অনেক বছর আগে এই লেখাটা লিখেছিলাম, প্রায় ১২ বছর।
মাত্রই বিএনপির মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন মারা গেছেন। তার কিছুদিন আগে উনার একটা ভিডিও ফেসবুকে বেশ হইচই ফেলেছিলো, কোন একটা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে উনার পায়জামা খুলে পড়ে গেছে, বক্তৃতা না থামিয়েই উনি আবার এক হাত দিয়ে সেটা পরার চেষ্টা করছেন।
আমি তখন রস+আলো সম্পাদনা করি। তাকে নিয়ে বানানো আমার এই জোক কয়েকজনকে বলার পর সবারই যথারীতি একই প্রতিক্রিয়া পেয়েছিলাম, প্রথমে হাসি, তারপরই ছি ছি মৃত মানুষকে নিয়ে এইসব জোক করা ঠিক না, স্পেশালি কাফনের কাপড় শব্দটা দ্বিতীয়বার মনে করে শিউরে উঠতো।
এরপর 'ফ্রেন্ডস অনলি' করে ফেসবুকে দিয়ে বোঝার চেষ্টা করেছিলাম ধর্মীয় ইনসিকিউরিটি ছাড়া আর কী কী কারণে মৃত মানুষকে নিয়ে জোক করা ঠিক না বলে মানুষ মনে করে।
******
পুরোনো তিনটি কৌতুকের সাথে যে নতুন কৌতুকটি আমি দিয়েছিলাম
******
কৌতুক ১
তিনজন অপরাধী ধরা পড়েছে। এর মধ্যে একজন জার্মান, একজন ফরাসি, একজন আমেরিকান। প্রথামত গিলোটিনে তাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলো। তবে তাদের ছোট্ট একটা সুবিধা দেওয়া হল। ইচ্ছা করলে তারা গিলোটিকে মাথা ঢুকিয়ে ওপরে তাকিয়ে থাকতে পারবে। নয়তো নিচের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারবে।
প্রথমে এল জার্মানটার পালা। জার্মান বলল, আকাশের দিকে তাকিয়েই তিনি গিলোটিনে মাথা রাখতে চান। যেমন কথা তেমন কাজ। জার্মান গিলোটিনে মাথা ঢোকালেন। গিলোটিনের ব্লেডও ছেড়ে দেওয়া হল। কিন্তু গলা কাটা পড়ার ঠিক আগে, ইঞ্চিখানেক ওপরে এসে ব্লেড থেমে গেল। সবাই মনে করল, অলৌকিকভাবে জার্মানটা বেঁচে গেলেন। এরপর ফরাসির পালা। সেও আকাশের দিকে মুখ করে গিলোটিনে মাথা রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করল। ঠিক আগের মতই ব্লেড ছেড়ে দেওয়া হল। কি অবাক কাণ্ড! এবারও ব্লেড ইঞ্চিখানেক ওপরে এসে থেমে গেল। বিষয়টি অলৌকিক, কিন্তু সে ব্যাপারে মানুষের মনে সন্দেহ দেখা দিল।
এবার আমেরিকানের পালা। একইভাবে তিনিও আকাশমুখো হয়ে গিলোটিনে মাথা রাখতে চাইলেন। প্রতিশ্রুতি মত তাকে সেভাবে মরার অনুমতি দেওয়া হল। জল্লাদ যেই ব্লেড ছাড়ার লিভারে হাত দেবে, আমেরকিানটা চেঁচিয়ে উঠলেন, 'দাঁড়ান, দাঁড়ান, ব্লেডটা কেন আটকাচ্ছে তার কারণটা পেয়ে গেছি।'
কৌতুক ২
১৯৭১ সালের ঘটনা। এক রাজাকারকে মুক্তিযোদ্ধারা ধরে নিয়ে এসেছে শাস্তি দেওয়ার জন্য। তার কারনে কয়েকদিন আগে বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা প্রান হারিয়েছে পাক বাহিনীর হাতে। গ্রামের অনেক মেয়েকে নিয়ে তুলে দিয়ে এসেছে সে ক্যাম্পে, তার লোভ লালসারও শিকার হয়েছে অনেকে। মুক্তিযোদ্ধাদের মিটিং এ সিদ্ধান্ত হলো রাজাকারটাকে গুলি করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। তাকে বেধে রাখা হয়েছে একটা গাছের সঙ্গে। রাইফেল হাতে একজন মুক্তিযোদ্ধা তার দিকে এগিয়ে যেতেই রাজাকার বলে উঠল, 'ভাইজান, এক্টু আস্তে গুলি কৈরেন'।
কৌতুক ৩
বিএনপির সাবেক মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেন মারা গেছেন। গোসল শেষে তাকে কাফনের কাপড় পরানো হচ্ছে। তখন পাশ থেকে একজন বলে উঠলেন, 'কোমরের ফিতাটা একটু টাইট কইরা বাইন্ধো মিয়ারা।'
****
তিনটাই মৃত্যু সংক্রান্ত কৌতুক। উপরের দুটো কৌতুক আমি যখনই কাউকে বলতে গেছি সবাই হেসেছে কিন্তু মাইন্ড করেনি। কিন্তু ৩ নাম্বার কৌতুকটা আমি যখনই বলতে গেছি সবাই প্রথমে ফিক করে হেসেই গম্ভীর হয়ে গেছে। না না মৃত্যু নিয়ে জোক করা ঠিক না।
কিন্তু প্রথম দুটো কৌতুকের পাত্র-পাত্রীও কিন্তু শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকেননি। উনাদেরও পরিণতি হয়েছে মৃত্যু। তাহলে ৩ নাম্বার কৌতুকে (যদি কৌতুক বলতে আপনার আপত্তি না থকে আর কি!) সমস্যাটা কোথায়?
*****
তবে এরশাদ মরে গিয়ে মৃত মানুষকে নিয়ে মজা করা ঠিক না/কেন ঠিক না/মরলেই খারাপ মানুষ ভালো হয়ে যায় না এইসব আলোচনা-পাল্টা আলোচনা হয়েছিল দেখে ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং লেগেছিলো। এরশাদই সম্ভবত বাংলার প্রথম ব্যক্তি যার মৃত্যুর সাথে সাথেই মানুষ প্রকাশ্যে সেই মৃত্যু নিয়ে কৌতুক করছে। ব্যাপারটা বাংলার কৌতুক ইতিহাসে লিখে রাখার মতো একটা ঘটনা ছিলো।
বোনাস হিসেবে এরশাদকে নিয়ে একটা কৌতুক: অতিরিক্ত উত্তেজনায় একসাথে তিনটা ভায়াগ্রা খেয়ে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন এরশাদ। সমস্যা হলো কবর দেওয়ার সময়। তার কফিনের ডালা আর লাগানো যাচ্ছিল না।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন