হ্যামিলনের যেমন বাঁশিওয়ালা ছিল, তেমন ঢাকা শহরের ছিল Daga. তবে এই দাগা ইঁদুর মারতে পারতো না, সে মারতো মশা।
দাগা যে রাস্তায় হেঁটে যেত মশারা তার মাথার উপর দল বেঁধে হইচই করতে করতে এগোতো। অলিগলি হেঁটে হেঁটে সে মাথার ওপর মশাদের মিলনমেলা করার সুযোগ করে দিত। তারপর আশপাশের কোনো একটা পুকুরে নেমে ডুব দিতো। মশারাও তার সাথে সাথে ডুব দিত।
তারপর সগৌরবে পানি থেকে ভুস করে দাগার চুলভর্তি মাথাটা ভেসে উঠত, কিন্তু মশাদের আর উঠতে দেখা যেত না। দাগার এই অদ্ভুত ক্ষমতা লোকমুখে সবদিকে ছড়িয়ে পরার পর ঢাকার দুই মেয়র তাকে আমন্ত্রণ জানাল৷
দাগাকে সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলো। তবে দাগার শর্ত ছিল, তার বেতন মাসিক হিসেবে দেওয়া যাবে না। এক এলাকার মশা মেরে শেষ করার সাথে সাথে তাকে চল্লিশ হাজার টাকা ক্যাশ হাতে হাতে গুনে দিতে হবে৷
দাগা প্রায় প্রতিদিনই চল্লিশ হাজার টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরতে লাগলো। তার এত উন্নতি দেখে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল মন্ত্রণালয়ে গিয়ে কুমন্ত্রণা দিয়ে এল। মন্ত্রণালয় থেকে মেয়রদের তলব করে বলা হলো— কী মিয়া, ট্যাকা কি বলদের ডট ডট দিয়া আসে?
মেয়ররা তেলেবেগুনে না জ্বলে তেলে জলে জ্বলে উঠে দাগাকে ডেকে পাঠিয়ে বললেন, শোনো, আজ থেকে তোমার মাসিক বেতন দশ হাজার টাকা। হইলে থাকো, নাইলে রাস্তা মাপো।
দাগা যদিও সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কেউ না তবুও সে রাস্তা মাপল।
মেয়র কার্যালয় থেকে বের হলে পাশেই একটা দীঘিমতন আছে। সুন্দর টলটলে তার জল। দাগাকে রাস্তায় দেখলে মশা যেমন তার পিছু নেয় মানুষও তার পিছু নেয়। দাগা মশাদের ডোবাতে পারে মানুষদের ডোবাতে পারে না। মানুষরাই তাকে আজীবন ডুবিয়ে এসেছে।
দাগাকে মেয়র কার্যালয় থেকে বেরোতে দেখে এক ঝাঁক মশা ও মানুষ তার পিছু নিলো। দাগা দ্রুত পায়ে হেঁটে দীঘির সামনে চলে এলো। তারপর সবার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে সে ঝুপ করে পানিতে ঝাঁপ দিলো। তার দেখাদেখি মশারাও পানিতে ঢুকে যাবার চেষ্টা করল।
মানুষ আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে দাগার মাথা ভেসে ওঠার। চারপাশ এখন একেবারে নীরব হয়ে গেছে। দাগা ভেসে উঠলেই সকলে তাকে করতালি দিয়ে বরণ করে নেবে। কিন্তু কী হলো! দাগা ভেসে উঠছে না কেন? জনতা উশখুশ করতে লাগল। দাগা তো কখনো এত লেট করে না। কী হয়েছে দাগার?
মন্ত্রণালয় এলাকায় শিক্ষিত মানুষ বেশি। এরা কাউকে তাগাদা দিলেও ইংরেজিতে দেয়। উপস্থিত জনতার মধ্যে একজন চিৎকার করে বলে উঠলো, Come on Daga, উঠে এসো। আরও মশা মারতে হবে তোমাকে। এত তাড়াতাড়ি চলে গেলে হবে না।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন