‘আমি বরং একটু ঘুমিয়ে নিই,’ স্ত্রীকে কথাটা বলে ডিভানে গড়াগড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম আমি।
ঠিক সেই সময়ে কঠিন স্বরে স্ত্রী বলল, ‘তুমি না বলেছিলে বাসনপত্র ধুতে সাহায্য করবে!’
‘আমি এত ক্লান্ত!’ বললাম বটে, কিন্তু রান্নাঘরে গিয়ে বাসনপত্র মোছার তোয়ালে হাতে নিয়ে দাঁড়াতেই হলো। ঘন ঘন গভীর শ্বাস নিচ্ছি এবং হাই উঠছে থেকে থেকেই।
‘এই সামান্য কাজটুকুও তুমি স্বাভাবিকভাবে করতে পারো না?’ জিজ্ঞেস করল স্ত্রী। ‘কী, হয়েছেটা কী তোমার?’
‘ক্লান্তি,’ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম। ‘শীতকালীন ক্লান্তি জানান দিচ্ছে খুব। প্রতিবছরই এটা আমাকে ভোগায়।’
‘শীতকালীন ক্লান্তি?’ সন্দেহসূচক স্বরে জিজ্ঞেস করল স্ত্রী। ‘তার বৈশিষ্ট্য কী, শুনি?’
‘বৈশিষ্ট্য হলো এই যে, সকালবেলা বিছানা ছেড়ে ওঠার দুর্জয় অনিচ্ছে এবং যাবতীয় প্রকার কাজের প্রতি চরম বিতৃষ্ণা। ব্যতিক্রম শুধু...’
‘আমার ধারণা, এই ক্লান্তি তোমাকে কখনো ছেড়ে যায় না,’ স্ত্রী বলল। ‘গ্রীষ্মকালের ছুটি কাটিয়ে আসার পরও তুমি ক্লান্ত ছিলে, শীতকাল যদিও ছিল তখনো অনেক দূরে।’
‘কিন্তু সেটা তো ছিল হেমন্তকাল,’ আমি তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম। ‘সে সময় আমাকে ভোগাচ্ছিল হেমন্তকালীন ক্লান্তি। সেটাও খুব অপ্রীতিকর একটা অনুভূতি।’
‘তো, হেমন্তকালীন ক্লান্তির বৈশিষ্ট্য কী?’ প্রশ্ন করল স্ত্রী।
‘খুব সঠিকভাবে বলতে গেলে বলতে হয়, সকালবেলা বিছানা ছেড়ে ওঠার দুর্জয় অনিচ্ছা এবং যাবতীয় কাজের প্রতি চরম বিতৃষ্ণা। ব্যতিক্রম শুধু...’
‘তোমার মনে হয় ভিটামিন ট্যাবলেট খাওয়া উচিত,’ স্ত্রী পরামর্শ দিল।
‘ভিটামিন ট্যাবলেট!’ আমি অবজ্ঞার হাসি হাসলাম। ‘সব ধরনের ট্যাবলেট গেলার ঘোর বিরোধী আমি। তবে শুনেছি, দিনে এক বা দুই গ্লাস ভালো রেড ওয়াইন চমত্কার কাজে দেয়। জীবনকে তখন অত বিষণ্ন মনে হয় না এবং বেশি চিন্তাও আসে না মাথায়।’
‘চিন্তা?’ অবাক হলো স্ত্রী। ‘তোমাকে আবার কী নিয়ে চিন্তা করতে হয়?’
‘কী নিয়ে আবার! যা নিয়ে সবাই চিন্তা করে। এই যেমন হাইড্রোজেন বোমা অথবা বাধ্যতামূলক ট্যাক্স নিয়ে।’
‘হায় ঈশ্বর!’ বিলাপ করে উঠল স্ত্রী। ‘তুমি অতটা উপার্জন করো না যে তোমাকে ওই ট্যাক্স নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে।’
‘হ্যাঁ, ট্যাক্স আমি দিই না বটে এবং হাইড্রোজেন বোমাও বানাই না,’ ভারি রাগ হলো আমার, ‘তাই বলে ওসব নিয়ে চিন্তা করতে কেউ তো আমাকে বারণ করেনি।’
‘আমি কালই তোমার জন্য ভিটামিন ট্যাবলেট কিনে আনব,’ স্ত্রী বলল। ‘তবে আশার কথা এই যে শীত প্রায় শেষ হয়ে আসছে।’
‘হ্যাঁ, শীত শেষ হয়ে আসছে,’ বললাম আমি সখেদে, ‘কিন্তু এতেও কোনো লাভ কি হবে আমার? শীতের পরে আসবে বসন্ত এবং...’
চুপ করে গেলাম আমি। মনটা ভীষণ খারাপ হলো। আরেকটি ধোয়া প্লেট হাতে নিয়ে তোয়ালে দিয়ে মুছতে মুছতে অবোধ এই রমণীকে বসন্তকালীন ক্লান্তির ব্যাপারটি বিশ্লেষণের অপ্রয়োজনীয়তা অনুভব করলাম অকস্মাত্। কী লাভ হবে তাকে বলে যে বসন্তকালীন ক্লান্তির বৈশিষ্ট্য হলো—সকালবেলা বিছানা ছেড়ে ওঠার দুর্জয় অনিচ্ছে এবং যাবতীয় প্রকার কাজের প্রতি চরম বিতৃষ্ণা। ব্যতিক্রম শুধু...
[ফিনি সিওবোর্গ: ডেনমার্কের লেখক।]
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন