অবিশ্বাস্য ঘটনা! বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে এমন করে একযোগে সবাই মিলে এমন কারও বিরুদ্ধে আক্রমন হতে দেখা যায় নাই (অন্তত আমি দেখি নাই)।
দৈনিক পত্রিকা, টেলিভিশন, অনলাইন পত্রিকা, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী, সরকার, বিরোধী দল, পুলিশ, হুজুর, ব্যাংকার, সাংবাদিক, লেখক—সবাই এখানে একাট্টা। সকল ধরনের অপরাধীর পক্ষেও অন্তত কিছু লোক থাকে। পরীমনির ইস্যুতে দেশের নারীবাদী সংগঠনগুলোও নীরব। অনেক তরুন-তরুনীদেরও কাজ করতে দেখি অনলাইনে নারীর ইস্যুতে। তারাও নীরব। একটা মেয়েকে স্পষ্টতই সেক্সুয়ালি টার্গেট করা হচ্ছে, এটা নারী অধিকার নিয়ে কাজ করার ওয়ান-ও-ওয়ান, সেখানে যদি তারা আওয়াজ না তুলে তাহলে আওয়াজটা তুলবে কোথায়? এদিকে একদম 'বাপের বেটা'র মতো কাজ করেছে এফডিসির শিল্পী সমিতি নামের একটি সংগঠন। তারা পরীমনির সদস্যপদ স্থগিত করেছে। এখানে লক্ষনীয়, সেই সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর ও সহসভাপতি হলেন ডিপজল।
দফায় দফায় কোনো ইস্যু এতদিন সোশ্যাল মিডিয়া, অফলাইন মিডিয়া, টেলিভিশন, বাসে-ট্রাকে-বাজারে টেন্ড্রে থাকার ঘটনাও বিরল। এমনকি অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের সাথে সিরিজ জয় ও শেষ ম্যাচের অবিশ্বাস্য জয়, সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়দের একজন মেসির দলবদল ঘটনাও পরীমনির ইস্যুকে ট্রেন্ডহীন করতে পারেনি। এই ঘটনার সাথে কিছুটা তুলনা করা যায় প্রাচীন আমলের 'ডায়নি বুড়ি' পুড়িয়ে মারার ক্ষেত্রেও। খেয়াল করে দেখবেন, প্রাচীন আমলেও কেবল ডায়নি বুড়ি পুড়িয়ে মারা হতো, কোনো 'ডায়নি বুড়া'র পুড়ে মরার সংবাদ কিন্তু আমরা পাই না। সেখানেও ছিলো ক্ষমতার খেলা।
পরীমনির বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত যেসব অপরাধ দেখানো হয়েছে সেগুলো বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এতই মামুলি যে এ নিয়ে এক দুইদিনের বেশি আলোচনা হওয়ার কথা না। বিদেশী মদের বোতল—এ তো ঢাকার প্রায় প্রত্যেকটা বাসায় আছে হয় মদ ভরা অবস্থায় নাহয় পানি ভরা অবস্থায়। আর বাকি বিষয়গুলো এতদিন দেখতে দেখতে তো আমাদের চোখ পঁচে যাওয়ার কথা। এরচেয়ে ভয়ংকর অপরাধও আমাদের চোখ সয়ে গেছে।
একটা উদাহরন দেই: গতকালই খবর এসেছে ঋণের জন্য এক্সিম ব্যাংকের দুই কর্মকর্তাকে অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগে দায়ের করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন থেকে সিকদার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রন হক সিকদার ও তার ভাই দিপু হক সিকদারের নাম বাদ দিয়েছে পুলিশ। বেশিদিন আগের ঘটনা না, একই ঘটনা ঘটেছিলো 'জনৈক এমডি'র ক্ষেত্রেও। তাদের অপরাধের সাথে তুলনা করলে পরীমনি নিতান্তই দুগ্ধপোষ্য শিশু। পরীমনি কাউকে খুন করেনি, কাউকে খুনের হুমকি দেয়নি, দুর্নীতি করে দেশের বা কারও কোটি কোটি টাকা মেরে দেয়নি বরং টাকা দিয়ে যারা সব কিনতে পারে বা বিক্রি হতে বাধ্য করে তাদের ভিক্টিম হয়েছে। পরীমনির বিরুদ্ধে সবার এমন একাট্টা হওয়ার সবচেয়ে বড় কারন বোধহয় সে একজন—নারী, বিশেষ করে সিনেমার নারী। যাদের টাকা আছে তারা এতদিন এই 'চরিত্র খারাপ' মেয়েটাকে যেভাবে পারে ভোগ করার চেষ্টা করেছে। যাদের টাকা নাই তারা এখন নিজ নিজ ক্ষমতার জায়গা থেকে লিখে, কথা বলে, শেয়ার দিয়ে ভোগ করার চেষ্টা করছে। শারীরিকভাবে যেহেতু পারে নাই, মানসিকভাবে উপভোগ করে তৃপ্তি নিতে সমস্যা কি! অবিশ্বাস্য!
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন