চিড়িয়াখানার খাঁচায় ঢুকে আমার যে অবস্থা হলো

১৪৫ পঠিত ... ১৭:৪২, জুলাই ০৩, ২০২৪

25 (21)

আমাকে বেশ বড় সাইজের একটা খাঁচায় রাখা হয়েছে। খাঁচার বাইরে সুবিশাল বনভূমি। কিন্তু আমার পায়চারি করার জায়গা এই এতটুকুই। খাঁচার বাইরে এক কদম পা ফেলারও সুযোগ নেই আমার।

বিকেল হতেই দলে দলে ওরা আসতে শুরু করলো আমার খাঁচার কাছে। বাঘ, সিংহ, হাতি, জিরাফ, ধনেশ পাখি, অজগর, বানর, কুমির, ভালুক আরও অনেক অনেক প্রাণী। এরা সবাই খাঁচার চারপাশ থেকে উৎসুক দৃষ্টিতে আমাকে দেখছে। কেউ কেউ আবার গাছের ওপর বসেও দেখছে।

একটা বানর আমার দিকে কিছু বাদাম ছুঁড়ে দিলো। বললো, নে খা!

আমার খেতে ইচ্ছে করছে না তাই চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম।

বাঘ শাবকটা তার বাবাকে প্রশ্ন করলো, বাবা ওকে আটকে রেখেছে কেন?

বাঘ বললো, আটকে রাখিনি বাপ। এটা হলো চিড়িয়াখানা। এই বনের বাইরে যারা বাস করে তাদের সম্পর্কে তোমাদের ধারণা দেওয়ার জন্য ওকে এখানে নিয়ে এসেছি আমরা। এই বনের বাইরে পৃথিবীটা আরও বিশাল। তোমাদের এসব জানতে হবে না? নাহলে পৃথিবীতে টিকবে কী করে?

বাঘ শাবক বললো, কিন্তু ওকে যে নিয়ে এলে ওর গুহাতে সবাই চিন্তা করছে না? ওর মা ওর জন্য নিশ্চয়ই কান্না করছে?

পাশ থেকে সিংহ বলে উঠলো—আরে ব্যাটা, তুই হচ্ছিস বাঘের বাচ্চা, বেড়ালের মতো কথা বলিস ক্যান? দুঃখের কিছুই নাই। এটা হচ্ছে মদ্দা মানুষ। এটার জন্য আমরা একটা মাদী মানুষও নিয়ে আসবো। এদের অনেকগুলো ছা হবে। তখন দেখবি নতুন খাঁচা বানাতে হবে।

বাঘ শাবকটা এই জবাবে সন্তুষ্ট হলো কি না বোঝা গেল না। দূর থেকে একটা ইমপালা হরিণ আমার দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অনেকক্ষণ ধরে। হাতিটা তার শুঁড় বাড়িয়ে আমাকে খাঁচার ভেতর ছুঁতে চাইলো। আমি একপাশে সরে যেতেই একটা হনুমান গাছের উপর থেকে একটা লেবু ছুঁড়ে মারলো আমার মাথায়!

আচমকা আঘাতে আমি 'মাগো' বলে চিৎকার দিতেই সবাই একসাথে চেঁচামেচি করে বলাবলি করতে লাগলো, আরে! মানুষ ডেকেছে! মানুষ ডেকেছে! বাহ্! মানুষের ডাক তো বেশ সুন্দর!

জিরাফ তার কাঁধে চড়িয়ে দুই তিনটা বানরকে গাছ থেকে নামিয়ে এনে খাঁচার সামনে দাঁড়ালো। তারপর বললো, মার দেখি, সব ফল ছুঁড়ে মার। মানুষের ডাক শুনব!

চারপাশ থেকে একের পর এক ফল ছুঁড়ে মারা হচ্ছে আমার দিকে। কোনোটা মাথায় লাগছে, কোনোটা লাগছে হাতে, পায়ে, গালে, নাকে...  সরতে সরতে খাঁচার দেওয়ালের কাছে যেতেই সবাই নখ দিয়ে খোঁচা মারছে। উফফ! পাগল হয়ে যাচ্ছি!

আমার মেয়েটার চেহারা মনে পড়ছে খুব। বাসা থেকে বের হবার সময় বলেছিল, বাবা, আমার জন্য কিছু একটা এনো? আমি বলেছিলাম, কী আনবো মা? ও মিষ্টি হেসে বলেছিল, কিছু একটা আনলেই হবে। তোমার যা ইচ্ছা।

সন্ধ্যা হয় আসছে। দূরে একদল শিম্পাঞ্জির উল্লাস শোনা যাচ্ছে। দলটা কাছাকাছি আসতেই তাদের কাঁধের ওপর উল্টে থাকা শাড়ি পরা একজন নারীকে দেখতে পেলাম।

শিম্পাঞ্জিদের নেতা সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো, এই যে নিয়ে এলাম আরেকটা চিড়িয়া। এবার আমাদের এই চিড়িয়াখানা আরও বড়ো হবে। তবে এই দুটোকে কয়েকদিন খাদ্য দেওয়া যাবে না। প্রচণ্ড ক্ষুধায় মরার অবস্থা হলে তারপর খাদ্য দিতে হবে। তা নাহলে পোষ মানবে না সহজে। সাবধান এই মানুষরা কিন্তু খুবই ভয়ংকর, এরা সহজে পোষ মানে না।

১৪৫ পঠিত ... ১৭:৪২, জুলাই ০৩, ২০২৪

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top