বিচার করেন, নাইলে রেপের বৈধতা দেন

২৫৮৮ পঠিত ... ২০:৪৩, অক্টোবর ০৫, ২০২০

'বুঝলেন স্যার, আমার মনে হয় রেপের বৈধতা দেয়া উচিত! কত কষ্ট করে না ছেলে গুলা রেপ করে। মেয়ে গুলা কি আর সহজে হার মানে? নিশ্চয় বুক বরাবর লাথি মারে! চোখে মুখে খামচি মারে!
আহারে, নিশ্চয় খুব কষ্ট হয় ছেলে গুলার। বুঝলেন স্যার, রেপের বৈধতা দেয়া উচিত! নাহয় এই যে রেপের পরে ছেলে গুলার চরিত্র নিয়া টানাটানি চলে, কিছু হোক, না হোক মেয়েগুলার বাবা, মা, আত্মীয় স্বজন কেউ না কেউতো থানায় যায়, এলাকায় বিচার বসায়। ছেলেগুলার কি অপমানই না হয়! আহারে! আহারে! কি লজ্জা! কি লজ্জা!
বুঝলেন স্যার, রেপ বৈধ করে দেয়া উচিত বলে আমার মনে হয়! তাহলে রেপের পরে ছেলেগুলাও নিশ্চিন্ত থাকবে, আর মেয়ের বাবা-মাও আর বিচারের আশায় থাকবে না। চিন্তা করে বলেন তো স্যার, আমার কথায় কি ভুল আছে? আছে কোনো ভুল?

মেয়েটা আমার খুব কষ্ট পাচ্ছিল স্যার! নিশ্বাস নিতে পারছিলো। তার উপরে চেয়ারম্যান ও এলাকার মুরুব্বিদের আদেশে মারা দোররার জায়গায় জায়গায় ঘাঁ হয়ে গিয়েছিলো মেয়ের শরীরে। মেয়ের কষ্ট সহ্য হচ্ছিল না স্যার। গলা দিয়ে রক্ত যাচ্ছিলো মেয়েটার আমার। মেয়ের কষ্ট একদম সহ্য করতে পারছিলাম আমি। মেয়ের কষ্ট দূর করতে বালিশ চাপা দেই মেয়েকে স্যার। আর তাছাড়া চরিত্রহীনা মেয়ে নিয়ে যাবো কই? চেয়ারম্যানের এত ভালো ছেলেটাকে নাকি নষ্ট করলো আমার মেয়ে! লাথি মেরে ছেলেটার বুকের খাঁচা ভেঙে দিয়েছে! এত সুন্দর চেহারায় নখের দাগ বসিয়ে দিয়েছে স্যার! কি চরিত্রহীনা মেয়েই না আমি জন্ম দিয়েছি স্যার!

বুঝলেন স্যার, গত পরশু টিউশনি পড়ে বাসায় আসার পথে চেয়ারম্যানের ছেলেটা তার বন্ধুদের নিয়ে আমার মেয়েটাকে ধরে নিয়ে যায় স্যার। ক্লাস নাইনে পড়তো স্যার আমার নিতু। আমার মেয়েটার নাম নিতু স্যার। আমার মেয়েটাকে তারা ধরে নিয়ে গিয়ে রেপ করে স্যার। রেপের পরে গলা টিপে মারার চেষ্টা করে। কিন্তু তারা বুঝে নাই, মেয়ে আমার মরে নাই স্যার। রাতে মেয়েকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই। হাসপাতাল থেকেই চেয়ারম্যানের লোকজনের কানে খবর যায়, এরপর আমাকে আর আমার মেয়েকে হাসপাতাল থেকে ধরে নিয়ে চেয়ারম্যান রাতেই সালিশ বসায়! আমার মেয়ে নাকি তার সহজ সরল ছেলেটাকে নষ্ট করেছে! আমার মেয়ের লাথিতে তার ছেলের বুকের খাঁচা ভেঙেছে! পাড়ার মুরুব্বিরা সালিশে মেয়েকে একশো দোররা মারার আদেশ দেয়! একশো দোররার বিশটা মারার পরেই মেয়ে আমার জ্ঞান হারায় স্যার! থানায় আসবো ঠিক করেছি, তখন চেয়ারম্যানের লোকজন বলল ঘরে আরেকটা মেয়ে আছে, কী দরকার ঝামেলা করার? আর চেয়ারম্যানের আদেশে তারা মেয়ের চিকিৎসার জন্য কিছু টাকাও আমার হাতে ধরিয়ে দেয় স্যার!
হাসপাতালে অপরিচিত মানুষজন দেখলেই মেয়ে আমার ভয় পাইতো স্যার। তাই বাসায় নিয়ে যাই মেয়েকে! নিশ্বাস নিতে পারে না মেয়ে আমার। গলা দিয়ে রক্ত আসে! সহ্য হচ্ছিল না স্যার! চোখ দিয়ে পানি পড়ে মেয়ের আমার, মনে হয় কিছু বলতে চায়, কিন্তু গলা দিয়ে আব্বা আর ডাকতে পারে না আমার নিতু! বিছানায় শরীর রাখতে পারে না, দোররা মারা জায়গার ব্যথায়! শেষে বালিশ দিয়ে চাপা দেই মেয়েকে স্যার! বুঝলেন স্যার, খুব কষ্ট হচ্ছিলো মেয়ের আমার! খুব কষ্ট পাচ্ছিলো আমার নিতু!

বুঝলেন স্যার, কন্যা হত্যার দায়ে আমাকে ফাঁসিতে ঝুলালে ঝুলান, কিন্তু তার আগে রেপ বৈধ করেন! কোন মেয়ে যেন আর কোন ছেলেকে নষ্ট করতে না পারে! ছেলেগুলা ডাকলেই মেয়েদের তাদের কাছে যেতে রাজি হতে হবে, এমন আইন করেন! আপোসে রাজি হতে হবে! সম্ভ্রম রক্ষার নামে কোন মেয়ে যেন কোন ছেলের বুকে লাথি মারতে না পারে, মুখে খামচি মারতে না পারে! তাহলে অন্তত রেপের পরেও কোন মেয়ের গলা চেপে ধরবে না কেউ! বাঁচার সুযোগ পাবে মেয়েগুলা! বৈধ কাজের জন্য সমাজপতিদের মারা দোররাও আর কোন মেয়ের পিঠে পড়বে না! তাই রেপ বৈধ করতে হবে স্যার! অবশ্যই রেপ বৈধ করতে হবে স্যার!
বুঝলেন স্যার, এই সমাজে কোনো কন্যা আপোসহীন হলেই সে চরিত্রহীনা হয় সমাজপতিদের চোখে! তার চেয়ে বরং আপোস করেই বেঁচে থাকুক প্রতিটা কন্যা তার বাবার বুকে! এইজন্যে রেপকে বৈধ ঘোষণা করতে হবে। কী বলেন স্যার, আমার কথায় কোন ভুল আছে? বলেন স্যার, আছে কোন ভুল?'

নিতুর বাবা জয়নাল মিয়াঁর কথা শুনে থানার ওসি মাসুদ সাহেব কিছুক্ষণ চুপ করে বসে ছিলেন। এই ওসি সাহেবের একটা দুর্নাম আছে, তিনি এক থানায় বেশিদিন থাকতে পারেন না। কারণ কোনো এলাকারই প্রভাবশালীদের সাথে খুব একটা মিলে না তার। তাই তিনি ট্রান্সফারের উপরেই থাকেন, আর আজ একটু তাড়াতাড়ি বাসায় যাওয়ার দরকার ছিল তার। তার মেয়ের আবার আজ জন্মদিন! তার স্ত্রী আজ একটু আগে আগেই বাসায় যেতে বলেছিলেন তাকে। কিন্তু তার মাথায় ঘুরছে অন্য ব্যাপার। মেয়ের জন্মদিন সামনের বছরেও ধুমধাম করে করা যাবে কিন্তু তার আগে মেয়ের জন্য একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হবে। তিনি টেবিলের ড্রয়ার থেকে তার পিস্তলটা বের করে গুলি চেক করে কোমরে রাখতে রাখতে নিতুর বাবার কাঁধে হাত রেখে বললেন, 'আপনি ভুল কিছু বলেননি জয়নাল সাহেব! আইন হবে! খুব কঠিন আইন হবে!'

এবারও ওসি মাসুদ সাহেবের বদলি হচ্ছে! এলাকার এমন এক প্রভাবশালী চেয়ারম্যানের ছেলে ও তার বন্ধুদের কে বা কারা গুলি করে হত্যা করলো, আর থানার ওসি বের করতে পারলো না হত্যাকারী কে? এই ওসি দিয়ে হবে কি? বদলি হয়ে পরিবার নিয়ে চলে আসার আগে ওসি মাসুদ তার মেয়েকে নিয়ে জয়নাল সাহেবের সাথে দেখা করতে যান জেলে! কন্যা হত্যার দায়ে জয়নাল সাহেবের সাত বছরের জেল দেয় আদালত! জয়নাল সাহেবকে দেখে মাসুদ সাহেব বললেন, 'জয়নাল সাহেব এই হচ্ছে আমার মেয়ে! তার জন্যে একটু দোয়া করবেন। বাঁচলে যেন আমার মেয়ে আপোসহীন হয়েই বাঁচে! তার পায়ের তলে শুকরগুলা যেন পিষে মরে! বুঝলেন জয়নাল সাহেব, আমার কন্যা যেন হয় আপোসহীন কন্যা! দোয়া করবেন আমার নিতুর জন্য! ওহ! জয়নাল সাহেব বলতে ভুলে গেছি, আমার মেয়ের নামও নিতু! দোয়া করবেন আমার নিতুর জন্য!'

২৫৮৮ পঠিত ... ২০:৪৩, অক্টোবর ০৫, ২০২০

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top