বেহেশতে সৃষ্টিকর্তা চেষ্টা করেছেন জগতে সমাজের চাপে এক হতে না পারা প্রেমাত্মাদের সাত পাকে বেঁধে দিতে। দেবদাস-পার্বতী, লায়লা-মজনু, রোমিও-জুলিয়েটের বিয়ে হয়েছে। সুন্দর একটা বাসা, বিরহ ভাতা সবই পাচ্ছেন তারা।
লায়লা মেয়েটা ভালো। তবে সামান্য কালো। এ কারণে মজনুর চোখ পড়েছে সোফিয়া লরেনের দিকে। আর লরেন জানেন কী ভাবে মজনুদের লেজে খেলাতে হয়। লায়লার সবই ভালো;কিন্তু মেয়েটা একেবারেই ঢং ঢাং জানে না। কেমন বোন বোন লাগে মজনুর কাছে। অন্যদিকে লরেন যেন লরেলাই, যাদু হ্যায় নেশা হ্যায়। বেহেশতের কতজনই তার প্রেমে আকুল।
জওহরলাল নেহেরু তার পুঁজিবাদী পার্টির কাজ ফেলে দৌড়ে বেড়ায় লরেনের পিছে। আর ওদিকে লেডি মাউন্টব্যাডেন তো আছেই। লরেন অবশ্য মজনুকেই ভাল লাগে। ঘোড়েল মেয়েরা বোকা প্রেমিক ভালবাসে। নেহেরুর ওপর চালাকিটা আর বেহেশতে কাজে আসছে না। লায়লা একা একা বসে রুমাল সেলাই করে। দোয়া পড়ে ফুঁ দেয়। এই রুমাল পকেটে রাখলে যেন মজনু বেপথু না হয়।
তাই কী হয়। সোফিয়া লরেন বলে কথা। মজনুকে দিয়ে লন মোয়িং করায়। মানে মজনু লরেনের বাগানের মালি হয়ে যায়। আর ওদিকে দুঃখিনী লায়লা অস্নাত-অভুক্ত-অতৃপ্ত যেন বেঘুম রাতের সাথীকে খুঁজছে।
বিদ্যাসাগর যেহেতু বেহেশতেও বিধবা সেবা নিকেতনের অধ্যক্ষ; উনি একটু যা লায়লার খোঁজ খবর নেন। তবে উনি তো শুধু বিদ্যার গল্প করেন। সাগরের কোনগল্প নেই তার কাছে; তাই লায়লা ক্রমশঃ ইন্টেলেকচুয়াল হয়ে ওঠে। উদাসীন মজনুর লায়লারাই হয়তো ইন্টেলেকচুয়াল হয়।
গান্ধীজীর অবশ্য একটা নজর রয়েছে লায়লার দিকে। উনি ডান হাতটি জুলিয়েটের কাঁধে রাখার ব্যাপারটা সেটল করে ফেলেছেন। বাম হাতটি খুব ইচ্ছা ছিল চন্দ্রমুখীর কাঁধে রাখার। চন্দ্রমুখী সটান না করে দিয়েছে। এতো নাটক করে ভারত বিভাগ ঠেকাতে পারে নি যে লোক তার সঙ্গে এতো খেজুরে আলাপের ইচ্ছা নাই চন্দ্রমুখীর।জীবনে দুজন দেবদাস দরকার নাই তার । একটা নিয়েই অনেক ভুগেছে মেয়েটি।
গান্ধীজী লায়লার মাঝে প্রতিশ্রুতি খুঁজেছেন। ভারতের কোন নারী আর গান্ধীজীর ধারে কাছে ভেড়ে না। লায়লা রাজী হয়ে যায়। গান্ধী মজনুর চেয়ে অনেক কেয়ারিং।জুলিয়েট-লায়লা নিয়ে গান্ধীজী সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু করেন।
রোমিও বেহেশতে এসে রীতিমত ক্যাসানোভা হয়ে গেছে। অড্রে হেপবার্ণ থেকে পারভিন ববি সব ফিল্ম স্টারের সঙ্গেই দহরম মহরম তার। হেভেনের মনোচিকিতসক অবশ্য দেবদাস-পার্বতী, লায়লা-মজনু, রোমিও-জুলিয়েটকে ম্যারেজ কাউন্সেলিং করছে। কাজ হবে বলে মনে হয়না।
বেহেশতের শান্তি নিকেতনে কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কাঠের বারান্দায় বসে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোকে বোঝান,
ওকাম্পো ম্যারেজ ইজ দ্য এন্ড অফ লাভ। দেখো ঐ জগত সেরা প্রেম-প্রতীকদেরবেহাল অবস্থা।
ওকাম্পো ভালোই ছিল। সুচিত্রা সেন বেড়াতে এসে এই বিয়ের পোকাটা ঢুকিয়ে দিয়েছেন । উনি বলেছেন, উত্তমকেও আমি সাফ জানিয়ে দিয়েছি ফোর টোয়েন্টি চলবে না। নিবন্ধিত বিয়ে ছাড়া সুচিত্রা সেখানে নাই।
উত্তম বিয়ের কথা শুনে আর একবারো ফোন করেনি। শোনা যায় লেডি ডায়ানার বাসায় তার নিয়মিত যাতায়াত।
বিপদে পড়েছেন বেচারা রবি ঠাকুর, ওকাম্পো খালি বিয়ে বিয়ে শিখেছে ঐ সুচিত্রার কাছে। বিচিত্র এই পাবনার মেয়ে। তাকে যে কেউই পাবে না।
জিয়াউর রহমান হেভেনে খাল কেটে বেড়ান। তাকে ম্যারেজ ব্যুরো থেকে বলা হয়েছিল তার ব্যাপারে জেন অস্টিনের আগ্রহ আছে। কিন্তু জিয়া এই মহিলার খুব পেঁচানো মেয়েলী উপন্যাস পড়ে বিরক্ত। উনি অপেক্ষা করছেন ঢাকার জেন অস্টিনই আসুক। সুন্দরী নারী মানেই বাঁকা চুল। সোজা করা অসম্ভব। আসুক পুতুলই আসুক। আর কিউবান রাম-স্নুকার্সক্লাবে সময় ভালোই কাটে তার।
নেহেরু তাকে বেশ পছন্দই করে। সকালে উঠে খালকাটা শুরু করা কঠিন। কারণ নেহেরুর রাতে একদম ঘুম হয়না। পাখিরা কেউ ফোন ধরে না। লেডী ব্যাডেনও আবার সাফ সাফ বলে দিয়েছেন, এতো বড় আকারের ভারত নিলে, প্রধানমন্ত্রী হলে; আমাকে কী দিলে নেহেরু। এভরি ডে কান্ট বি এবাউট ইউ।
নেহেরু সটকে পড়ে। তবে হাল ছাড়ার পাত্র সে নয়, মেরিলিন মনরোকে ফোন লাগায়।
মনরো বলে চলে এসো। আমার বাসায় পার্টি আছে। অনেকেই আসছে।
নেহেরু বাসায় ফিরে একটু ফ্রেশ হয়েই মনরোর পার্টিতে যায়। জিন্নাহ একটা টেবিলে সরোজিনী নাইডুর সঙ্গে গল্প করছে। চে গুয়েভারার বাহুলগ্না প্রীতিলতা। চে এখন তার নির্দেশে ওঠে আর বসে। কোথায় গেছে সেই লৌহমানব, ঠিকই আছে, যে মেয়ের নাম প্রীতি তার লঙ্গে লতা; চে গুয়েভারা সেইখানে আটকে যেতেই পারেন।
গান্ধীজী জুলিয়েট আর লায়লার কাঁধে হাত দিয়ে খিল খিল করে হাসছেন। নাত্থুরাম গডসে তার পা টিপছে। এটা তার নিয়মিত দন্ড।
বঙ্গবন্ধু এলেন; মুখে সেই পাইপ, সবাই চমকে তাকায়। মেরিলিন মনরো ব্যস্ত হয়েওঠে। জুলিয়েট গিয়ে অটোগ্রাফ নেয়, প্রীতিলতা গিয়ে শুভেচ্ছা জানায়, লায়লা গিয়ে মজনুর বিরুদ্ধে নালিশ করে, অড্রে হেপবার্ণ একটু নাচতে আগ্রহ প্রকাশ করেন, মিসেস মুজিব পিছেই ছিলেন। উনি প্রশ্রয়ের হাসি হেসে বলেন, অসুবিধা কী একটু নাচলে!
গান্ধীজী মিসেস মুজিবের নীল চোখের প্রশংসা করেন। পেছন থেকে আইভী রহমান হেসে বলেন, লেট মি হ্যান্ডেল হিম ভাবী। জিল্লুর রহমান হাসি লুকাতে কলিম শরাফীর সঙ্গে গল্প জুড়ে দেন।
এমন সময় খুব ভাব নিয়ে ঢুকেন ইন্দিরা গান্ধী, যেন তার রূপে ঝলসে যাবে গোটা মেহেফিল। অথচ কেউ পাত্তা দেয়না তাকে। গান্ধীজী মিসেস মুজিব আর আইভী রহমানের সঙ্গে সেই অতীতের গল্পগুলো পুনরাবৃত্তি করেন।
অভ্রে হেপবার্ণ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বসে লম্বা শলাকা সিগেরেট ধরিয়েছে।বঙ্গবন্ধুর চারপাশে জুলিয়েট-লায়লা-মেরিলিন মনরো।
চে একটু কিউবান ডার্টি ডান্স সালসা করছেন ৭২ জন হেভেন ডান্সারের সঙ্গে। নেহেরুও নাচে জমে গেছেন।
শুধু ইন্দিরা কাউকে পাচ্ছেন না গল্প করার। শেষ পর্যন্ত মওলানা ভাসানীর সঙ্গে বসে পরিবেশ দূষণ ও গার্বেজ ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কথা বলেন।
এমন সময় রবীন্দ্রনাথ আসেন ওকাম্পোকে নিয়ে। ওকাম্পোর মুড অফ। ঐ যে বিয়ের ইস্যুতে জটিলতা। মনরো এগিয়ে যান কবিকে অভ্যর্থনা জানাতে।
হঠাত দেবদাস হাজির হয় পাঁড় মাতাল অবস্থায়; পার্বতীর অত্যাচারে সে এখন বিভ্রান্ত। পার্বতী পার্টিতেও আসেনি; কী একটা সিরিয়াল আছে টিভিতে। ওটা তার দেখতেই হবে। চন্দ্রমুখী এগিয়ে আসে। দেবদাসকে একটা সোফায় বসায়। কাগজী লেবুর শরবত এনে দেয়।
রবিদার মনে হয় দেবুটাই হ্যাপি, ওরতো চন্দ্রমুখী আছে।
শুধু কেউ নেই আমার, ওকাম্পোর হয়েছে সুচিত্রার ঢং।
চন্দ্রমুখীই ভালো; অযথা সুঁতোর টান নেই, অথচ ঘুড্ডি আছে।
(চলবে)
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন