প্যাসেজ টু হেভেন (পর্ব-৪)
হেভেনে মর্ত্যের দুঃসংবাদে এলার্ম বাজে। মাঝরাতে এলার্মের শব্দে দেবুদার ঘুম ভাঙ্গে। কী ব্যাপার কী ঘটলো! জানা দরকার। পার্বতী তখনো জেগে। কিউ কী শাস ভি কাভি বউ থি দেখছে। সুতরাং টিভির চ্যানেল চেঞ্জ করতে চাইলে মুখ ঝামটা খেতে হবে। হঠাত ফোন আসে। পারুর মা ইনসমনিয়ার রোগী। তাই রাতদুপুরে পারুকে ফোন করে। ইতং বিতং গল্প করে। এই সুযোগে সিএন এন খুলে দেখে সমস্যা প্যালেস্টাইনে। কিন্তু সিএনএন যেহেতু জায়নিস্টদের মিডিয়া; আসল খবর পাওয়া কঠিন। বাধ্য হয়ে ফেসবুকে লগ ইন করে। সেখানেও হাজারটা ন্যারেটিভ। কেউ ছাগলের মতো এটাকে ধর্মযুদ্ধ বলে সিরিয়ার ছবি শেয়ার করে। কেউ বা বানরের মত জায়নিস্টদের পক্ষ নিয়ে কথা বলে, হামাসের পটকার জবাবে ইজরায়েল মৃদু লাঠিচার্জ করেছে। কেউ আবার হামাসের পক্ষে ফাল দিয়ে উঠছে। বিচিত্র এই মানবজাতি। জেনুইন দু’একটা পোস্ট পাওয়া গেল। মানবাধিকারের লংঘন। ইজরায়েলের নেতানিয়াহু হিটলার হিসেবে আবির্ভূত। অবাধে ফিলিস্তিনী নারী-শিশু হত্যায় কোন অনুতাপ নেই তার; সে মাংসের কারবারি। রেড ওয়াইনের চেয়ে রেড ব্লাড পাঞ্চ বেশী ভালো লাগে তার।
দেবুদা তার ইহুদী বান্ধবী শ্যারনকে ইনবক্স করে; ঘুমাইছো নি!
: ঘুমাই ক্যামনে; এ লজ্জা রাখি কোথায় দেবুদা; নির্বিবাদে ফিলিস্তিনী শিশু-নারী হত্যা।
দেবুদা পাশ ফিরে দেখে পারু ফোন কানের সঙ্গে নিয়ে সোফা কাম বেডে ঘুমিয়ে গেছে।
দেবুদা শ্যরণকে ইনবক্স করে, তোমার বাসায় আসতেছি।
: শিওর।
দেবুদা ইয়েলো বাই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। দুই লেন পরেই এপার্টমেন্ট। শ্যারন ওপর থেকে হাত নাড়ে। ব্যালকনি থেকে স্কার্ট পরা একটা মেয়ের হাতনাড়া দেবুদার কাছে নয়নাভিরাম দৃশ্য বলে মনে হয়।এপার্টমেন্টে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে শ্যারন কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। দেবুদার কাঁধটি একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ কাঁধ; সেখানে পৃথিবীর কতনা অশ্রুজল এসে সাতসমুদ্র রচনা করে।
দেবুদা প্রেমিক মানুষ; আন্তর্জাতিক সম্পর্কের চেয়ে আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্কটাই তার আগ্রহের জায়গা। তাই ইজরায়েল ফিলিস্তিনী সংঘাতের কারণ তার কাছে স্পষ্ট নয়।
শ্যারন এই সমস্যাটা কী জীবনেও মিটবে না!
: দেবুদা ইহুদীরা সৃষ্টিকর্তার খুব প্রিয় গোষ্ঠী ছিল। তিনি তাদের অনেক ধন দৌলত দেবার পরও তারা বিপথগামী হয়। ঝুঁকে পড়ে পার্থিব মোহের দিকে। সোনার বাছুর বানিয়ে তার উপাসনা শুরু করে। তখন সৃষ্টি কর্তা নির্ধারণ করেন; ইহুদীদের টাকা-পয়সা যথেষ্ট থাকবে কিন্তু হোমল্যান্ড থাকবেনা।
টাকা-পয়সা নিয়া বেশী বাড়াবাড়ি করতে গিয়ে বাংলাদেশের তারেক রহমানও হোমল্যান্ড হারিয়েছে; এটা ন্যাচারাল। প্রকৃতির প্রতিশোধ। আবার নিউটনের থার্ড ল’ও বলতে পারো।
: আমরা বিধাতার এ রায় মেনে নিয়ে ইউরোপে ভালই ছিলাম। কিন্তু খুব বড় লোক ইহুদীরা যাদেরকে ফ্রিমেসেন বলে; তাদের ধন সম্পদের দম্ভে আবার সৃষ্টিকর্তার বিধানকে চ্যালেঞ্জ করার শখ হয়। তারা চায় ইহুদীদের পৃথক রাষ্ট্র হবে। আমরা এটার পক্ষে ছিলাম না। বার্লিনে একটা ছোট্ট বুকশপ ছিলো। আমার ভালই চলে যেতো।
তো এই হিটলার ব্যাটার এরকম পাগল সারমেয় দশা কেন হলো!
: গণহত্যাকারীরা বিকৃত মানুষ; এদের ব্রেণটাই ওভাবে তৈরী; যেমন পাকিস্তানের ভুট্টো বা এমেরিকার বুশ বা আজকের ইজরায়েলের নেতানিয়াহু!
: এদের তাহলে হিটলারিস্ট ডগস বলা যায়!
: হ্যাঁ। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে ইহুদী ফ্রি মেসেনরা যারা আজকের জায়নিস্ট; এরাও হিটলারকে টাকা-পয়সা দিয়েছিল; ইহুদীদের এমন পরিস্থিতিতে ফেলতে; যারে তারা ইজরাইল রাষ্ট্রে বসবাসে রাজী হয়। কারণ কেউই সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেতে চায়নি। তাই তাদের বাধ্য করা হয় আজকের ইজরাইলে রিলোকেটেড হতে। যাদের টাকা-পয়সা বেশী ছিল; তারা কিন্তু এমেরিকা চলে যায়।
: এই জায়নিস্টরা তো ডেঞ্জারাস!
: হ্যাঁ এরা একই সঙ্গে চার্চিলকে আর হিটলারকে টাকা দিয়েছিলো যুদ্ধ করার জন্য। যুদ্ধের অনিশ্চয়তার মধ্যে ঢাকার দরবেশ স্টাইলে লন্ডনের শেয়ার বাজার লুন্ঠন করেছিল। এরাই পৃথিবীর সমস্ত ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে। দেখোনা; দিব্বি ইসলাম নামটি হাইজ্যাক করে ইসলামী ব্যাংক বানিয়েছে বাংলাদেশে।
মাথা ঘুরে শ্যারন।লাটিমের মত চক্কর দেয়। এই জন্যে গাজার মানবতা নিয়ে জামাতের ট্যাঁ ফুঁ নাই। স্পনসর তো বাপের চেয়েও বড়!
: ইজরায়েল ছিল একটা মাথা গোঁজার জায়গা। সেইখানে জায়নিস্টরা গরীব ফিলিস্তিনীদের কাছ থেকে দেদারছে জমি কিনতে থাকে। এদের জেদ চেপে যায়; এরা টাকা-পয়সা দিয়ে এমেরিকা-বৃটেনের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে; কিন্তু নিজেরা একটা রাষ্ট্র শাসন করতে চায়। তাই ইজরায়েলের সীমানা ইন্টারন্যাশনাল রিকগনিশান না পেলেও তারা নিজেদের রাষ্ট্র হিসেবে দাবী করে।
ফিলিস্তিনীরা যেহেতু দুর্বল; গরীব; তাদের পাশে দাঁড়ানোর কেউ নাই; তাই এদের উচ্ছেদ করে একটা বড় ইজরায়েল রাষ্ট্র গড়তে চায় জায়নিস্টরা।
শ্যারন ফেসবুকে একটা ফিলিস্তিনী শিশুর ছবি দেখায়; যাকে তাক করে আছে অনেক গুলো বন্দুকের নল। এই ফিলিস্তিনী শিশুটি জানে না, ধর্ম কী! রাষ্ট্র কী; অথচ ঘাতক নেতানিয়াহু শিশু হত্যায় সিদ্ধহস্ত। মানবতা বিরোধী রাক্ষস।
দেবুদা বাড়ী ফিরে দেখে পার্বতী বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। কত সৌভাগ্যবতী এই মানবী; পৃথিবীর কোন কিছুতে তার কিছু আসে যায় না। খাওয়া, ঘুম আর টিভিতে সিরিয়াল দেখা। ভগবান এমন সুখী মানুষই বেশী পাঠিয়েছেন জগতে। এরা ভেড়ার মতোই স্নিগ্ধ আর সুখী।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বেহেশতের শান্তিনিকেতনে ইজরায়েলী নেতা আইজাক রবিন আর ফিলিস্তিনী নেতা ইয়াসির আরাফাতকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো হাই-টির ব্যবস্থা করতে রাজি নন। আর্জেন্টিনা ওয়ার্ল্ডকাপ ফুটবল চ্যাম্পিয়ান হতে না পারায় তার মুখ ভার। বাধ্য হয়ে রবিদা পুরাতন শেফ ব্রজদাকে অনুরোধ করেন। একটু লুচি; সবজি আর রসগোল্লা হলেই চলে। ড়াবড়ি হলেও মন্দ হয়না।
রবিদা আরাফাতকে বলেন, আপনার মশাই নোবেল প্রাইজটা মর্ত্যে ফেরত পাঠানো উচিত।
রবিন বলেন, আমারটা নিয়ে এসেছি কবিগুরু। এই নিন। ও আমার লাগবে না।
রবিদা আরাফাতকে একহাত নিলেন, আপনার ঢিলেঢালা ধীরে চলো নীতির কারণেই এই হামাস তৈরী হয়েছে; প্রবলেম সলভ না করে এওয়ার্ড নেন ক্যামনে কী!
রবিন ম্লান হাসি হেসে বলেন, এই জায়নিস্টদের হাতে এতো টাকা; আর টাকা থাকলে সউদ বাঘের চোখও মেলে। দেখুন কীভাবে কর্পোরেট ব্যবসার জাল বুনেছে, এদের পণ্য বর্জন করবেন; ইউরোপ এমেরিকা থেকে আপনার দেশের প্রডাক্টের অর্ডার বন্ধ হয়ে যাবে। পুরো পৃথিবীটাই এদের অর্থনীতির গোলক ধাধায় ঘুরপাক খায়। এরা পৃথিবীর ভেতরে অন্য পৃথিবী; এদের জুয়ার আসরে মৃতের সংখ্যার বিনোদন চলে।
ইয়াসির আরাফাত দুঃখ করে বলেন, গোপনে আরব দেশগুলোর ইজরায়েলের সঙ্গে ব্যবসা আছে। তাই এরা প্যালেস্টাইনের পাশে নেই। এমনকি মিশরের হৃদয়হীনতা দেখুন; ইজরায়েলি গণহত্যায় আটকে পড়া আহত মানুষকে চিকিতসা দেবার জন্য রাফাহ সীমান্ত খুলেছে চারদিন পরে।
ব্রজদা লুচি-ড়াবড়ি পরিবেশনের সময় বলেন, আচ্ছা বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার থামাতে মানবাধিকার সংস্থা উঠে পড়ে লাগে; জাতিসংঘের মুন বাবু, এমেরিকার বিদেশ মন্ত্রী কেরি সাহেব ফোন করেন বিচার বন্ধ করতে; আর ফিলিস্তিনী প্রসঙ্গে এরা সাক্ষী গোপাল। তারমানে এরা কী গণহত্যাকারী যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে!
রবিদা বিমুগ্ধ হয়ে ব্রজদার দিকে তাকিয়ে বলেন, দাদা আপনি টকশোতে যাননা কেন!
: যাই না কারণ বিজেপি-জামাতের লোক আসে; এরাও তো গণহত্যার দোসর; এদের সঙ্গে এক টেবিলে বসে হ্যাঁ হ্যাঁ করতে ভালো লাগে না।
রবিদা রবিনের দিকে তাকিয়ে বলেন, ভাই সাহেব কয়েকজন ফ্রি মেসেন পাগলের সঙ্গে কী দেখা হওয়া সম্ভব।
: রবিদা সবাই তো দোজখে; প্রতিদিন যাদের অঙ্গুলি হেলনে জনপদ পুড়ে যায়; সৃষ্টি কর্তা দোজখে তাদের ডালডা দিয়ে ভাজেন প্রতিদিন!
ব্রজদা মুখ বাঁকিয়ে বলে, আর এই নব্য হিটলার নেতানিয়াহুর কী করবেন!
রবিন মুচকি হাসেন হিটলারের মতো কোন বাংকারে বিষ-হীরের আংটি চুষে মরবে। ওই টুকু ন্যায়বিচার প্রকৃতি শেষ পর্যন্ত করে।
ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো চা নিয়ে আসেন। ম্লান মুখে বলেন,
: মাঝে মধ্যেই সংশয়ে পড়ে যাই; এতো অনাচার তবু সৃষ্টিকর্তা নীরব কেন?
রবিদা টুক করে যেন একটা চারের মার মারেন, আর্জেন্টিনা ফাইনালে জিতলে নিশ্চয়ই আজ একথা বলতে না!
(চলবে)
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন