ঢাকায় পড়তে আসার পর যে জিনিসটি আমাকে একদম নেশাগ্রস্থ করে ফেলেছিলো। সেটি আর কিছু নয়, ধোঁয়া ওঠা এক প্লেট কাচ্চি। মফস্বল থেকে সদ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের গণরুমে থাকা ছাত্রটি বন্ধুদের সাথে হুট করে একদিন নাজিরাবাজারে গিয়ে আবিস্কার করলো এই বেহেশতি খানাটিকে, এরপর থেকেই এর সাথে প্রেম চলছেই চলছে। তবে সমস্যা হলো মাসের বেশিরভাগ সময়ই পকেট ফাঁকা থাকায় নরম আলুর সাথে মাখো মাখো মাংস আর চালের আস্তরণের এই লীলাখেলা দেখার জন্য অনেকদিন অপেক্ষা করে থাকতে হতো আমায়।
গণরুমে ছাড়পোকার কামড় আর মাঝেমধ্যে গেস্টরুমের আপ্যায়নের ফাঁকে এলিফ্যান্ট রোডে দুইটা টিউশনি করাতে যেতাম। মাসের শুরুতে হাতে হাজারখানেক টাকা পাওয়ার পর বাড়িতে ছোটভাইয়ের জন্য কিছু পাঠিয়ে বাকিটা নিজের হাতখরচের জন্য খানিকটা রেখে কাচ্চির প্রেমে মশগুল হতে চলে যেতাম নাজিরাবাজারের ঘিঞ্জি গলিতে। বেশ কয়েকদিন কাচ্চির সাথে প্রেম চলতো, পরে মাসের বাকিটা সময় আমার অবস্থা হতো বেকার প্রেমিকার মতো যে কিনা চাকরির অভাবের নিজের কাচ্চি প্রেমিকার সান্নিধ্য পাচ্ছে না।
সে যাই হোক কাচ্চির সাথে আমার এমন লুকোচুরি প্রেমের মাঝেই একদিন গেস্টরুমে দাওয়াত এলো। যাওয়ার সাথে সাথেই হলের শ্রদ্ধেয় বড় ভাই পিও অভিভাবক আমার উপর বেশ কয়েকটা শব্দবোমা প্রয়োগ করে বললেন ‘হলে থাকোস মিছিল মিটিংয়ে পাওয়া যায় না ক্যান? সাহস তো খুব বাইড়া গেছে দেখতাছি।’ আমি কিছু বলার আগেই পিও অভিভাবকের এক সহমত চ্যালা আমার গালে কষে একটা ম বর্গীয় শব্দবোমা ছেড়ে বললেন ‘কানে ধর!’ তারপর আরও ঘণ্টাখানেক আদর অ্যাপ্যায়ন কলো সেখানে থাকা মোটামুটি সবাই। আসার সময় বলে দেওয়া হলো কালকের মিছিলে যেন আমাকে দেখা যায়, না হলে হলের সিট ছেড়ে দিতে হবে।
রাতে গেস্টরুমের খাতিরের পর আমার আর মিছিলের ডাক উপেক্ষা করার বিশেষ সাহস হলো না, সকাল হতেই চলে গেলাম কলাভবনের সামনে। গিয়ে দেখি পিও অভিভাবক সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন সাথে শ’ খানেক ছেলে। এরপর ঘণ্টাখানেক পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে মিছিলের সাথে হাঁটাহাটির পর যখন দেখি শরীর আর চলছে না, তখন নিয়ে যাওয়া হলো নাজিরাবাজারে। দেখি কাচ্চির দোকানে ঢুকছে সবাই। দেখেই সব এক সেকেন্ডে সব ক্লান্তি গায়েব। দোকানে বসিয়ে দোকানদারকে পিও অভিভাবক আমাদের সবার জন্য কাচ্চির অর্ডার দিলেন। চোখে পানি এসে গিয়েছিলো। বিশ্বাস করেন, ইচ্ছা করেছিলো দৌড়ে গিয়ে পিও অভিভাবককে চুমু খাই। সামান্য মিছিলের সাথে একটু ঘোরাঘুরির করার পুরস্কার হিসেবে এতবড় প্রাপ্তি আমি এখনও ভুলতে পারি না। এরপর থেকে যতদিন ক্যাম্পাসে থেকেছি মিছিলে আমাকে সবসময় সামনেই দেখা যেতো।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন