দেশে নাগরিক শীতের প্রধান অনুষঙ্গগুলা কী কী?
সন্ধ্যায় কনসার্ট বা কালচারাল প্রোগ্রাম, মেলা, ব্যাডমিন্টন খেলা, ভাপা-চিতই, কুয়াশা, শীতে গোসল করা বা না করা বিষয়ক চুটকি ইত্যাদি। তাই না?
পপুলার কালচারে আরেকটা বিষয় যুক্ত হইছে:—মি. শামসুল-এর মিম। উনি যেন বঙ্গীয় শীতের প্রতিমূর্তি হয়ে উঠছেন।
ফ্রান্স বললে যেমন আইফেল টাওয়ার, ইউএস বললে স্ট্যাচু অফ লিবার্টি মনে আসে; তেমনি অনলাইন স্ফিয়ারে বাংলাদেশি শীতের হিউমারাস আইকন হয়ে উঠছেন এই ভদ্রলোক।
মনে হয় না শীতকালে উনার চেয়ে বেশি পরিচিত কোনো মিম-চরিত্র আছে।
আমার আগ্রহ অবশ্য ঠিক শামসুল সাহেবে না। মি. শামসুলবাহিত ১টা শব্দে: সোদন-এ।
গত কয়েক বছরে শব্দটা আর্বান ইয়ুথের কোর ভোকাবুলারির অংশ হয়ে উঠছে। এবং সকল সাবকালচারে গৃহীত হইছে। এদের বয়স মোটামুটি ১৪-৩০ এর মধ্যে এবং এদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আছে।
ভাইরাল শব্দ ‘সোদনে’র উৎস খুঁজতে গিয়ে ১টা ভিডিও পাইলাম।
২০১৭'র জানুয়ারিতে টিভি নিউজের ১টা ক্লিপ ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায় শীতার্ত ১ ব্যক্তি বলে:
‘এখেনে আইজ গত ২-১দিন ধরি তীব্র শীত। এমন শীত যে শীতের চোদনে আমরা দাঁড়াতি পারছি না’।
[ ভিডিও লিংক কমেন্টে]
ক্লিপের ‘চোদনে’শব্দটা অনেকের কাছে 'হাইস্যকর' মনে হইছে। ভাইরাল হইতে গিয়া শব্দটা কিন্তু হালকা বদলে গেছে। চোদনে হয়া গেছে ‘সোদনে’।
আমি কয়েকবার ভিডিও দেখছি এবং পজ করে করে শুনছি। শামসুল সাহেব কিন্তু বলছেন ' চোদনে’, নট সোদনে।
এবং তিনি স্ল্যাং হিসেবেও বলেন নাই; শব্দটা তার স্বাভাবিক ভোকাবুলারির অংশ।
আমার আগ্রহ ঠিক এইখানে: সোদনে শব্দে।
‘সোদন’ শব্দের সর্বব্যাপ্ত হয়ে ওঠাটা ইন্ট্রেস্টিং। কৌতূহল জাগানিয়া। অন্তত ভাষা ও কালচারের দিক থেকে।
আপাতভাবে চ আর দন্ত্য স—এর তফাৎ ইনসিগনিকেন্ট মনে হইতে পারে; কিন্তু ওইটা আপাতই।
[প্রথমে বলে নিই, সোদনে শব্দে আমার অ্যালার্জি নাই; 'চোদনেও না। স্ল্যাং হিসেবে দুইটাই এনার্জেটিক ও পাঞ্চি। আমার ২টাই ভাল্লাগে। ]
প্রশ্ন হইতেছে:
মিম ম্যাটেরিয়াল হিসেবে ইয়ুথের মধ্যে 'সোদন' পপুলার হইলো অথচ 'চোদন' শব্দটা কেন না?
মানে মূল শব্দটার পরিবর্তিত রূপরে কেন আর্বান ইয়ুথ প্রেফার করলো?
চোদন শব্দটা ‘হাজার বছরের ঐতিহ্য’না হইলেও আমজনতা, বিশেষত 'ক্ষ্যাত' অ্যান্ড/অর ইয়াং পিপল তো বহুদিন ধরে চোদন শব্দটা স্ল্যাং হিসাবে অনায়াসে ব্যবহার করে; বেশিরভাগ লোকের কাছে ডালভাতের মতো ব্যাপার, এক্সসেপ্ট সাম ভদ্রলোকস্।
ফলে স্বাভাবিক ছিলো ‘চোদনে' শব্দটার মিম ম্যাটেরিয়াল হওয়া। নট 'সোদনে'।
আরও খেয়াল করেন—
'চোদনে'র পপুলার হওয়ার মতো গ্রাউন্ড কিন্তু অলরেডি তৈরি হয়ে আছে।
(অন্তত অনলাইনে) স্ল্যাং নিয়া আগের মতো ট্যাবু নাই। সেফুদা, রোদ্দুর রয় বা মারজুক রাসেলরা সেই রাস্তা তৈরি করে দিছেন। ফলে 'চোদন' শব্দটাও আগের মতো শকিং নাই।
[ ১টা প্রমাণ দিই:
স্কুল-কলেজের স্টুডেন্টদের সড়ক আন্দোলনের কথা মনে আছে?
পুলিশি হেনস্থার বিরুদ্ধে তাদের অন্যতম স্লোগান ছিলো: 'পুলিশ কোন চ্যাটের বাল!'
ভাবা যায়?
জ্বি, দেশে স্ল্যাং আর অতোটা ট্যাবু নাই। ]
তাহলে 'সোদন' শব্দটা কিছুটা আব্রু দেয় কি?
সোদন তেমন কোনো আব্রুও দেয় না। পাব্লিক প্লেসে, বা মুরুব্বিদের সামনে ২ ভার্শনের একটাও বলা যায় না। বলার দরকারও নাই।
‘সোদন’শব্দটার জনপ্রিয়তা আমার কাছে এইসব কারণে কৌতূহলোদ্দীপক।
তাহলে, 'চোদন' সামান্য বদলে 'সোদন' হয়ে ওঠার কারণ কী?
সঠিক উত্তর:—আমি জানি না।
মোটামুটি সঠিক উত্তর:—১টা ব্যাখ্যা প্রস্তাব করতে পারি। এর চেয়ে বেটার ব্যাখ্যা পাইলে, আমারটা উইথড্র করে নেবো।
তার আগে বলে নিই সোদনে শব্দটা নিয়াই বা আমি এত ভাবতে গেছি কেন? ভাবনার মূলে আছে গতকালের ১টা ঘটনা।
গতকাল বিকালে ২জন ব্যক্তি আলাপ করতেছিলো। ২জনই আমার পরিচিত। এক পর্যায়ে প্রথমজন ‘চোদনে’ শব্দ উচ্চারণ করতেই ২য়জন এমন মুখভঙ্গি করলো যে বিরাট লজ্জাজনক ঘটনা ঘটে গেছে।
মজার ব্যাপার হইতেছে, ২য়জনরে আমি নিজে ‘সোদনে’ কথাটা ফেসবুকে মিমসহ শেয়ার করতে দেখছি!
‘সোদনে’ চলে অথচ ‘চোদনে’ সহ্যই করতে পারে না! —অদ্ভুত না? ব্যাপারটা খটকার মত ঠেকলো।
এই খটকা থেকে সোদন নিয়া একটু ভাবলাম।
যাহোক, আমার প্রস্তাবিত ব্যাখ্যাটা বলি।
‘সোদন’ ব্যবহার স্ল্যাং-এর ইফেক্ট দেওয়ার পাশাপাশি একইসাথে ‘অপর’-দের থেকে আলাদাও করে ফেলে বক্তাকে। দিস ইজ দ্য চার্ম অফ ল্যাঙ্গুয়েজ।
‘সোদনের' ক্যারিশমা হইতেছে—শব্দটা ব্যবহার করে ‘চোদন’উচ্চারণ না করেও ‘চোদন’ বলা যায় এবং বইলা ক্ষ্যাতও হইতে হয় না!
শ্রেণিদূরত্ব বজায় রাখতে ভাষার মতো বন্ধু আর হয় না!
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন