বিটিভি মানেই এক নস্টালজিক সময়। আর কোন চ্যানেল না থাকায় মঙ্গল আর বৃহস্পতিবারের ধারাবাহিক নাটক, শুক্রবারে মুভি অব দ্য উইক, বুধবারে ডাবকৃত বিদেশি সিরিয়ালসহ সপ্তাহব্যাপী নানা অনুষ্ঠান আমরা হা করে গিলতাম। বিরক্ত লাগতো রাত দশটার খবরের পর নির্ধারিত অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে হুট করে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের আসর 'সুর লহরী' চালু হলে। টক শো তখনো সেভাবে জনপ্রিয় হয়নি বলে সেটায় খুব একটা মনোযোগী হয়নি বিটিভি। তবে ছিল। আটটার খবরের খবর পাঠকরা ছিলেন ন্যাশনাল স্টার। আবহাওয়ার সংবাদে 'অন্যান্য নদী বন্দরকে কোন স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে হবে না' শুনলেই বুঝতাম খবর শেষ, এবার আসল অনুষ্ঠান শুরু হবে। আজান শিখেছি বিটিভি দেখেই। আর আজানের অর্থসহ দোয়াও মুখস্ত হয়ে গিয়েছিল বিটিভি দেখে। জাতীয় টিভি বিতর্কের চৌকস ছেলে মেয়েদের বিতর্ক শুনতে শুনতে মনে হতো কত কী জানে এই ছেলেমেয়েরা। আর ঝগড়ায়ও নিশ্চয়ই এদের সাথে কেউ পেড়ে ওঠে না।
ঘুমাতে যেতাম টিভি বন্ধের জাতীয় সঙ্গীত শুনে। তবে সে সময় অনুষ্ঠানের মাঝে আরেকটা জিনিস গিলতাম, তা হলো বিজ্ঞাপন। তখন মূলত লিরিকধর্মী বিজ্ঞাপনই প্রচারিত হতো বেশি বিটিভিতে। শুনতে শুনতে সবগুলোই যেন আমাদের মুখস্ত হয়ে গিয়েছিল। অনেক বাচ্চাকাচ্চা তার জীবনের প্রথম গান বলতে সেই টিভি বিজ্ঞাপনের লিরিকই মুখস্ত শোনোতো। যদিও বিরক্ত লাগতো 'দ্য সোর্ড অব টিপু সুলতান' এর মাঝে এবি ব্যাংকের বিজ্ঞাপন আর লজ্জায় লাল হয়ে যেতাম কাশ ফুলের নরম ছোঁয়া আর রাজা ও প্যানথার কনডমের বিজ্ঞাপনে।
ছোটবেলায় শেখা জিনিস সহজে ভুলে যাওয়া যায় না বলে সেই বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেল এখনো আমাদের মাথায় ঘোরে। কোথাও সেই সুর বেজে উঠলেই আমাদের কান খাড়া হয়ে। মনের অজান্তেই গুনগুন করে গেয়ে উঠি সেই গান। আর এবার তাকে উসকে দিয়েছে তৌহিদ শাহরিয়ার। তিনি পুরোনো কিছু বিজ্ঞাপনকে শুধু গিটার আর ভোকালে মিলে একসাথে করেছেন। যদিও এই বিজ্ঞপনগুলো তত পুরোনো আমলের বিটিভির বিজ্ঞাপন নয়। তবে দারুন মনোমুগ্ধকর একটি কাজ। সারাদিন শোনার মতো। ধন্যবাদ তৌহিদ।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন