঘোরে যাহারা ফেরেববাজ,
অন্যের শিরে কাঁঠাল ভাঙিয়া খাওয়াই যাদের কাজ,
নিজেদের ভোগে লাগায় যাহারা সকলের যত সব
তাহাদের গান গেয়ে যাই আমি—তারা নরপুঙ্গব!
গান আমি গাহি তারি...
চতুর যে জন চালাক যে জন, হোক নর বা সে নারী!
সে নারীর গান গাই...
একের বুকে যে ভর করে শেষে ফাঁকতালে সটকায়!
যে পুরুষ বলে প্রেয়সীরে তার: ‘ভালোবাসি আমি তোমা’
তারপর চান্স পাইলে পালায়, মারিলে অ্যাটম বোমা
আর কোনোদিন আসে না ফিরিয়া হতভাগিনীর কাছে
তারও জয়গান গাওয়ার জন্য হৃদয় আমার নাচে!
তাহাদের গান গাহিতে আমার হৃদয় আত্মহারা
মজা লুটে এসে নিশীথে বধূকে অপমান করে যারা!
বাহিরে যাহারা চোরের মতন, ঘরেতে ফিরেই বীর,
তাহাদের কথা ভাবিতে গেলেই নত হয়ে যায় শির!
গাহি তাহাদেরও গান...
বাপ-মাকে যারা বিষবৎ ত্যেজে বউ লয়ে অজ্ঞান!
অথবা যাহারা বাপ-মাতে হারা বউ-পানে মন নাই
এই সংসারে আমি বারে বারে তাহাদের গান গাই!
কিছু লোক ভবে রয়েছে নীরবে হাতে বাজারের ব্যাগ,
শুধুই কিছুটা গেলার জন্য সকলি করেছে ত্যাগ,
পায়ে হেঁটে যেতে বাসে গুঁতো খেতে জন্ম নিয়েছে যারা
যেখানেই যাক ঘানির জোয়ালে ফিরিতে যাদের তাড়া,
যারা মনে করে জীবন মানেই খোকার মায়ের শাড়ি
কিছু ট্যাবলেট, কিছু মিকশ্চার, বেবিফুড ঘর-বাড়ি,
কিছু দানাপানি দিয়ে প্রাণখানি পালন করিয়া যারা,
জীবনের সব মোক্ষ লভেছে—ভাবিয়া আত্মহারা,
যাদের জীবনে পান থেকে চুন কোনোদিন খসে নাই,
তাহাদের লাগি দিবানিশি জাগি তাহাদেরও গান গাই!
একদা ছিল না টাকা পকেট যুগলে
ছাড়িল বন্ধুরা মোরে, সেই ক্ষোভানলে
চুপি চুপি একদিন দুঃখাকুল মনে
গেলাম বিপণিপথে ভ্রমণ কারণে।
দেখি সেথা এক লোক বহু টাকা তার
অমনি পুরোনো দুঃখ বাড়িল আমার।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন