বেহেশতে একজন মোল্লা ইমিগ্রেশন পায়। সে বেহেশতে ঢুকেই হাঁটতে শুরু করে হনহন করে। চুনিলাল ফ্যানটার ক্যানে রুহ আফজা মিশিয়ে খাচ্ছিলো। যাতে বেহেশতের পুলিশ ধরতে না পারে । মোল্লা চুনিলালের দিকে এগিয়ে আসে। জিজ্ঞেস করে, আপনি কি মুসলমান?
চুনিলালের মেজাজ চড়ে যায়, এখানে মানুষেরা বসবাস করে । আপনি মশাই জীবনের এই সুন্দর গন্তব্যে পৌঁছে এসব কী প্রশ্ন করেন?
মোল্লা রাগে তিড়িবিড়ি করে, সে কী! বেহেশতে মসজিদ কোথায়? পথটা দেখাইয়া দেন।
চুনিলাল বলে, বেহেশতে মসজিদ-মন্দির-চার্চ-সিনাগগ-প্যাগোডা এসব কিছুই নেই।
মোল্লা লাফ দিয়ে ওঠে, বলেন কী! তো অসুবিধা নাই ইসলামী ব্যাংকরে ফোন কইরে টেকাটুকা আইনে মসজিদ বানাইয়া ফেলবানে।
চুনির মেজাজ সপ্তমে উঠে যায়, এক এই ধর্মের বিভাজন দিয়ে পৃথিবীটাকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে শখ মেটেনি আপনার? এখানে এসেও ধান্দা করতে চান? আপনারে দেখতে ইচ্ছা করতেছে না।
মোল্লা হাসে, সবে তো আসছি; আপনেগো এইসব নাস্তিকপানা টাইট দিয়ে দেবানে। খুব তিয়াস পাইছে। কইতে পারেন দুধের নহরটা কোনদিকে?
চুনিলাল বলে, জিয়াউর রহমান বলে এক লোক খাল কেটে দুধের নহরে কুমীর ছেড়ে দিয়েছে। খাইলে এই ফ্যানটা খাইতে পারেন!
মোল্লা প্রশ্ন করে, ইহা কি হালাল?
চুনি মুচকি হাসে, বেহেশতে সব হালাল । হারাম জিনিস সব পৃথিবীতে।
মোল্লা চক ঢক করে পুরোটা ফ্যানটা মেরে দেবার পর তার পেটে চোঁ চোঁ শব্দ হয়। এরপর তার পা দুটো টলতে থাকে; চক্ষু লাল। সে ক্ষিপ্ত হয়ে বলে; হুর কোথায়! আমার ভাগের হুরগুলি কুথায় গ্যালে পাবোয়ানে?
আপনি বেহেশতের পুলিশদের জিজ্ঞেস করেন।
-আপনে জনাব কি হুর বিনা আছেন?
-দেখুন মোল্লা সাহেব আমরা পলিটিক্স করি; আর হুর নিয়ে পড়ে থাকার
সময় নাই।
মোল্লা ঘন হয়ে আসে। আপনেরা নাস্তিকরা শুনছি একটা দিকে আমগো মতো; চোখ টিপে চুনিলালকে বলে, আপনার সহিত ইশক অনুভব করতেছি।
চুনিলাল পরিস্থিতি বেগতিক দেখে মোল্লাকে পৌঁছে দেয় হুরদের এপার্টমেন্টে। মোল্লার উত্তেজিত দশা দেখে হুররা তাকে এপার্টমেন্টে ঢুকতে দেয় না।
হঠাৎ দেবদাসকে চন্দ্রমুখীর এপার্টমেন্টে ঢুকতে দেখে মোল্লা এগিয়ে এসে বলে, ও ভাই আমারে হুরেরা নিলো না; এখন করি কী?
দেবুদা বলে, হুরদেরও ফ্রিডম অফ চয়েস আছে; এতো উত্তেজিত লোক দেখলে যে কেউ ভয় পাবে!
: আপনে কি হুরের বাসায় যান?
: না না আমার বান্ধবীর বাসা।
: নাউজুবিল্লাহ মিন জালেক; ইহা অনৈসলামিক । ইহা সহী নয়।
দেবুদা মোল্লার দিকে তাকিয়ে বলে, জাস্ট শাট আপ।
মোল্লা কুঁকড়িয়ে লবির এক কোণায় সেঁটিয়ে যায়। উবু হয়ে তবু একবার দেখে নেয় চন্দ্রমুখীর চাঁদপানা মুখখানা ।
দেবুদা এপার্টমেন্ট ঢুকতেই চন্দ্রমুখী তার ভাঙ্গা টেপ-রেকর্ডারটি অন করে।
--তুমি আজকাল আমাকে কি টিস্যু পেপার মনে করো? তুমি কি আমাকে একটুও ভালবাসো না? কখন কোথায় যাও কিছুই জানাও না। আমি জানি আমার এপারটমেন্টা ছোট; এটা তোমাকে দিলে তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে!
দেবুদার মাথা চক্কর দেয়, চন্দ্রমুখী আজকাল আমার পলিটিক্যাল এক্টিভিটিজে তোমার কোন আগ্রহ নাই; সবসময় ধমক দিয়ে কথা বলো। আমাদের সম্পর্ক আর টিকবে না চন্দ্র।
চন্দ্রমুখী ক্ষেপে ওঠে, ও এতোদিনের এতোকিছু এসব কিছুই না? তোমার জন্য তোমার সব কমন ফ্রেন্ডকে ফেসবুকে ব্লক করেছি; দ্যাখো দ্যাখো। প্লিজ ম্যারি মি দেবুদা।
মোল্লা বাইরে লবিতে বসে কান খাড়া করে। ইন্টারেস্ট পায়। যাক বেহেশতেও নারী-পুরুষ বিবাদ উপস্থিত।
দেবুদা ক্ষেপে বেরিয়ে যায় চন্দ্রমুখীর এপার্টমেন্ট থেকে।
মোল্লা চন্দ্রমুখীর দরজা নক করে বলে, আম্মাজী কুচ খানেকা মিলেগা? হাম বহুত ভুখা হুঁ।
চন্দ্রমুখীর মাতৃ হৃদয়ে দোলা লাগে । মোল্লাকে স্যান্ডউইচ বানিয়ে এনে দেয়।
মোল্লা বলে, আম্মাজী এই খানা খাদ্য কি হালাল?
চন্দ্রমূখী অত্যন্ত আদব লেহাজের সঙ্গে বলে জী হুজুর, ইহা হালাল।
দেবুদা বাড়ী ফিরে টিভি অন করতেই দেখে চন্দ্রমুখী একটি পিংক কালারের হিজাব পরে সংবাদ সম্মেলন করছে; সামনের সারিতে বসে সেই মোল্লা ।
প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়া ও আপুরা, দেবদাস আমাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রক্ষা করেনি।
মোল্লা কথা এগিয়ে দেয়, সে তোমারে ভোগ করছে আম্মাজী!
একজন সাংবাদিক বলে, সমঝোতার ভিত্তিতে ঘনিষ্ঠতা নারী-পুরুষ উভয়েই উপভোগ করে। ভোগ একপক্ষীয় হয় কীভাবে!
চন্দ্রমুখী শুরু করে, দেবদাসের চরিত্র খুব খারাপ । ঘরে তার বউ পার্বতী; তাকে ফাঁকি আমার সঙ্গে প্রেম করে। আবার আমাকে ফাঁকি দিয়ে রাশিয়ার বেদাতী আনার সঙ্গে ফষ্টিনষ্টি করে।
একজন নারীবাদী সাংবাদিক দাঁড়িয়ে বলে, আপনার উচিত ধর্ষণ মামলা করা।
অমনি ব্রেকিং নিউজ চলে আসে, দেবদাসের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করছেন ভিকটিম চন্দ্রমুখী।
পার্বতী চিৎকার করে বলে, ওহ তার মানে আমাকে ফাঁকি দিয়ে তুমি চন্দ্রমুখীকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছো?
এমন সময় টিভিতে চলা প্রেস কনফারেন্সে একজন সাংবাদিক বলে, দেবদাস তো বিবাহিত সে আপনাকে বিয়ে করবে কীভাবে!
মোল্লা লাফ দিয়ে উঠে বলে, ওটা আমার উপর ছেড়ে দেন। এদের মুসলমান বানায়ে বিয়ে দেবানে। চাইরঠো বিয়ার পারমিশান তো আছে!
পুরো বেহেশতে রিরি পড়ে যায় দেবদাসের স্ক্যান্ডালে । ফেসবুক-টুইটার ভরে যায় নারীবাদীদের ঘৃণা প্রকাশে । চন্দ্রমুখীর হিজাব তাকে এক উচ্চতর পরিমাত্রা দেয় পবিত্রতার ।
ভিট্টোরিয়া ওকাম্পো স্টেটাস দেয়, দেবদাসের বিরুদ্ধে মামলা হোক; এরপর তার গুরু ঠাকুরটাকেও আমি দেখে নেবো ।
বেহেশতের শান্তি নিকেতনের পরিস্থিতি থমথমে । কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দেবুকে ফোন করেন, দেবু বাসায় থেকো না; গ্রেফতার এড়াতে অন্য কোথাও চলে যাও।
সরোজিনী নাইডু লিখেছেন, কে জানে জিন্নার মধ্যে একজন দেবদাস আছে; যে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে রাজনীতির অজুহাতে ।
গান্ধীজী পরিস্থিতিতে ঘাবড়ে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে ফোন করেন, ও মুজিব বেহেশতে তো থাকা যাবে না কী শুরু হয়েছে দেখছো।
বঙ্গবন্ধু বলেন, এই প্যাঁচটা লাগালো কে বুঝছি না। অশান্তির আমদানি হলো কার হাত ধরে দাঁড়ান খোঁজ নিই।
সুচিত্রা সেন ফেসবুক স্টেটাসে লিখেছেন, উত্তম কুমারেরও দেবদাসের মত জেলখানার ভাত খাওয়া জরুরি।
দেবদাস চুনিলালের ট্যাক্সিতে করে রাশান বান্ধবী আনার বাসায় পৌঁছে যায়।
আনা সান্ত্বনা দেয়; এই ফিমেল হ্যারাসমেন্ট কেস টিকবে না। আমি তোমার পাশে আছি দেবু।
দেবুদার চোখ ছল ছল করে, আচ্ছা তুমি কি মানবী নাকি দেবী' বেহেশত কর্তৃপক্ষ পার্বতীর সঙ্গে জোর করে বিয়ে দেবার পর তুমি রাগ করেছিলে; কিন্ত আমার পলিটিক্যাল এক্টিভিটিজে সব সময় পাশে আছো; এমনকী কাউকে বলোও নি যে আমি তোমাকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে বিয়ে করিনি।
আনা শান্ত করে দেবুদার ক্ষোভ ।
: দ্যাখো ভারতীয় উপমহাদেশের মেয়েদের জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য একটা বিয়ে করা; সোশ্যাল কান্ডিশনিংটাই এরকম । এরা বোঝাপড়া হবার আগেই কমিটমেন্ট চায়; সম্পর্কের ডেফিনেশান চায়। সোশ্যাল সিকিউরিটি এরা বিয়ের মাঝে খৌঁজে। অনেক প্রেম-ভালোবাসার কথা এরা বলে; কিন্তু বিয়ে করতে চায় প্রতিষ্ঠিত লোক। মর্তে তোমার প্রতিষ্ঠা ছিলো না; কেউ বিয়ে করেনি তোমাকে; হেভেনে তুমি প্রতিষ্ঠিত; তাই বিয়ের জন্য চাপাচাপি।
হঠাৎ পুলিশের গাড়ির সাইরেনের শব্দ। সিঁড়িতে দুপদাপ করে উঠে আসে হেভেন পুলিশ ডিপার্টমেন্ট (এইচপিডি)-র লোকজন। আনা দেরুদাকে বলে, আমি আইনি লড়াই লড়বো; তুমি সারেন্ডার করো? ভয় পেয়ো না দেবু।
পুলিশ দেবুদাকে জেলে নিয়ে যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হেইট স্পিচ চলতে থাকে। ছাগল গোত্রের লোকেরা দেবুদার পক্ষে স্টেটাস দেয়, চন্দ্রমুখী কি দুধে ধোয়া তুলসীপাতা! অন্যদিকে খাসি গোত্রের লোকেরা স্টেটাস দেয়, দেবুর চরিত্র খারাপ; তাকে শাস্তি পেতেই হবে; সস্তা জনপ্রিয়তার লোভে মুমিনেরা দেবদাসকে সমর্থন করছে।
আনা উপায়ান্তর না দেখে চুনিলালকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাসায় যায়। কারণ গান্ধীজীর জ্বর এসে গ্যাছে বেহেশতের এই সামাজিক দাঙ্গা পরিস্থিতিতে ।
বঙ্গবন্ধু মুখে একটা পাইপ নিয়ে পায়চারী করছিলেন। আনাকে দেখে উনি বলেন,
আনা এতোদিন বেহেশতে এরকম ঘটনা ঘটেনি । নিশ্চয়ই এমন কেউ আছে যে নতুন এসেছে বেহেশতে । ঝামেলাটা সেই পাকিয়েছে। তাকে খুঁজে বের করো যে চন্দ্রমুখীকে এসব করতে প্ররোচিত করেছে।
চুনিলাল বলে, আমি তাকে চিনি বঙ্গবন্ধু। এক মোল্লার আগমন ঘটেছে হেভেনে; ভুল করে আমিই তাকে চন্দ্রমুখী যে এপার্টমেন্ট বিন্ডিং-এ থাকে সেখানে রেখে এসেছিলাম; কারণ সে হুর খুঁজছিলো।
বঙ্গবন্ধু একটু রেগে গিয়ে মেজাজ সামলে বলেন, তুমি কবেই বা একটা ঠিক কাজ করেছো চুনিলাল?
(চলবে)
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন