ব্যাচেলরদের ঝালের জীবন

৬৬৭ পঠিত ... ১৬:৫১, জানুয়ারি ১৯, ২০২২

bachelor-jhal-

নতুন বুয়া আসা মানে হলো খাবার দাবার বিষয়ক যুদ্ধ বিরতি দিয়ে নতুন প্রতিপক্ষের সাথে আবার যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া। নতুন বুয়া এলো, প্রথম রান্নায় তাকে গরুর মাংস এনে দেয়া হলো। তিনি মনের খুশীতে রাঁধলেন। রান্না বান্নার ব্যাপারে নিজের নানা ধরনের অভিজ্ঞতা নিয়োগ পাবার আগেই বলেছিলেন। তিনি একটা হোটেলে রান্না করেন, সে হোটেলে ব্যবসা দারুণ। আমরাও খুশী।  

কিন্তু মাংসে প্রচণ্ড ঝাল। সবার নাকে চোখে পানি। কেউ কেউ চিনি খাচ্ছে। কেউ আবার সুন্দরবনে মধু খাবার জন্য রওনা দেবে বলে ভাবছে।

পরদিন বললাম ‘শোনেন মরিচ কম দিবেন। আমরা ঝাল কম খাই।‘

বুয়া বললেন ‘মামা গরুর মাংসে একটু মরিচ না দিলে টেস্ট ভালো হয় না।‘

 কথাটা আগেও কোথাও শুনেছি মনে হয়। অতএব সত্য। গরুর মাংসে একটু মরিচ দেয়াই যায়। কিন্তু তিনি মুরগীতেও সমান পরিমাণ মরিচ দিলেন। আমরা আবার কাঁদতে কাঁদতে খেলাম। পরদিন বুয়াকে বললাম ‘মরিচ বেশী দিছেন। কমায়া দিবেন।‘

তিনি বললেন ‘মামা ফার্মের মুরগীতে একটু ঝাল না হইলে হয় না।‘

এই কথাটা আগেও কোথাও শুনেছি। ঘটনা তাহলে সত্যিই। ফার্মের মুরগীতে একটু মরিচ দিতেই হয়। ঝাল ঝাল মাংস...

কিন্তু সে বেলা তিনি মাছে মরিচ দিতে ভুলে গেছেন। উল্টা মরিচের মধ্যে মাছ দিয়ে রান্না করে ফেলেছেন। আমরা আবার কান্নাকাটি করতে করতে আবার খেয়ে নিলাম। পরদিন তাকে ডাকা হলো। এসব হাবিজাবি বুঝিয়ে দেয়া যাবে না আর। তাকে ছাই দিয়ে ধরা হবে। মরিচ দেয়া কোন ভাবেই মেনে নেয়া যাবে না। তাকে বললাম, ‘আর মরিচ দিবেন না। মাছেও প্রচণ্ড ঝাল হইছে।‘ 

বুয়া বললেন ‘মামা এইটা লোনা পানির মাছ না, মিঠা পানিরও মাছ না। এইটা হইলো নর্দমার কই মাছ। একটু ঝাল না হইলে টেস্ট পাইবেন না তো!’  

আয়হায় এই বিষয়টা তো জানতাম না। নর্দমায় মাছ হয় এবং সে মাছে অবশ্যই ঝাল বেশী দিতে হয়। নিজের রন্ধন মূর্খতার জন্য নিজেকে দুষলাম। এত কম জানলে পৃথিবীতে বেঁচে থাকা যাবে কীভাবে? কিন্তু সে বেলা ডিমেও তিনি মরিচ দিলেন তাহসানের ছবিতে লাইক দেবার মত করে। আমরা রীতিমত ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে খেলাম। আমার ধারণা মরিচ দেবার সময় তিনি ডালের চামচ ব্যবহার করেন। যাই হোক তাকে আবার  রিমান্ডে নেয়া হলো।  

: আপনাকে বারবার মানা করছি মরিচ কম দিতে। আপনি ডিমেও মরিচ দিছেন।

আমি ভাবলাম তিনি বলবেন: এই ডিমটা যে মুরগী পাড়ছে, হের খুব গরম লাগতেছিলো। গরম লাগা মুরগীর ডিমে একটু ঝাল না হইলে টেস্ট হইবো না!

কিন্তু না, কাঁচুমাচু করে তিনি বললেন, ‘আসলে মামা আমি মরিচ কম দিয়া ভালো রানতে পারি না। মরিচ কম দিমু, কিন্তু খায়া টেস্ট না পাইলে কিচ্ছু কইতে পারবেন না।‘

৬৬৭ পঠিত ... ১৬:৫১, জানুয়ারি ১৯, ২০২২

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top