যে কারণে ঢাকার এক মেয়রকে আমার ভালো লাগে

৫৪৫ পঠিত ... ১৮:০৮, জুন ০৬, ২০২৩

যে-কারণে

ঢাকার এক মেয়র সাহেবকে আমার ভালো লাগে।

গত নির্বাচনে আমি আর আমার আম্মা উনাকে ভোট দিয়েছিলাম, আম্মা উনাকে ভোট দিয়েছিল কারণ উনি জনসংযোগের সময় বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আম্মার নাতির গাল টিপে আদর করে দিয়েছিলেন। আম্মা খুব খুশি হয়েছিলেন, এখন সেই কথা আম্মাকে মনে করিয়ে দিলে আম্মা আম বাদ দিয়ে নিজের হাত কামড়ায়।

আর আমি ভোট দিয়েছিলাম দুই কারণে।

এক, উনাকে ভালো লাগতো।

দুই, উনাকে ছাড়া আর কাউকে চিনতাম না।

আজকাল ফেসবুকে উনাকে নিয়ে উল্টাপাল্টা লেখালেখি দেখে আমার খারাপ লাগে, তাই সেগুলো এড়িয়ে চলি। কিন্তু ধানমণ্ডির সাতমসজিদ রোডে চলতে গিয়ে দেখি মোটামুটি সবাই তাকে নিয়ে খারাপ কথা বলে, পঁচা কথা বলে, জ্যামে বসে থেকে রিকশাওয়ালা পঁচা কথা বলে, বাসের ড্রাইভার, প্যাসেঞ্জার, গাড়ির ড্রাইভার সবাই উনাকে নিয়ে পঁচা কথা বলে!

এক উবারের ড্রাইভারকে ভয় দেখিয়ে বললাম, ‘উনি কিন্তু চাইলে আপনাকে বস্তায় ভরে বুড়িগঙ্গার কালো পানিতে চুবাইতে পারে।‘ সেটা শুনে উবারের ড্রাইভার ক খ গ ঘ দিয়ে অনেক অনেক পঁচা কথা বলল। ছিঃ, সেগুলো আমি মোবাইলের কিবোর্ডে আনতে পারব না। আমি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি আর ভাবি, এত পয়সা খরচ করে নির্বাচন করে পঁচা কথা শুনছে লোকটা… এর চাইতে এই টাকায় সারা জীবন পায়ের উপর পা তুলে সুলতান ডাইনের কাচ্চি বিরিয়ানি খেতে পারতো!

ধানমণ্ডির শংকর থেকে জিগাতলা মোড় পর্যন্ত টানা ডিভাইডার দেয়া (শুধু দুইটা জায়গায় ফাঁকা) মনে হয় উনার আইডিয়া না। নিশ্চয়ই উনাকে ভুল বুঝানো হয়েছে, হয়তো বলেছে, ‘স্যার, ধানমণ্ডির রাস্তাটাকে সিংগাপুরের রাস্তার মতো করে দিলাম।‘

উনি নিশ্চয়ই চায় নাই ডিভাইডারের গাছগুলো কেটে ফেলতে। উনার লোকজন ডিভাইডারের দুই পাশের কংক্রিটের স্ল্যাব তুলে গাছগুলোকে আলগা মাটির উপর ফেলে রেখেছিলো অনেকদিন, ভেবেছিলো কাল বৈশাখী ঝড় এসে গাছগুলোকে ফেলে দেবে, তাহলে আর কষ্ট করে কাটতে হতো না, তাতে সাপও মরতো আবার লাঠিও ভাঙতো না।

কিন্তু বিধিবাম! ঝড় আর আসে না! ওদিকে জুন মাসও চলে আসছে, বিল টিলের ব্যাপার আছে, তাই বাধ্য হয়েই গাছ কাটতে হলো।

উনার ফুলের মতো কোমল মন, তাই তিনি ডিভাইডারে অনেক অনেক ফুল গাছ লাগিয়ে দিলেন। সেটা নিয়েও মানুষজন খারাপ কথা বললো। আরে ভাই কিছুদিন সময় দেন, দেখবেন পুরো সাতমসজিদ রোড একটা ফুলের বাগান হয়ে উঠবে।  

মানুষজনের কথা, এত বড় বড় গাছ কেটে কেন ছোট ছোট ফুলগাছ লাগানো হলো?

যাই হোক, মানুষজনের সাথে তর্ক করে লাভ নাই। তাই আমি গত এক সপ্তাহ ধরে রোজ রাতে সাতমসজিদ রোডে হাঁটি আর ডিভাইডারের মাটিতে আমের আঁটি, লিচুর বিচি, জামের বিচি, কাঁঠালের বিচি ফেলে আসি। তাল পাকলে তালের আঁটিও ফেলে আসব ইনশাআল্লাহ।

আমি শিওর, একদিন সাতমসজিদ রোডের ডিভাইডারগুলো ফুল গাছের সাথে সাথে আম, জাম, কাঁঠাল, তাল আর লিচু গাছে ভরে উঠবে। গাছ ভরতি ফল ঝুলবে আর হালকা বাতাসে টুপ টাপ করে মাটিতে পড়বে। আহা, সেই দৃশ্য কল্পনা করেই আমি শিহরিত হই।

সেদিন সবাই এজন্য মেয়র সাহেবের প্রশংসা করবে, অথচ কেউই জানবে না এর পেছনে কার ভালো লাগা জড়িয়ে ছিল।

যাই হোক, আমি বিশ্বাস করি, কারও উপকার করতে হলে নীরবেই করা উচিৎ।

ভালো থাকুক প্রিয় মেয়র।

৫৪৫ পঠিত ... ১৮:০৮, জুন ০৬, ২০২৩

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top